দুলাল দে: করোনা যে তাঁর স্বপ্নের সামনে এভাবে হিমালয় সমান বাধা হয়ে দাঁডিয়ে পড়বে, ভাবতে পারেননি অদ্রীজা। অদ্রীজা অর্থাৎ অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় মহিলা বিশ্বকাপ দলে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি বর্ধমানের রূপনারায়ণপুরের অদ্রীজা সরখেল। ঠিক, একমাত্র প্রতিনিধি। যাঁকে বর্তমান লকডাউনে অন্নসংস্থান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে! নিজেকে ফিট রাখার তাগিদে।
করোনা প্রকোপে আগামী নভেম্বরে ভারতে অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা ফুটবল বিশ্বকাপ বাতিল করে দিতে হয়েছে ফিফাকে। যেখানে সংগঠক দেশ হিসেবে ভারত সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছিল। গোলকিপার অদ্রীজার সেখানে দেশের জার্সিতে নামার কথা ছিল। কিন্তু করোনা গ্রাসে বিশ্বকাপ বাতিল হয়ে যাওয়ায় অদ্রীজাদের জাতীয় শিবিরও বন্ধ হয়ে যায় গত ১৩ মার্চ। এরপর থেকে বর্ধমানের চিত্তরঞ্জনে মামার বাড়িতে বসে অনন্ত অপেক্ষা। ফের কবে ডাকবে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন, কবে বসবে বিশ্বকাপ আসর? তবে জাতীয় শিবির বন্ধ হলেও জাতীয় কোচদের নজর থেকে দূরে নেই অদ্রীজা। প্রতিদিন অনলাইন ভিডিও ক্লাসে জাতীয় দলের কোচরা দেখছেন, ফিটনেসে যেন একটুও ঢিলেমি না আসে। অনলাইন ভিডিও ক্লাসে মিটিং হচ্ছে। তারপর জাতীয় কোচ থমাস, অ্যালেক্স অ্যামব্রোসদের পাঠিয়ে দেওয়া চার্ট ধরে ধরে প্র্যাকটিস। কখনও বাড়ির ছাদে। কখনও বাড়ির সামনে মাঠে। কখনও মামা শুভেন্দু ভট্টাচার্য কোচ। কখনও ছোটবেলার কোচ সঞ্জীব বাড়ুই আসছেন বল নিয়ে।
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে জাতীয় কোচদের পরামর্শ মতো নিজের মতো করে প্রস্তুতি হয়তো নিচ্ছেন অদ্রীজা। কিন্তু লকডাউনের সময় শরীরের পুষ্টির জন্য খাবেন কী? মামা শুভেন্দুবাবু অটো চালান। লকডাউনের বাজারে অটো বন্ধ। রোজগার নেই। জাতীয় শিবিরে থাকাকালীন ঢালাও পুষ্টিকর খাবারদাবারের বন্দোবস্ত থাকে। দুধ, ফল, চিকেন, মাটন- আরও কত কী। কিন্তু লকডাউনে রূপনারায়নপুরের বাড়িতে সাধারণ ডাল-ভাত জোগাড় করাই তো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে তাঁর মামার পক্ষে।
শুক্রবার ফোনে শুভেন্দুবাবু দুঃখ করে বলছিলেন, “আমাকে সাহায্য করতে হবে না। সারকার বা কোনও ব্যক্তি যদি আমার ভাগ্নির চাহিদা মতো পুষ্টিকর খাওয়ার জোগানটা দিত, খুব উপকার হত। অদ্রীজা তো এই মুহূর্তে শুধু আমাদের পরিবারের নয়। বিশ্বকাপ দলে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি। এখন ওর প্রতিদিন ভাল খাবার দরকার। সেটা এই লকডাউনে কোথায় পাব আমি?” আর বিশ্বকাপ দলে বাংলার মুখ অদ্রীজা বলছিলেন, “জাতীয় দলে থাকাকালীন যেভাবে খাওয়া দাওয়া করতাম, এখন আর সেসব সম্ভব নয়। মামার অটো বন্ধ। কী করে সংসার চালাবেন উনি? তাও আসানাসোল নববিকাশ ক্লাবের সঞ্জীব স্যার আর স্থানীয় ব্যক্তি রাজীব সরকার সাহায্যর হাত বাড়িয়ে না দিলে, রীতিমতো সমস্যায় পড়তাম।”
এক তো খাওয়ার সমস্যা। তার উপর সাময়িক স্বপ্নভঙ্গর বেদনা। মামার ফোন থেকে অদ্রীজা বলছিলেন, “প্রথম যখন শুনলাম, নভেম্বরে বিশ্বকাপ হবে না, সত্যিই ভেঙে পড়েছিলাম। এত সামনে এসে স্বপ্ন আটকে গেল। তবে কোচরা বুঝিয়েছেন, যে কোনও সময়েই সব সমস্যা কেটে গিয়ে ফের বিশ্বকাপ হবে। ফের আমরা জাতীয় শিবিরে যাব। ফের দেশের জার্সি গায়ে পড়ব।” সে তো হবে। কিন্তু বর্তমানে পুষ্টিকর খাবার জোগান হবে কী করে? ছোটবেলায় অ্যাথলেটিক্স প্রথম প্রেম ছিল অদ্রীজার। কিন্তু ফুটবল কোচ সঞ্জীব বাড়ুইয়ের পাল্লায় পড়ে গোলকিপিংয়ের পাঠ শুরু। কে জানত, সেই ফুটবলই অদ্রীজাকে এমন অবিশ্বাস্য পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে? যেখানে বিশ্বকাপে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি হয়েও হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর একটা ডিম কিংবা এক গ্লাস দুধ জুটবে কি না, অনিশ্চিত। হায় ভারতবর্ষ!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.