Advertisement
Advertisement
Probashe Durga Puja

ইউরোপের সবচেয়ে বড় একচালা দুর্গা! বার্সেলোনার পুজোয় ঢাকের তালে এক হয় সমগ্র বিশ্ব

ভাসানের পর প্রতিমা পুরোপুরি মিশে গেলে সেই জলে নতুন বৃক্ষরোপণ করা হয়।

Probashe Durga Puja: Durga puja preparation in Barcelona Spain
Published by: Arpan Das
  • Posted:September 20, 2025 4:53 pm
  • Updated:September 20, 2025 5:37 pm   

অর্পণ দাস: বার্সেলোনা বলতে সবার আগে কী মনে আসে? ফুটবল। মেসি-ইনিয়েস্তা-জাভিদের টিকিটাকা থেকে আজকের ইয়ামাল-পেদ্রিরা। ন্যু ক্যাম্পে লাল-নীল জার্সিধারীদের ম্যাজিক। আছে এল ক্লাসিকোর দ্বন্দ্ব। সুদূর স্পেনের এক শহরের সঙ্গে বাঙালি একাত্ম হয়ে যায় ফুটবলের জন্য। ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল!’ সেরা শব্দটা থেকে মনে পড়ল, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের কথা। সামনেই যে শারদীয়া। শুধু ফুটবল নয়, দুর্গাপুজোও এক করে দিতে পারে সমগ্র বিশ্বকে। সত্যিকারেই তিনি জগজ্জননী। বার্সেলোনা থেকে সেই গল্পই শোনাচ্ছিলেন অর্ণব সরকার, নিবিড় দাস, সিদ্ধার্থ ঘোষরা।

Advertisement

তিনজনই বার্সেলোনার বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের অগ্রণী সদস্য। যে সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে কাতালান প্রদেশের শহরে দুর্গাপুজো আয়োজন করছে। বার্সেলোনায় যে অন্য দুর্গাপুজো হয় না, তা নয়। তবু বিসিএ-র আয়োজন অত্যন্ত ঘরোয়া, একটা পারিবারিক টান রয়েছে। ২০২২-এ মূলত সঞ্জয় দাশগুপ্ত, শ্রেয়সী নাগ, সিদ্ধার্থ ঘোষ, অনিন্দ্য সাহা- এই চারজনের উদ্যোগে পুজো শুরু। প্রথমদিকে আয়োজন ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। শোলার কাটআউটের দুর্গাপ্রতিমায় পুজো হত। যা তৈরি করা হয়েছিল যামিনী রায়ের আঁকা ছবির মতো করে। ২০২৩-এ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেন সফরে যান। বার্সেলোনাতেও গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে বার্সেলোনার ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিসিএ-র পথচলা শুরু হয়। বলা যায়, সেটাই অনুঘটক। সেই আবেগকে অবলম্বন করেই শক্ত ভিত পায় বিসিএ-র দুর্গাপুজো ()।

probashe durga puja durga puja preparation in Barcelona Spain

তারপর থেকে ক্রমশ বেড়েছে তাদের উৎসবের আড়ম্বর। ২০২৪-এ ১৫ জন সদস্য ঠিক করেন, এবার পুজো আরও বড় করে করা যাক। যেমন ভাবা তেমন কাজ। কুমোরটুলি থেকে জাহাজপথে নিয়ে যাওয়া হল ফাইবারের মূর্তি। অর্ণববাবু বলছিলেন, “আমাদের মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পী মিন্টু পাল। জাহাজে করে সেটা নিয়ে আসা হয়েছিল। আমাদের মূর্তি সাড়ে দশ ফুট উঁচু। ইউরোপের আর কোথাও এত বড় একচালার প্রতিমায় পুজো হয় না।” গতবছর পর্যন্ত পুজো হয়েছে, শ্রেয়সী নাগের নাচের স্কুল ‘নূপুরা’য়। প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী রাষ্ট্রপতির প্রবাসী ভারতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত। এবার তাঁদের পুজো হবে আর্ক দে ট্রুম্পের একটি আর্ট গ্যালারিতে। বড় জায়গা না হলে প্রায় ২০০ বাঙালিকে জায়গা দেওয়া মুশকিল হচ্ছিল।

probashe durga puja durga puja preparation in Barcelona Spain

শুধু বাঙালি তো নয়। অবাঙালি ভারতীয়রাও আছেন। সপ্তাহের ছুটির দিনে সবাই মিলে ক্রিকেট-ফুটবল চলে। মায়ের আগমনে তাঁদের সবার আমন্ত্রণ। উৎসবের দিনগুলোয় হাজির হন বিদেশিরাও। নিবিড়বাবু জানান, “স্প্যানিশরা তো বটেই, অনেক দেশেরই মানুষ আসেন আমাদের পুজোয়। দশমীতে আমাদের সিঁদুর খেলা দেখে তো তাঁরা থ! লাল রঙের প্রতি বোধহয় ওঁদের একটা টান আছে। স্পেনের জার্সি বা পতাকাতেও সেটা দেখবেন। আমাদের সঙ্গে ওঁরাও সিঁদুর খেলতে শুরু করেন। আমরা যখন ঢাকের তালে ধুনুচি নাচছি, তখনও ওঁরাও চেষ্টা করছিলেন আমাদের সঙ্গে তাল মেলানোর। সে এক দেখার মতো দৃশ্য!” এখানেই শেষ নয়।

অর্ণববাবু বলছেন, “ভেনেজুয়েলার এক ব্যক্তি গতবছর আমাদের পুজোয় এসেছিলেন। ঢাকের আওয়াজে তিনি মাতোয়ারা। দশ মিনিটের জন্য এসে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর তিনি ক্ষান্ত হন।” কোথায় দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা, কোথায় ইউরোপের স্পেন আর কোথায় বঙ্গভূমি। মায়ের আরাধনায় সমগ্র বিশ্ব একাকার হয়ে যায়।

probashe durga puja durga puja preparation in Barcelona Spain

এই বিশ্বজনীনতার শিকড় কিন্তু খাঁটি বাঙালিয়ানায়। পুজোর কদিন হইহই করে চলে গান, নাচ, নাটক। এবার হবে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা নাটক ‘ভাড়াটে চাই’। সঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া। ভোগের খিচুড়ি, লাবড়া, মিষ্টি থাকে দুপুরের পাতে। কিংবা কোনও দিন কচুরি, ছোলার ডাল, বা হয়তো ফ্রায়েড রাইস, পনির। বিদেশের মাটিতে সাধারণত সপ্তাহান্তেই দুর্গাপুজো হয়। বার্সেলোনায় পুজো কিন্তু তেমন নয়। তিথিনক্ষত্র মেনেই পুজো হয়। প্রতিমা বিসর্জনও হয়। ফাইবারের বড় মূর্তির সঙ্গে একটি ছোট মূর্তি থাকে। সেই মূর্তিকে বড় পাত্রে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা পুরোপুরি মিশে যাওয়ার পর সেই জলে নতুন গাছ লাগানো হয়। দেবী দুর্গা যে জগদ্ধাত্রী, তাও যেন আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া।

probashe durga puja durga puja preparation in Barcelona Spain

বিসিএ-র কিছু পরিকল্পনা বাস্তব হয়েছে, কিছু এখনও হয়ে ওঠেনি। কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে বার্সেলোনার কোনও ফুটবলার বিশেষ অতিথি হয়ে এলেন তাঁদের পুজোয়? মুম্বইয়ের একটি সংস্থার মাধ্যমে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম রয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাংলা শেখার স্কুল তৈরির কাজ চলছে। বিদেশ বিভুঁইয়ে থেকে যেন আরও বেশি করে বাঙালি সংস্কৃতি-শিক্ষাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা।

probashe durga puja durga puja preparation in Barcelona Spain

পুজো মানে আনন্দ, পুজো মানে মনখারাপ। বাংলায় ফেরা হয় না, এই কষ্ট যেমন আছে। তেমনই সবাই মিলে ভিনদেশে নিজউদ্যোগে পুজো আয়োজন কি কম কথা? পুজোর কটা দিন যেন তাঁদের জীবনের মূল মন্ত্র ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি।’ অনেকটা যেন বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের মতো- mes que un club, অর্থাৎ More than a club। বার্সেলোনা হোক বা পশ্চিমবঙ্গ, মা সবাইকে মিলিয়ে দেন।

probashe durga puja durga puja preparation in Barcelona Spain

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ