সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিচারক যখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা শোনাচ্ছিলেন, তখন চোখ বুজে তা শুনছিলেন খালেদা জিয়া। তার আগে আদালত কক্ষে তিনি নামাজও পড়েন। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের এই মামলায় বৃহস্পতিবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার জজ আদালত। পুরনো ঢাকার বক্সিবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠে বিশেষ এজলাসে বিচারক আখতারুজ্জামান রায় পড়ে শোনানোর পর বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে।
গুলশানের বাড়ি থেকে রওনা হয়ে ১টা ৫২ মিনিটে আদালতে পৌঁছান তিনি। আদালত কক্ষে বিচারকের ডায়াসের খুব কাছের একটি চেয়ারে বসেন ঘিয়ে রঙের শাড়ি পরা খালেদা জিয়া। বিচারক আসন গ্রহণের আগে এজলাসে নামাজের ঘরে জোহরের নামাজ পড়েন তিনি। এরপর ফিরে আসেন আগের জায়গায়। বিচারক রায় পড়ে শোনানোর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের তার কাছ থেকে সরে যেতে বলেন। রায় পড়ার শুরুতে বিচারক বলেন, “রায়টি ৬৩২ পৃষ্ঠার, কিন্তু আমি সংক্ষিপ্ত আকারে তা পড়ে শোনাব। বিচারক ট্রাস্ট গঠন, লেনদেনে অনিয়ম, আত্মসাতের ইতিহাস, মামলা দায়ের, অভিযোগপত্র, অভিযোগ গঠন, রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ সাক্ষীর জবানবন্দি, আসামিপক্ষ থেকে জেরা বিষয়গুলো তুলে ধরেন। সে সময় চেয়ারে বসা খালেদা জিয়া চোখ বুজে সব শুনছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সময় জজ আখতারুজ্জামানকে এদিন গম্ভীর দেখাচ্ছিল। যদিও অন্যান্য দিনে তাঁকে হাসিখুশি থাকতে দেখা যায়। আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে এদিন কোনও কথাও বলেননি তিনি। ১১টি বিচার্য বিষয়ের উপর এই মামলায় সিদ্ধান্ত টানার কথা জানিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে রায় পড়ে আসন ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান বিচারক। রায়ের পরপরই মহিলা পুলিশ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন খালেদা জিয়াকে।
সে সময় কোনও আইনজীবী বা সাংবাদিক কথা বলতে পারেননি তাঁর সঙ্গে। রায় শুনে খালেদার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন, বোরহান উদ্দিন, খোরশেদ আলম মিয়াকে চোখ মুছতে দেখা যায়। সেখানে উপস্থিত গায়িকা, বিএনপি নেত্রী বেবি নাজনিনও সেই সময় কাঁদতে থাকেন। উচ্চস্বরে কান্না শুরু হয় রায় শোনার পরপরই। এর মধ্যেই তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন। পুরোটা সময় তিনি কাঁদতে থাকেন। খানিকক্ষণ পর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে কেঁদে ফেলেছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভিও। অন্যদিকে, তারেক রহমান গতকাল রাতেই লন্ডন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত মুক্তির দাবি করেছেন। খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন পুত্র তারেক রহমান। যদিও তিনি একই মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে তিনি লন্ডনে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় দু’ডজন মামলা চলছে।
এদিকে, তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশের প্রতিবাদে শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ ডেকেছে বিএনপি। একইসঙ্গে শনিবারও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে রবিবারই আপিল করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ কথা জানান। রায় ঘোষণার আগে ও পরে রাজধানী থেকে শতাধিক ও গোটা দেশ থেকে ৩১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাসকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হয়েছেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ।
জন্মের পর সম্ভবত এটাই সবচেয়ে কঠিন অগ্নিপরীক্ষা তিনবারের শাসকের আসনে বসা বিএনপির। বর্তমানে রাজনৈতিক দল হিসাবে ভেতর ও বাইরে থেকে ধেয়ে আসা প্রবল চাপের মধ্যেই বিএনপির শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল হয়েছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠাই এখন বিএনপি নেতৃত্বর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সামনেই জাতীয় নির্বাচন। দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটির নেতা ও কর্মীরাও যথেষ্টই ম্রিয়মাণ। একটি পুরনো ও শক্তিশালী দলের পক্ষে একটানা এমন দশা হতাশাজনক, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত তারেক রহমান-সহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে ২ কোটি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দিয়েছেন আদালত।
A bike lies in flames after unruly activists clashed with in ahead of verdict in Case
— Awami League (@albd1971)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.