Advertisement
Advertisement
Namibia

আফ্রিকা মহাদেশে চৈনিক চাল! মোদির নামিবিয়া সফরে কিস্তিমাতের ছক দিল্লির?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামিবিয়া সফরে দুই দেশের মধ্যে সাক্ষরিত হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি।

How India beat china to importent deal with Namibia
Published by: Amit Kumar Das
  • Posted:July 11, 2025 4:36 pm
  • Updated:July 11, 2025 5:25 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামিবিয়া সফরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। এই তালিকায় রয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। এর মধ্যে ভারত ও নামিবিয়ার মধ্যে সাক্ষরিত হওয়া এই খনিজ চুক্তি নয়াদিল্লির জন্য বিশেষভাবে লাভজনক তো বটেই, পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলিতে যেভাবে চিনের প্রতিপত্তি বাড়ছে সেখানে ভারতের এই পদক্ষেপ চৈনিক চাল ভেস্তে দেওয়ার পরিকল্পনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া খনিজ সম্পদে পূর্ণ একটি রাষ্ট্র। ইউরেনিয়াম, বিরল খনিজ, হিরে তো বটেই সম্প্রতি জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বিপুল ভাণ্ডার পাওয়া গিয়েছে এই দেশে। মধ্যপ্রাচ্যে লাগাতার অশান্তির মাঝে এই দেশের সঙ্গে খনিজ চুক্তি ভারতের জন্য হয়ে উঠতে পারে তুরুপের তাস। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ নামিবিয়া। পাশাপাশি এখানে রয়েছে লিথিয়াম, দস্তা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বিরল খনিজ। আফ্রিকার এই দেশগুলিতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘাঁটি গেড়েছে চিন। এবার সেখানে পা বাড়াল ভারতও। নয়া চুক্তির জেরে নামিবিয়া সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির পাশাপাশি সরাসরি এই সব খনিজ পদার্থ আমদানি করবে ভারত। এছাড়াও ভারতের হিরে শিল্প এই চুক্তির জেরে বড়সড় মাত্রা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নামিবিয়ার সমুদ্র উপকূলে বিরাট হিরের খনির সন্ধান মিলেছে। অনুমান করা হচ্ছে, এই খনিতে রয়েছে ৮০ মিলিয়ন ক্যারেট হিরে। এতদিন এখান থেকে ঘুরপথে হিরে আসত ভারতে। যার জেরে মুনাফা লুটে নিয়ে যেত অন্য দেশগুলি। মোদির সফরে নয়া খনিজ চুক্তিতে এবার ভারত নামিবিয়া সরাসরি বাণিজ্য করিডোর তৈরি হবে। এছাড়া ইউরেনিয়াম, লিথিয়াম, কোবাল্ট ও বিরল খনিজের জন্য এতদিন ভারতকে নির্ভর করে থাকতে হত চিন, কঙ্গো ও দক্ষিণ আফ্রিকার উপর। সেই নির্ভরতা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, লিথিয়াম বিকল্প বিদ্যুতের ব্যাটারি তৈরির জন্য অপরিহার্য খনিজ, অন্যদিকে বিরল খনিজ যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি ক্ষেপণাস্ত্র, স্যাটেলাইট এবং মহাকাশ গবেষণায় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ।

প্রায় ২৭ বছর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নামিবিয়া সফরে গেলেও ভারতের সঙ্গে এই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরনো। সেই সম্পর্ক নয়া মাত্রা পায় চিতা কূটনীতিতে। সাম্প্রতিক বছরে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬৫৪ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে ভারতের রপ্তানি ছিল ৪১৮ মিলিয়ন ডলার, নামিবিয়া থেকে আমদানি ছিল ২৩৫ মিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যের প্রধান পণ্য হল খনিজ তেল, ওষুধজাত পণ্য, যন্ত্রপাতি এবং শস্য। শুধু তাই নয়, এই দেশের ভারত প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে জানা যাচ্ছে বিদেশমন্ত্রক সূত্রে। যার বেশিরভাগই দস্তা এবং হিরা প্রক্রিয়াকরণের মতো খনিজ সম্পদে।

নয়া খনিজ চুক্তির জেরে নামিবিয়া থেকে ভারতের খনিজ সম্পদের আমদানি আরও সহজ হয়ে উঠবে। জ্বালানি তেল তো বটেই, প্রযুক্তি ক্ষেত্র, বিকল্প শক্তি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মোদির নামিবিয়া সফরকে ভারতের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। যে ভবিষ্যৎ আর্থিক শক্তি যোগাবে হিরের মতো মহামূল্যবান খনিজে। জ্বালানি যোগাবে ইউরেনিয়ামে এবং আফ্রিকার মাটি থেকে আসা বিরল খনিজে সবদিক থেকে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে দেশ। অর্থাৎ মোদির নামিবিয়া সফর ও খনিজ চুক্তি আর ৫টা সাধারণ চুক্তি নয়, বরং আফ্রিকার সঙ্গে হাতে হাত রেখে চিনকে টক্কর দিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার এক বিরাট পদক্ষেপ।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement