Advertisement
Advertisement
Purulia

ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো! বাংলার হয়ে ফুটবল পায়ে মাঠে নামবে পুরুলিয়ার সীমা

অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় ফুটবলে সুযোগ পেয়েছে সে।

Purulia school student got chance to play football in Bengal team

পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের মাহালিতোড়ার বাসিন্দা সীমা মাহাতো। প্রতিদিন চিত্র

Published by: Paramita Paul
  • Posted:March 26, 2025 3:52 pm
  • Updated:March 26, 2025 5:10 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাটি-ইঁট দিয়ে বাড়ি। সেই বাড়িতে মাত্র দু’টি ঘর। আর সেই ভাঙা ঘরেই চাঁদের আলো! পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের মাহালিতোড়ার বাসিন্দা তথা বেলগুমা বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সীমা মাহাতো বাংলা দলে সুযোগ পেল। অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে মাঠে নামবেন পুরুলিয়ার অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে সীমা। বিদ্যালয়স্তরের ফুটবলে জাতীয় স্তরের এই প্রতিযোগিতা আগামী ১৫ থেকে ২০ এপ্রিল মণিপুরে অনুষ্ঠিত হবে। ১২ এপ্রিল সীমা রওনা দেবে কলকাতায়। ১৩ তারিখ তার বিমান।

Advertisement

ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার। সেই কন্যা এবার বাংলার হয়ে জাতীয় স্তরের ফুটবল প্রতিযোগিতায় মাঠে নামবে। ১৭ বছরের এই পড়ুয়া ফুটবলার এর আগে দু’বার বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছিল। ২০২২-এ জন্মের শংসাপত্রে বাবার নাম ভুল থাকায় সুযোগ পেয়েও তার মাঠে নামা হয়নি। ২০২৩-এ অবশ্য সেই স্বপ্নপূরণ হয় আইএফএর জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায়। কিন্তু সে গোল করতে পারেনি।

 

 

এবার স্কুল স্তরে বাংলার হয়ে প্রথমবার নামবে সীমা। সেই ২০১৭ সালে যখন সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তখন তার এই ফুটবলে হাতেখড়ি। তার জেঠতুতো দাদা বিষ্ণুপদ মাহাতোর হাত ধরেই কিশোরী সীমার ফুটবলে পা। সেই সময় থেকেই ফুটবলে দাপিয়ে বেড়ানো শুরু তার। প্রাথমিক এবং হাইস্কুল স্তরে সাফল্যের পর বাংলার হয়ে সুযোগ আসে তার। সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতাকে আজও বজায় রেখেছে সীমা। তার কথায়, “আমি পাকাপাকিভাবে বাংলার হয়ে ফুটবল খেলতে চাই। আর এবার স্কুল স্তরের এই ফুটবল প্রতিযোগিতায় গোল করায় আমার প্রধান লক্ষ্য। ” তাই সকাল-বিকাল দাদা তথা কোচ বিষ্ণুপদ মাহাতোর তত্ত্বাবধানে তার প্রশিক্ষণ চলছে।

 

সেই ছেলেবেলা থেকেই সকাল-বিকালে তার অনুশীলন চলে এই কোচের কাছে। শীত-গ্রীষ্ম কি বর্ষা ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সকাল ন’টা। তারপর বিকাল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বল নিয়ে মাঠে দাপিয়ে বেড়ায় সে। ভাই দশম শ্রেণির ছাত্র। বাবা সামান্য চাষাবাদ করে কোনক্রমে দিন গুজরান করেন। ঘরে একটা টিভি পর্যন্ত নেই। বাবা আশুতোষ মাহাতোর কথায়, “সামান্য জমি রয়েছে। সেখানেই চাষ করি। তবে বছরভর চাষ হয় না জলের অভাবে। আমন ধান আর একটু সবজি হয়।তা দিয়েই কোনোভাবে সংসার চলে। সীমা ফুটবলে যাতে এগিয়ে যায় তার সব রকম চেষ্টা করব।” মা কমলা মাহাতোর কথায়,”জাতীয় স্তরে বাংলার হয়ে মাঠে সুযোগ পাওয়ায় ভীষণ ভালো লাগছে। গর্ব অনুভব করছি।” ইতিমধ্যেই সীমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক মহুয়া বসাক ও জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শান্তিগোপাল মাহাতো। তারা দুজনেই বলেন, “সীমা পুরুলিয়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।” মাস ছয়েক আগে কোচবিহারে বিভিন্ন জেলা থেকে ফুটবলের দল যাওয়ার পর সেখানে খেলার মধ্য দিয়ে বাংলার দল নির্বাচন হয়। সেই সদস্যদের নাম সম্প্রতি জানানো হয়। তারপরেই মণিপুরের মাঠে
গোল দেওয়ার লক্ষ্যে হাড়ভাঙা পরিশ্রম চলছে সীমার।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement