Advertisement
Advertisement
Tutu Bose

প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধ্বে অমলিন ময়দানি সৌজন্য, মোহনবাগানে টুটু জমানা শেষে ‘মনখারাপ’ ইস্টবেঙ্গলেরও

কীভাবে ময়দানের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব টুটু বোস? মতামত জানালেন দেবব্রত সরকার ও মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য।

Debabrata Sarkar and Manoranjan Bhattacharya reacts on Tutu Bose's contribution
Published by: Arpan Das
  • Posted:June 16, 2025 6:29 pm
  • Updated:June 16, 2025 6:59 pm  

অর্পণ দাস: মোহনবাগানে শেষ হল টুটু জমানা। অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে। সোমবার সচিব সৃঞ্জয় বোসের নেতৃত্বাধীন মোহনবাগানের কর্মসমিতির বৈঠকে ঘোষিত হয় নতুন সভাপতি ও সহ-সভাপতির নাম। সভাপতি পদে এলেন দেবাশিস দত্ত। যে পদে আগে ছিলেন স্বপনসাধন বোস। গোটা ময়দান যাকে একবাক্যে চেনে টুটু বোস নামে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে মোহনবাগানের পদে ছিলেন তিনি। কখনও সেটা সভাপতি পদে, কখনও-বা সচিব পদে। এবার সেই তালিকায় নেই টুটু বোসের নাম। এক নতুন যুগের সূচনায় ‘মনখারাপ’ পড়শি ক্লাব ইস্টবেঙ্গলেরও। সেই বিষয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল‘কে মতামত জানালেন লাল-হলুদের কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার ও প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য।

Advertisement

দুই ক্লাবের মধ্যে শতবর্ষের বেশি সময় ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেটা তো মাঠে। মাঠের বাইরে দুই ক্লাব বাংলা তথা ভারতের ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারি। সেখানে মোহনবাগানের দায়িত্বে ছিলেন টুটু বোস। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলে এখনও দায়িত্ব পালন করছেন দেবব্রত সরকার। টুটু জমানা শেষ হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “টুটু বাবু একমাত্র মানুষ যিনি ক্লাবটাকে ধরে রেখেছিলেন, এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তো বলব, কর্ণধার বা সচিব হিসেবে টুটুবাবুর স্থান ধীরেন দে’র পরেই। আমার মতে, ওঁর জন্য দরকার হলে একটা সাম্মানিক পদ তৈরি হওয়া উচিত। যেখানে উনি আজীবন থাকতে পারবেন। সেটাই হবে ওঁর জন্য সবচেয়ে সম্মানের।”

টুটু বোসের আমলে একাধিক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে মোহনবাগান। এসেছে অনেক সাফল্যও। তার ‘ইউএসপি’ কী? বা কোথায় আলাদা তিনি? দেবব্রতবাবু বলছেন, “উনি সবার সঙ্গে মিশতে পারেন। সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতেন, তাঁদের কাছে রাখতে পারতেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের থেকে কাজ আদায় করে নেওয়াটাও কিন্তু একটা আর্ট। আর সেটা করতেন মোহনবাগানের জন্যই। এরকম মানুষই তো দরকার। আমাদের দেশে তো ক্রীড়াবিভাগের বাজেটকে কিছুটা অবহেলাই করা হয়। তবু এখন আমাদের রাজ্যের পরিস্থিতি অনেক ভালো। খেলাধুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও রাজনৈতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সেখান থেকে কাজ আদায় করা পারদর্শিতা।”

ঠিক একই কথা বললেন প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। কেরিয়ারের বেশিরভাগ সময়টা কাটিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলে। এক অর্থে লাল-হলুদের ‘ঘরের ছেলে’। কিন্তু তিনিও দু’বছর সবুজ-মেরুন জার্সি পরেছিলেন। আর সেটা ১৯৯১ সাল থেকে। ঘটনাচক্রে সেই বছরই প্রথম মোহনবাগান সচিবের দায়িত্ব নেন টুটু বোস। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বললেন, “টুটুদা কোনও পদে থাকুক না থাকুক, প্লেয়াররা তাঁকে খুব ভালোবাসত, সম্মান করত। আসলে উনি অফিসিয়াল পদে থাকলেও ছিলেন দাদার মতো। সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। টুটুদা থাকা মানে সব প্লেয়াররা একত্রিত। অঞ্জন দাও অসাধারণ, কিন্তু টুটুদা অনেক বেশি খোলামেলা। ওঁর আমলেই কিন্তু মোহনবাগানের সাফল্য অন্যমাত্রায় পৌঁছেছে।”

টুটুবাবুর নেতৃত্বে কীভাবে মোহনবাগানে নতুন যুগের সূত্রপাত, সেই ব্যাপারেও আলোকপাত করেন মনোরঞ্জনবাবু। তিনি বলেন, “মোহনবাগান ক্লাবে আমি খুব অল্পদিনে খেলেছি। সেই সময় যাঁদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন টুটু বোস। মোহনবাগান তো বটেই, তখন ময়দানের কোনও ক্লাবেই প্লেয়াররা খুব বেশি টাকা পেতেন না। টুটু বোস এসে সেই ব্যাপারটাই বদলে দিলেন। টাকাপয়সা নিয়ে যাতে ফুটবলাররা কোনও অসন্তোষ না প্রকাশ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করলেন। ক্ষমতা ছিল বটেই, তার থেকেও বেশি ছিল মানসিকতা, মোহনবাগানের প্রতি ভালোবাসা। এককথায় টুটুদা ‘প্লেয়ারস ম্যান’। প্লেয়ারদের থেকে যদি সেরাটা বের করে নিয়ে আসতে হয়, তাহলে তাঁদের খুশি রাখতে হবে। হাজারও ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন প্লেয়ারদের দাবিদাওয়া মেটানোর। সেটা তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতেন।”

এবার তো টুটু জমানা শেষ। প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবেরও কি একটু ‘মনখারাপ’? সরাসরি সেটা বলতে চাইলেন না দেবব্রত সরকার। তিনি তো চান, মোহনবাগানে আজীবন থাকুন টুটু বোস। প্রয়োজনে সাম্মানিক পদ তৈরি করা হোক। ইস্টবেঙ্গল যেভাবে প্রাক্তন সভাপতি প্রণব দাশগুপ্তর জন্য প্রধান উপদেষ্টা তৈরি করেছে। ময়দানের নীতু দা বললেন, “দুই ক্লাবের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বাড়ুক, গভীর হোক, আমি সেটাই চাইব। নব্বই মিনিট যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, তেমনই প্লেয়ার বাছাই থেকে প্লেয়ার কেনা, সবেতেই লড়াই আছে। এগুলো তো থাকবেই। কিন্তু টুটুবাবুর যে অবদান সেটাকে অস্বীকার করি কী করে? খেলার জন্য তিনি যেভাবে সময় ও শ্রম ব্যয় করে পরিকল্পনা করেছেন, সেটা আমার কাছে সবার আগে। আমার মোহনবাগান কমিটির কাছে অনুরোধ থাকবে যদি টুটুবাবুকে সাম্মানিক পদে রাখা যায়।”

অন্যদিকে ‘মনখারাপ’ নিয়েও একে টুটু বোসের ‘অবসর’ বলতে রাজি নন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, “টুটু বোসের কোনও অবসর হয় না। ওঁর মনটাই তো মোহনবাগানময়। ওঁর আত্মা মোহনবাগানের সঙ্গে। এই পরিচয়টাই যথেষ্ট। এটাকে পদ দিয়ে বিচার করা যায় না। আমি তো বলব, টুটুদার মতো নিঃস্বার্থ মানুষ হয় না। একটা সময়ের পর সব কিছু থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। এটা বুঝতে পারাও মানুষের বড় গুণ। এটাই অনেকে পারে না। পদ আগলে বসে থাকতে চায়। কিন্তু টুটুদা পরের প্রজন্মের হাতে ব্যাটন তুলে দিয়েছেন। সেখানেই উনি আলাদা।” সত্যিই তো টুটু বোসের অবসর হয় না। তিনি সবুজ-মেরুন সমর্থকদের হৃদয়ে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধ্বে উঠে ময়দানি সৌজন্যের প্রতীক। 

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement