প্রসেনজিৎ দত্ত: দুর্গাপুজো এলেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে তাঁর। তিনি সঙ্গীতা বাসফোর। গত জুলাইয়ে জোড়া গোল করে ভারতকে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে তুলে সঙ্গীতা এখন দেশের ফুটবল জগতের নয়নের মণি। কেমন কেটেছিল ছোটবেলার পুজো? সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে সেসব কথা জানাতে গিয়ে বেশ কিছুটা নস্ট্যালজিকই হয়ে পড়লেন এই ভারতীয় ফুটবলার। জানালেন, এবার পুজোয় মায়ের কাছে কী চাইছেন তিনি।
ছোটবেলার দুর্গাপুজো কেমন কেটেছে বলতে গিয়ে তাঁর উপলব্ধি যেন দুই পৃথিবীর বিরাট ফারাককেই তুলে ধরে। ছোটবেলা আর বড়বেলা, এই দুই পৃথিবীর কথাই বলা হচ্ছে। এখানে প্রভূত ফারাকের মাঝেও একটা জিনিস সাধারণ, কল্যাণীর গান্ধী হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টার। সেখানেই কেটেছে শৈশবের পুজোর দিনগুলি রাতগুলি। সেসব ভাবলে হারানো সময়টা যেন কড়া নাড়ে হৃদয়ে। বড়বেলায় যখন গোল করে ভারতকে এশীয় মঞ্চের এলিট প্রতিযোগিতায় তুললেন, তখনও কোয়ার্টারের একচিলতে ঘরে তাঁর মা ফুলঝুরি বাসফোর জয়ের সুখবর শোনার অপেক্ষায় ছিলেন। সঙ্গীতা বললেন, “বছরভর অপেক্ষা থাকত। পুজোর ঠিক আগে আগেই বাবা-মায়ের কাছে নতুন জামা কিনে দেওয়ার আবদার থাকত। পুজো মানেই তো বাঙালির জীবনে এক অন্যরকম আনন্দ আর উত্তেজনা। এই সময়টায় উৎসবমুখর পরিবেশটাকে উপভোগ করতে কে না চায়! একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া, প্যান্ডেলে ঘোরাঘুরি করা, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা – সব কিছুই চলত। সবচেয়ে ভালো লাগত, মায়ের হাতের রান্না খেতে। সেটা সব সময় আলাদা মাত্রা যোগ করত। কিন্তু এখন অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে।”
পুজোর সময় কি কোনও ফুটবল প্রতিযোগিতা হত? সঙ্গীতা জানালেন, ছোটবেলায় দুর্গাপুজোর সময়টায় কখনও টুর্নামেন্ট খেলেননি। “যখন রাজ্যস্তরে খেলার সুযোগ পাই, তখন থেকেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে পুজোর সময়টা। কারণ উৎসবের মরশুমেই বেশিরভাগ সময় খেলা পড়ত। এতে আফসোস নেই। তখন লক্ষ্য একটাই, ভালো খেলা, দলের হয়ে গোল করা।” দুর্গাপুজোর কথা হবে আর কলকাতার পুজো নিয়ে কথা হবে না, তা কি হয়? কলকাতায় কখনও দুর্গাপুজো দেখতে এসেছেন, প্রশ্ন করতেই বললেন, “তখন অনেকটাই ছোট। একবার মাত্র কলকাতার পুজোর দেখতে গিয়েছি। সারারাত ঠাকুর দেখেছি… কলকাতার পুজো নিয়ে বলতে গেলে আমার কাছে ব্যস এটুকুই।”
ভারত এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করেছে। অন্যদিকে, মেয়েদের এএফসি কাপ টুর্নামেন্টের ফাইনাল রাউন্ডে যোগ্যতা অর্জন করেছে করেছে ইস্টবেঙ্গল। যে টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সঙ্গীতা। বছরটা তো অন্যান্য বারের থেকে স্পেশাল হবেই। তা এই বিশেষ এই বছরের পুজো কীভাবে কাটাবেন? বললেন, “তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। সবথেকে বড় কথা, ওই সময় ম্যাচ থাকবে। সিনিয়র জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল রাউন্ডের ম্যাচগুলো রয়েছে ওই সময়। তাই ভালো খেলে যাতে বাংলাকে ভালো জায়গায় পৌঁছে দিতে পারি, সেই লক্ষ্যই থাকবে।”
যেদিন এশিয়ান কাপের মূলপর্বে উঠল ভারত, সেদিন সঙ্গীতা বলেছিলেন, “এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। এই সাফল্য পুরো দলের সমবেত প্রচেষ্টার ফল। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করা। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হবে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন। আমি মাঠে নেমেছি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জনের জন্য নয়, বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে। ক্ষীণ একটা সম্ভাবনা রয়েছে। এখন তার লক্ষ্য নিয়েই আরও কঠিন লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।” সেই কথারই অনুরণন শোনা গেল সঙ্গীতার গলায়। বললেন, “দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা থাকবে যাতে ভারতের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ খেলতে পারি।” মাসখানেক আগে ফিফার ক্রমতালিকায় সাত ধাপ উঠে এসেছিল ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল। এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের আগে ভারতের র্যাঙ্ক ছিল ৭০। আর এখন সাত ধাপ এগিয়ে সঙ্গীতারা উঠে এসেছেন ৬৩-তে। দু’বছরের মধ্যে যা ভারতীয় মহিলা দলের সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিং। ষোলোকলা পূর্ণ হবে ভারতীয় দল বিশ্বকাপে গেলেই। মায়ের সামনে মনের এই কথাটুকুই বারবার বলছেন সঙ্গীতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.