ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবারের দুপুরে লন্ডনের বুক কাঁপিয়ে লক্ষ মানুষের মিছিল চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ব্রিটেনের শাসকের কপালে। অভিবাসন বিরোধী মিছিল ক্ষেত্র বিশেষে হিংসাত্মক হয়ে উঠলেও ব্রিটেনের রাজনীতির বদলাতে থাকা আবহে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কিছুটা হলেও দেখা গিয়েছে এখানে।
মিছিলে আসা হাজার হাজার মানুষের মুখে শোনা গিয়েছে অভিবাসন বিরোধী স্লোগান। এর আগেও টমি রবিনসন বেশ কয়েকবার মিছিল করেছেন। কিন্তু সেখানে এত ভিড় দেখা যায়নি। শনিবারের মিছিল নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিক অতীতের সবথেকে বড় জমায়েত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সুনক সরকারের পতনের পরে, লেবার প্রধানমন্ত্রী বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এলেও দ্রুত সেই সমর্থনে ভাঁটার টান দেখা গিয়েছে। সরকারের অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য নীতি মানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই রাগকে রসদ করেই নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার তৈরি করেছেন রবিনসন।
রবিনসন প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন ব্রিটেনে বাড়তে থাকা ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা এবং দেশের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে তিনি। পাশাপাশি, তাঁর প্রতি মিডিয়া এবং পুলিশের আচরন প্রসঙ্গেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন টমি। ২০০৯ সালে ‘ইংলিশ ডিফেন্স লিগ’ তৈরি করেন তিনি। ২০১৩ সালে নিজেই সেখান থেকে পদত্যাগ করেন। এই লীগের বিভিন্ন আন্দোলন প্রায়ই সংঘর্ষের রূপ নেয়।
রবিনসনের অপরাধের তালিকাও খুব একটা ছোট নয়। তাঁর বিরুদ্ধে, মারধর, জমানত জালিয়াতি এবং একাধিক আদালত অবমাননার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে, আদালতে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জন্য তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একজন সিরিয়ান শরণার্থীর সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করায় ২০২৪ সালে ১৮ মাসের কারাদণ্ড হয় তাঁর। বিচারকের দাবি ছিল রবিনসন মধ্যে কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। বারবার আইনি বাধা সত্ত্বেও, রবিনসন ব্রিটেনের রাজনীতিতে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
অপরাধের ইতিহাসের পাশাপাশি, অর্থনৈতিক সমস্যাও একটানা তাড়া করে বেড়িয়েছে রবিনসনকে। ২০২১ সালে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হন তিনি। তাঁর সমর্থকদের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা অনুদান হিসেবে পেয়ে, সেই টাকা জুয়ায় হারানোর অভিযোগ স্বীকার করেন টমি।
এসত্ত্বেও ব্রিটেনের রাজনীতিতে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা কম নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন রবিনসন। সাম্প্রতিক অতীতে ব্রিটেনে বেড়েছে দক্ষিণপন্থার প্রভাব। বিভিন্ন নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়েছে অভিবাসী বিরোধী দল রিফর্ম পার্টি। সমর্থন হারাচ্ছে কনজার্ভেটিভ পার্টির মতো সাবেকি দক্ষিণপন্থি দল। সরকারে থাকা লেবার পার্টির অবস্থা যে খুব সুবিধার নয় তা বুঝতে পারছে রাজনৈতিক মহল। তাই বাড়তে থাকা অতি দক্ষিণপন্থার এই ঝোঁককে কাজে লাগিয়ে নিজের জমি পাকা করছেন সুযোগসন্ধানী টমি তা পরিষ্কার শনিবারের মিছিল থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.