Advertisement
Advertisement
Asia Cup 2025

মহাষষ্ঠীর রাতে ভারত বনাম পাকিস্তান, রাউন্ড থ্রির শেষে চ্যাম্পিয়ন হতে যুযুধান অভিষেক-শাহিন

পহেলগাঁও উত্তর সময়ে ভারত-পাক বৈরিতার আগুন জ্বলেছে গোটা এশিয়া কাপ ধরে।

India vs Pakistan clash in Asia Cup 2025 final

ফাইল ছবি।

Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:September 28, 2025 12:40 pm
  • Updated:September 28, 2025 12:40 pm   

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: প্রাক্তন পাকিস্তানি ইদানীংকালে ক্রিকেটারদের মধ্যে কেউ যদি নিখাদ ক্রিকেটীয় ভিত্তিতে কথাবার্তা বলেন, তা হলে তিনি ওয়াসিম আক্রম। শোয়েব আখতার, মহম্মদ ইউসুফ, মিসবা-উল-হকরা অধিকাংশই এখন ভারত-পাকিস্তান হানাহানির পটভূমিতে বাজার গরম করতে নামছেন। শোয়েব তো মাঝে ফস করে অভিষেক শর্মার নাম ভুল করে অভিষেক বচ্চন বলে ফেলেছিলেন! বাদবাকি সোশ্যাল মিডিয়াকে বাদই রাখছি। স্বয়ং বচ্চন জুনিয়র পাকিস্তান পেসারকে তা নিয়ে ‘ট্রোল’ করে দিয়েছেন! যাক গে। আক্রম নিয়ে লেখা হচ্ছিল। তা, রবিবারের এশিয়া কাপ ফাইনাল মহারণের পূর্বে আক্রম একখানাই পরামর্শ দিয়েছেন দেশজ টিমকে। বলেছেন যে, “ভারত অবশ্যই ফেভারিট। কিন্তু পাকিস্তানের কোনও সম্ভাবনা নেই, বলছি না। নিজেদের ছন্দ ধরে রাখতে হবে। পাকিস্তান ক্রিকেটারদের বিশ্বাস করতে হবে যে, ওদের পক্ষেও স্মার্ট ক্রিকেট খেলা সম্ভব। দ্রুত যদি প্রথম দিকে উইকেট তুলতে পারে পাকিস্তান, তা হলে ভারতকে ব্যাকফুটে পাঠানো সম্ভব।”

Advertisement

পরোক্ষভাবে দেখলে দ্রুত কার উইকেট তুলতে বলছেন আক্রম, সেটা আন্দাজ করার জন্য কোনও বিশেষ পুরস্কার নেই। অভিষেক শর্মা! শর্মাজি কা বেটা! আর কী ভয়ংকরই না সেই ‘বেটা’! এশিয়া কাপ জুড়ে স্রেফ তাণ্ডব চালাচ্ছেন অভিষেক। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ছ’টা ম্যাচ খেলে ৩০৯ রান করে ফেলেছেন অভিষেক! ব্যাটিং গড় ৫১.৫০। প্রায় দু’শোর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেখে পরের পর ম্যাচে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যার মধ্যে শেষ তিন ম্যাচে তিন এশীয় শক্তির বিরুদ্ধে টানা হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। পাকিস্তান। বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা। রবিবারের ফাইনালে অভিষেককে থামানোর শ্রেষ্ঠ বাজি যিনি, সেই শাহিন শাহ আফ্রিদি বাদবাকি টিমের বিরুদ্ধে ভালো পারফর্ম করলে কী হবে, অভিষেকের বিরুদ্ধে ন্যূনতম সুবিধে করতে পারেননি। একটা পরিসংখ্যান দেখছিলাম যে, চলতি এশিয়া কাপে দু’টো ম্যাচ মিলিয়ে ছ’ওভার মতো বোলিং করেছেন শাহিন শাহ অভিষেককে। সঠিক করে লিখলে, ৫.৫ ওভার। রান গলিয়েছেন ৬৩। এবং একবারও শাহিন আউট করতে পারেননি ভারতের বাঁ-হাতি ব্যাটারকে। সবচেয়ে বড় কথা, শাহিনকে আক্রমণের কায়দা। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে শাহিনের প্রথম বলেই স্টেপ আউট করে তাঁকে বাউন্ডারিতে ফেলে দেন অভিষেক। পরের ডেলিভারিটা আবার সোজা মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন! সুপার ফোরের সাক্ষাতের সময় পরিস্থিতি তুলনায় অনেক বেশি অগ্নিগর্ভ ছিল। কারণ, তত দিনে করমর্দন-বিতর্ক, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে ভারত-পাক সম্পর্ক প্রবলভাবে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই ম্যাচে ভারত যখন ১৭১ রান তাড়া করতে নামে, পাকিস্তান উইকেটকিপার মহম্মদ হ্যারিস স্টাম্পের কাছে চলে আসতে চেয়েছিলেন। যাতে ভারতীয় ওপেনার ক্রিজ ছেড়ে বেরোতে না পারেন। কিন্তু উত্তেজিত শাহিন তাঁকে পিছনে যেতে বলেন। প্রথম বলটাই পাকিস্তান পেসার বাউন্সার দেন। রেজাল্ট-সপাটে ছয়!

তবু, দিন শেষে শাহিনকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। যতই অভিষেক বনাম শাহিন স্কোরলাইন এখনও পর্যন্ত এশিয়া কাপে ২-০ দেখাক! কারণ, সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিন-তিন ছ’উইকেট নেন পাকিস্তান পেসার। এটা নিঃসন্দেহে লিখে দেওয়া যায় যে, রবিবাসরীয় দুবাইয়ে নামার সময় ভিতরে ভিতরে ফুটবেন শাহিন। চাইবেন, মোক্ষম সময়ে, মোক্ষম যুদ্ধে অভিষেককে জবাব দিতে। ফাইনালে। দ্য ম্যাচ হুইচ ম্যাটার্স দ্য মোস্ট! “শাহিন আমাদের দিকে ধেয়ে আসবে, জানি। ও আগ্রাসী বোলার। সব সময় চাইবে, ব্যাটারকে নকআউট পাঞ্চ দিতে,” শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শুক্রবার রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে উঠে বলে দিয়েছেন ভারতের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল। সঙ্গে যোগ করেছেন, “কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলছি, অভিষেকও চুপচাপ বসে থাকবে না। তবে খেলার জন্য এ রকম মুখোমুখি যুদ্ধ ভালো। যত বার শাহিন-অভিষেক মুখোমুখি হবে, তত বার শিরশিরানি নিয়ে খেলা দেখতে বসবেন সমর্থকরা।”

এমন নয় যে, শাহিন বনাম শর্মা ছাড়া আর কোনও আগ্রহ-আকর্ষণ পড়ে নেই রবিবাসরীয় ম্যাচে। অবশ্যই আছে। যেমন, গোটা টুর্নামেন্টে সবচেয়ে চাপের ম্যাচটা আজ খেলতে নামছে ভারত। যেমন, সূর্যকুমার যাদব ঘোর ফর্ম-অমাবস্যায় ডুবে। গ্রুপ পর্বে একমাত্র পাকিস্তান ম্যাচ বাদে আর কোনওটায় রান পাননি। যেমন, হার্দিক পাণ্ডিয়া-অভিষেক শর্মার ‘ক্র্যাম্প’। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক ওভারের বেশি বোলিং করেননি হার্দিক। অভিষেক দশ ওভারের মধ্যে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। মর্কেল বলে দিয়েছেন, অভিষেক ফিট। হার্দিককেও পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চলছে। ফাইনাল শেষে আরও একপ্রস্থ নাটক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভি আবার এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলেরও প্রধান। প্রথা অনুযায়ী, যাঁর পুরস্কার দেওয়ার কথা। ভারত জিতলে, ট্রফি নেবে নাকি তাঁর হাত থেকে? এ ছাড়া পহেলগাঁও উত্তর সময়ে ভারত-পাক বৈরিতার আগুন তো রয়েইছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে একটাই যুদ্ধ। তার আগুনে আঁচ। লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন, ফাসেন ইওর সিটবেল্টস। মহাষষ্ঠীর রাতে আজ ভারত বনাম পাকিস্তান, আজ অভিষেক শর্মা ভার্সাস শাহিন শাহ আফ্রিদি রাউন্ড থ্রি!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ