Advertisement
Advertisement
Cycling

লেহ থেকে অরুণাচল প্রদেশ, দু’চাকায় চড়াই-উতরাইয়ে নয়া রেকর্ড বাংলার যুবকের

মাত্র ২০ দিনে ৩৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন তমলুকের ওই সাইক্লিস্ট।

Man from Tomluk makes record to cross 3600 km in only twenty days by cycle
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 17, 2025 4:37 pm
  • Updated:October 17, 2025 8:59 pm   

অভিরূপ দাস: কুড়ি হাজার মিটার চড়াই উঠেছেন। সহজ হিসেবমতো যা ৫৭০০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান! স্রেফ প্যাডেলে চাপ দিয়েই এই উচ্চতা অতিক্রম করেছেন তমলুকের অভিষেক তুঙ্গ। লাদাখের রাজধানী লেহ থেকে অরুণাচল প্রদেশের শেষ বিন্দু কিবিথো। কুড়ি দিনে ৩৬০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেতে চলেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অকুতোভয় অভিষেক।

Advertisement

সাইকেল নিয়ে কেউ দেশভ্রমণে বেরন। কেউ সাইক্লিং স্পোর্টসে অংশ নেন। সে সাইক্লিংয়ের সঙ্গে অভিষেকের ‘ফুল প্যাডেলে’র অনেক ফারাক। রাতে তাঁর থাকার জন্য ছিল না সাজানো হোটেল। রাস্তার পাশে কেউ পানীয় জল এগিয়ে দেয়নি। শুকনো কেক খেয়েই কেটেছে একাধিক রাত। আঁজলা করে জল খেতে হয়েছে রাস্তার ধারের জলাশয় থেকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাইকেল নিয়ে ট্রান্স হিমালয়ে এতটা দীর্ঘ পথ পাড়ির ইতিহাস বড় একটা নেই। দীর্ঘ এই পথ চলায় কোথাও তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। কোথাও বা ৪২ ডিগ্রির তাতাপোড়া গরম! ভয়ংকর চড়াই-উতরাই, পাথুরে রাস্তা, পাহাড়ি পথ পেরিয়ে এসেছে অভিষেকের সাইকেলের চাকা। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কমিটি তা জরিপ করেছে নিবিড়ভাবে। নাম উঠছে তাহলে? বিশ্বজয়ের হাসি এখন তমলুকের অভিষেক তুঙ্গর মুখে।

তমলুকের ‘তুর্কি’ অভিষেক তুঙ্গ। নিজস্ব ছবি।

দীর্ঘ এ যাত্রায় অভিষেক পেরিয়ে এসেছেন চার-চারটে উচ্চ অক্ষাংশের গিরিপথ। অক্সিজেন সেখানে নামমাত্র। অভিষেকের কথায়, “অধিকাংশ দিন রাতেও সাইকেল চালাতে হয়েছে। চোখ খুলে রাখা যাচ্ছে না, এমন অবস্থায় ধাবায় একটু জিরিয়ে নিয়েছি। তবে দিনে সাড়ে পাঁচ-ছ’ঘণ্টার বেশি বিশ্রাম নেওয়া হয়নি কখনও।” সঙ্গে থাকা অক্সিজেন ক্যানে মুখ লাগিয়ে দম নেওয়া। ফের ছুটেছে সাইকেলের চাকা। একাধিকবার পাথুরে রাস্তায় লিক হয়ে গিয়েছে সাইকেল। নিজ হাতে মেরামত করে ফের ছুটেছেন অভিষেক। একবার ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালেও। তবু দমে যাননি বাংলার দামাল ছেলে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে মেঘনাদ সাহা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে অধ্যাপনা করেন অভিষেক তুঙ্গ। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন অ্যাডভেঞ্চারের কথা। শেষমেশ গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৪ টে ২৭ মিনিটে তিনি সাইকেল নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন ১৩ অক্টোবর রাত ৮টা ২৩ মিনিটে। কেউ সাইকেল নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরন। কেউ সাইক্লিং করেন ট্রাকে। অভিষেকের কথায়, ”সাধারণ এনডুরেন্স স্পোর্টসে যিনি সাইকেল নিয়ে বেরন, তাঁর পাশে একটা সাপোর্টিং কার থাকে। কোনও অসুবিধায় তাঁরা সাহায্য করেন। কিন্তু এই ৩৬০০ কিলোমিটার দুর্গম রাস্তায় আমি সম্পূর্ণ একা ছিলাম।”

সাইকেল নিয়ে দীর্ঘ দুর্গম গিরিপথ পেরিয়েছেন অভিষেক। নিজস্ব ছবি।

ক্রিকেট-ফুটবল বাদ দিয়ে অন্যান্য ক্রীড়াক্ষেত্রেও ‘এগিয়ে বাংলা’। কলকাতা বিমান বন্দরে অভিষেক পা রাখতেই ঢাকঢোল নিয়ে পৌঁছে যান তাঁর বন্ধুবান্ধবরা। অভিষেকের সুহৃদ বিপ্লব দাসের কথায়, “বাংলায় শুধু ক্রিকেট আর ফুটবল নিয়ে উচ্ছ্বাস হয় না। সাইকেল চালিয়ে বিশ্বরেকর্ড করে বাংলার নাম বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করেছে অভিষেক।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ