দুলাল দে: শনিবার কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ মোহনবাগান, কিংবা মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গল নয়। বরং বলা ভাল ডার্বি আয়োজনে দু’টো দলেরই আসল প্রতিপক্ষ শনিবারের আবহাওয়া। দু’দলের কোচ বিনো জর্জ এবং ডেগি কার্ডোজো, দু’জনেই তাকিয়ে রয়েছেন আকাশের দিকে। শেষ পর্যন্ত বরুণদেব ম্যাচে বিঘ্ন ঘটাবেন না তো?
শনিবারের আবহাওয়া নিয়ে দু’দলের কোচ-ফুটবলার-সমর্থকরা যেমন চিন্তিত, সেরকম চিন্তিত আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্তও। প্রথমে ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল ১৯ জুলাই। পুলিশি আপত্তিতে সেই ম্যাচ পিছিয়ে শেষ পর্যন্ত হল ২৬ জুলাই। কিন্তু বৃষ্টির ভ্রুকুটিতে আপামর বাঙালির চোখ আকাশে।
ম্যাচ শনিবার। কিন্তু শুক্রবার সকাল সকাল কল্যাণীতে পৌঁছে সোজা মাঠে চলে গিয়েছিলেন আইএফএ সচিব। কিছুক্ষণ মাঠেও হাঁটলেন বোঝার জন্য কী অবস্থায় রয়েছে কল্যাণী স্টেডিয়ামের মাঠ। তারপরেই চোখ আকাশে। শুক্রবার সারাদিন ধরেই যে অঝোরে বৃষ্টি। এদিকে, শনিবারের ডার্বির যাবতীয় আয়োজন সারা। মাঠের ধারে সাধারণ দর্শকদের জন্যও মেডিকেল ক্যাম্প। পর্যাপ্ত পানীয় জল। সব কিছুর আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু বেশি মানুষ মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না, তাই ঠিক হয়েছিল, কল্যাণী স্টেডিয়ামের বাইরেও সাধারণ দর্শকদের জন্য বড় করে স্ক্রিন টাঙানো হবে। সেখানে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হবে ডার্বি। পুলিশ অবশ্য স্টেডিয়ামের বাইরে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখানোর ব্যাপারে সম্মতি দেয়নি। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ম্যাচ শেষ হওয়া মাত্র স্টেডিয়াম দ্রুত খালি করে দিতে হবে।
এসবই তো গেল ম্যাচের বাইরের আয়োজন। কিন্তু যদি শুক্রবারের মতো শনিবারেও বৃষ্টি হয়? আর এখানেই ডার্বি ঘিরে আশার কথা শুনিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। জানিয়েছে, শনিবার নদিয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাতের সেরকম কোনও পূর্বাভাস নেই। যা আছে সেই রবিবার। আবহাওয়া দপ্তরের এই পূর্বাভাস জেনে স্বাভাবিকভাবেই শনিবারের ডার্বি নিয়ে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস আরও একটু বেড়েছে। এমনিতে কারও হাতেই বিশেষ টিকিট নেই। দু’দলকে দেওয়া হয়েছে মাত্র এক হাজার করে টিকিট। তার বাইরে আরও এক হাজার কমপ্লিমেন্টারি টিকিট। যার অর্থ সাধারণের জন্য বিক্রি হয়েছে মাত্র সাত হাজার। ফলে শনিবারের গ্যালারি ফাঁকা থাকার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
মরশুমের প্রথম ডার্বি। অনান্য সময় হলে ম্যাচটা নিশ্চিতভাবেই হত যুবভারতীতে। পরিবর্তে কল্যাণী। কলকাতা লিগের ডার্বির স্থান যেমন বদলেছে, সেরকম বদলেছে ডার্বি ঘিরে সাধারণ মানুষের আবেগও। ডার্বির আগেরদিন দু’দলের প্র্যাকটিসেই লোকজন নেই। এরকমটা কোনওদিন ভাবা গিয়েছে? কিন্তু এরকমটাই চিত্র শুক্রবারের দু’দলের প্র্যাকটিসে। অনেকে অবশ্য বলতেই পারেন, প্রবল বৃষ্টিতেই সমর্থকরা অনুশীলনে গিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারেননি ফুটবলারদের।
তবে ডার্বির আগে পর্যন্ত দু’দলই কলকাতা লিগ নিয়ে যে ভাবনা চিন্তা করুক না কেন, ডার্বি আসতেই বদলে গিয়েছে দুই দলের ম্যানেজমেন্টের ভাবনা। ইস্টবেঙ্গল কোচ বিনো জর্জ অনেকদিন ধরেই ম্যানেজমেন্টকে বলে আসছিলেন, ডার্বিতে তাঁর কিছু সিনিয়র ফুটবলার চাই। তাঁর দাবি মেনেই ম্যানেজমেন্ট ঠিক করেছে, ডার্বির দলে সিনিয়র দল থেকে ঢুকছেন, গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার, ডেভিড, মার্তণ্ড, লালরিনডিকা। প্রভাত লাকরা অবশ্য আগের থেকেই খেলছেন।
পাশাপাশি মোহনবাগানও জুনিয়র ডেভলপমেন্ট দলের কথা এতদিন ধরে বলে আসলেও, ডার্বিতে লক্ষ্য রেখেই দলে নিয়ে এসেছে, সুহেল ভাট, দীপেন্দু বিশ্বাস এবং কিয়ান নাসিরিকে। ফলে লড়াইটা এবার তুল্যমূল্য। যদিও পয়েন্টের বিচারে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শনিবার ডার্বিতে মাঠে নামবে মোহনবাগান। কিন্তু কে আর কবে ডার্বির আগে লিগ টেবিলের ফলাফলকে গুরুত্ব দিয়েছে। শনিবার নতুন দিন। নতুন লড়াই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.