স্টাফ রিপোর্টার: তুষারভূমিতে গৌরবের তেরঙ্গা! কলকাতার এক যুবকের হাত ধরে।
উত্তর মেরুর তুষার আচ্ছাদিত প্রান্তর। চারপাশে শুধু পুরু বরফের আস্তরণ। তাপমাত্রা মাইনাস আট ডিগ্রি। ঝোড়ো হাওয়া কাঁপিয়ে দিচ্ছে শরীর।
উত্তর মেরুর সেই ৯০ ডিগ্রি নর্থে ৪২ কিমির এক ম্যারাথনে তিনি অংশ নিলেন। আর বিজয়ী হয়ে বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল করলেন ভারতের মুখ। প্রথম ভারতীয় হিসাবে এই দৌড় সম্পূর্ণ করলেন তিনি। পৃথিবীর শীর্ষে দাঁড়িয়ে লিখে ফেললেন এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস। তিনি মধ্য কলকাতার বড়বাজারের রামগোপাল কোঠারি। পেশায় একজন বিমা কর্মী। উত্তর মেরুর ম্যারাথন সহজ নয়। ভাসমান বরফের উপর দৌড়নো মানে প্রতিটি পদক্ষেপে মৃত্যুভয়। তিন মিটার নিচে শুধু সমুদ্রের জল। দৌড় শুরুর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই জুতোর ভেতর জমে যেতে থাকে বরফজল। পায়ে টান ধরে বার বার। রামগোপালের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছিল। কথায় কথায় জানালেন, “২৮ কিলোমিটার পেরোনোর পর শরীর আর মানতে চাইছিল না।”
কিন্তু তিনি হার মানেননি। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চলে আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। শরীর অবসন্ন। আর চোখে বিশ্বজয়ের জ্যোতি। অবশেষে ফিনিশিং লাইনের ফিতে ছুঁলেন রামগোপাল। দিনটা চলতি বছরের ১৩ জুলাই। কোঠারির কথায়, “প্রথমার্ধ ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে শেষ করেছিলাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পেশিতে টান আর খিঁচুনি। একটা সময় নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই ছিল আমার কাছে একমাত্র চ্যালেঞ্জ।”
তবে শুধু উত্তর মেরু জয়েই তাঁর দুর্দমনীয় অভিযান স্পৃহা শেষ হয়ে যায়নি। পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশে ঘুরেছেন। অ্যান্টার্কটিকার ১৫০ কিলোমিটার বেগের ঝড়ে টিকে থাকা, গ্রিনল্যান্ডের ইগলুতে থাকা, স্বোয়ালবার্ডে মেরু রাত দেখা, এমনকী, তিমি আর মেরুভালুকের সামনে দাঁড়ানো, তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি একের পর এক বিস্ময়কর খণ্ডচিত্রে পূর্ণ। তাঁর কাছে এগুলো জীবনের পাঠ। তাঁর কথায়, “বাঁচা মানে শুধু টিকে থাকা নয়। বাঁচা মানে হাল না ছাড়া।” রামগোপাল ইতিমধ্যেই ঘুরেছেন ৭১টি দেশ। লক্ষ্য ২০২৭-এর মধ্যে ১০০। স্বপ্ন আছে আরও সাত মহাদেশে সাতটা ম্যারাথন। প্রতিটি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.