শিলাজিৎ সরকার: শুক্রবারের সন্ধা। ডায়মন্ডহারবার এফসি-র অনুশীলন পর্ব শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ। কোচ কিন্তু ভিকুনা চলে গিয়েছেন। অধিকাংশ ফুটবলারকে নিয়ে টিম বাসও যুবভারতী ছেড়েছে। বাকিরও ব্যক্তিগত গাড়িতে ঘরের পথ ধরেছেন। এক এক করে নিভছে আলো। ততক্ষণে ধীর পায়ে মাঠ ছেড়ে বের হচ্ছিলেন তিনি। মিকেল কোর্তাজার ইদিয়াকেজ। ডায়মন্ডহারবারের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে শনিবারের ডুরান্ড কাপ জাইনালে বাংলার প্রতিনিধিদের গড় রক্ষার গুরুদায়িত্ব রয়েছে তাঁর উপরে। সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দূরন্ত ব্যাকভলিতে গোল করেছেন। তবে তা ডুরান্ডের বিচারে সেরা গোলের তালিকায় জায়গা না পাওয়ায় কিছুটা বিস্মিত মিকেল। চেনা সাংবাদিককে দেখে মজার সুরে প্রশ্নও করলেন, “সেরা গোলের ভিডিওয় দেখলাম সাত-আটটা গোল আছে। আমার গোলটা নেই। ওরা কি আমার গোলটা দেখেনি?” এই একবারই। তারপর মিকেল চলে এলেন ফাইনালের মুডে। নর্থ-ইস্টের গোলমেশিন আলেদিন আজারাইকে ঠেকানোর জন্য কোনও বিশেষ পরিকল্পনা আছে। প্রশ্ন করতেই জবাব মিলল, “আলেদিনের প্রচুর প্রশংসা শুনছি। ভালো প্লেয়ার। তবে আমি ওর থেকেও ভালো। ওদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ তবে কি কাল ট্রফি বাংলাতেই থাকবে? “আমাদের ফাইনালে ভালো খেলতে হবে। এটা বড় সুযোগ। দলের সবাই সেরাটা দেবে। আর কিছু বলব না। কাল বাকি কথা ওই মাঠে বলব,” পাশের যুবভারতীর মূল মাঠের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে গেলেন মিকেল।
শুধু মিকেল নন, ডায়মন্ড হারবারের গোটা স্কোয়াড উত্তেজিত। বিশেষত ভারতীয় ফুটবলাররা। এর আগে আই লিগের দুই ডিভিশন জিতেছেন তাঁরা। তবে এই প্রথম সর্বোচ্চ স্তরের ট্রফি জেতার সুযোগ রয়েছে তাঁদের সামনে, তাও আবার আই লিগের দল হিসাবে। সেমিফাইনালের নায়ক জবি জাস্টিন শুনিয়ে গেলেন, ‘ফাইনালে ওঠার পর আর খালি হাতে ফিরতে চাই না। ট্রফি জেতাটাই আমাদের সবচেয়ে বড়ো মোটিভেশন। সেই লক্ষ্যে সবাই সেরাটা দেব। দলের আর মালয়ালি সদস্য মির্শাদ মিচুর সামনে রয়েছে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। গতবার নর্থ-ইস্টের হয়ে জেতার পর এবার তাঁদের বিরুদ্ধেই খেলতে চলেছেন তিনি। এবারও খালি হাতে ফিরতে রাজি নন মির্শাদ।
ফাইনালে নামার আগেই খবর এসেছে, ক্রইট এনোবাখায়ে এবং সানডের ভিসা সমস্যা মিটে গিয়েছে। দুই নতুন বিদেশিকে দ্রুতই ভারতে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে ডায়মন্ডহারবার ম্যানেজমেন্ট। যে খবর পাওয়ার পর ক্লাব সহ সভাপতি আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “আর যদি একটা সপ্তাহ আগে ওরা ভিসা পেত।” ব্রাইট এবং সানডে না থাকলেও শনিবার ফাইনালে আছেন ফরোয়ার্ড লুকা মায়সেন। লম্বা সময় ধরে তিনি ভারতে খেলেছেন, আই লিগ থেকে আইএসএলে তুলেছেন পাঞ্জাব এফসিকে। কিন্তু এদেশে জাতীয় পর্যায়ের ট্রফি জয়ের এত কাছাকাছি আগে পৌঁছাতে পারেননি স্লোভেনিয়ার ফরোয়ার্ড। ডুরান্ডে চার গোল করা লুকার উপর ভরসা রাখছে ডায়মন্ডহারবার। সেকথা জানেন তিনি, চাইছেন দলের ভরসার দাম দিতে। “এমন ফাইনাল আগে খেলেছি। যুবভারতীতেও বহু ম্যাচ খেলেছি। কোনওটাই নতুন নয়। তবে কলকাতার ক্লাবে খেলতে এসেই ফাইনালে ওঠা গর্বের বিষয়। আমরা দল হিসাবে ফাইনালে উঠেছি। সেভাবেই আরও একটা ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে” বলে গেলেন লুকা।
এদিন চূড়ান্ত অনুশীলন পর্বে কোচ কিবু ফুটবলারদের হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, ফাইনালে কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তাঁর পরিকল্পনা। ফাইনালের দলে বিশেষ একটা পরিবর্তন করছেন না কিন্তু। সেমিফাইনালে পাঁজরে চোট পাওায় হোলিচরণ নার্জারি নেই। তাঁর পরিবর্তে প্রথম একাদশে ঢুকছেন নরহরি শ্রেষ্ঠা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.