রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রথম আইপিএল ট্রফি জয়কে কেন্দ্র করে বেঙ্গালুরুতে যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে, তা নিয়ে এখনও উত্তাল গোটা দেশ। আরসিবি’র বিজয়োৎসবে শামিল হতে গিয়ে চলে গিয়েছে এগারোটা তাজা প্রাণ। পদপিষ্ট হয়ে। যার জেরে সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছেন বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার। এফআইআর করা হয়েছে আরসিবি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ এবং কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার আরসিবি’র মার্কেটিং প্রধান নিখিল সোসালেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং পুরো বিষয়টা নিয়ে ভারতীয় বোর্ডও প্রবল রুষ্ট। আগামী বছর থেকে আইপিএল জয়ের বিজয়োৎসবে রাশ যেমন টানা হবে, তেমন একটা বিশেষ নির্দেশিকাও জারি করতে পারে বোর্ড।
কী রকম? বোর্ডের ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ এ দিন বলছিলেন যে, আইপিএলের বিজয়োৎসবে এগারো জনের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না। অনেকের মতে, আগামী বছর থেকে আইপিএল বিজয়োৎসব দেখার জন্য টিকিট বিক্রি করে দেওয়া উচিত। দর্শকরা যেমন শহরে আইপিএল ম্যাচ পড়লে অনলাইনে টিকিট কেটে মাঠে যান, খেলা দেখেন, বিজয়োৎসবের ক্ষেত্রেও তেমনটাই করা সবচেয়ে ভালো। তাতে এ রকম মর্মান্তিক ঘটনা থেকে ভবিষ্যতে রক্ষা পাওয়া যাবে। এখনই সব কিছু চূড়ান্ত নয়। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে প্রাথমিক একটা ভাবনাচিন্তা হয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে।
একদিক থেকে দেখলে গেলে, এই ভাবনা একদম ঠিক। কারণ, চিন্নাস্বামীর বাইরে এবার যে অকল্পনীয় ঘটনা ঘটেছে, তার নেপথ্য কারণ গুজব। আরসিবি’র বিজয়োৎসবের সময় আচমকাই বাইরে রটে যায়, চিন্নাস্বামীর সাত নম্বর গেট থেকে বিনামূল্যে মাঠে ঢোকার টিকিট দেওয়া হচ্ছে। যার পর আর সামলানো সম্ভব হয়নি জনতাকে। হাজার-হাজার লোক রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন ফ্রি টিকিট পেতে। চিন্নাস্বামীতে এমনিতে তেরোটা গেট রয়েছে। তার মধ্যে নয় আর দশ– দু’টো গেট কর্নাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। আরসিবি’র ‘এন্ট্রি রুটের’ মধ্যে আবার গেট নম্বর ৫, ৬, ৭, ১৯ ও ২০ পড়ছিল। এবং সবচেয়ে বেশি হতাহতের খবর পাওয়া গিয়েছে সেই কালান্তক গেট নম্বর সাত থেকে। যে গেট থেকে বিনামূল্যে মাঠে ঢোকার টিকিট দেওয়া হচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।
বোর্ডের ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বলছিলেন, ভারতীয় কোচ গৌতম গম্ভীর ‘রোড শো’ কিংবা ‘বাস প্যারেড’ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ঠিকই। কিন্তু ‘রোড শো’র সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। কারণ, রাস্তা ফাঁকা বাস যায়। ক্রিকেট ভক্তরা রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকেন। পুলিশের পক্ষে ম্যানেজ করতেও সুবিধা হয়। গণ্ডগোল বাঁধে যখন হাজার-হাজার লোক স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করে। তখনই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই যদি অনলাইনে টিকিটের বন্দোবস্ত থাকে, তা হলে সুষ্ঠুভাবে সব সম্পন্ন করা যেতে পারে। যাঁরা টিকিট কাটবেন, তাঁরা আসবেন। যাঁরা কাটবেন না, মাঠে ঢুকতে পারবেন না। যা আইপিএল ম্যাচের সময় হয়। এত দিন ট্রফি জয়ের উৎসব ইত্যাদি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের প্রাইভেট অনুষ্ঠান হিসেবেই গণ্য করা হত। বোর্ড ঢুকত না। কিন্তু বেঙ্গালুরুর মর্মান্তিক কাণ্ডের পর যে বোর্ডের হাতেই প্রকারান্তরে বিজয়োৎসবের রাশ যাবে আগামী দিনে, লিখে দেওয়াই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.