Advertisement
Advertisement
New Plant

সোনামুখীর পর এবার মেদিনীপুর, ১২ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা!

এসব উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষে সক্ষম হলেও নাইট্রোজেনের অভাব থাকায় অন্যান্য পতঙ্গ খেয়ে পুষ্টি সংগ্রহ করে, ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের।

New flesh eaters plants of various types discovered in West Mindnapore
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:December 24, 2024 12:30 pm
  • Updated:December 24, 2024 12:40 pm  

সম্যক খান, মেদিনীপুর: আমাজনের জঙ্গলে মাংসাশী তথা পতঙ্গভূক উদ্ভিদের সন্ধান অনেক আগেই মিলেছে। ধীরে ধীরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরনের উদ্ভিদ পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতি বাঁকুড়ার সোনামুখীরক জঙ্গলে ড্রসেরার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এবার জঙ্গলমহলেও নতুন প্রজাতির একাধিক মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পেলেন বিদ‌্যাসাগর বিশ্ববিদ‌্যালয়ের উদ্ভিদবিদ‌্যা বিভাগের দুই বিজ্ঞানী। অধ‌্যাপক অমলকুমার মণ্ডল ও তাঁর অধীনে গবেষণা করা সুখদেব বেরার নজরে পড়েছে অন্তত ১২ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ।

Advertisement
জলজ উদ্ভিদ নাইট্রোজোনের অভাবে পতঙ্গভূক হয়ে ওঠে। নিজস্ব চিত্র।

আসলে উদ্ভিদ মানেই সবুজ ক্লোরোফিল যুক্ত এবং সৌরশক্তি ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম। আর এই কাজে অক্ষম প্রাণীরা উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণীকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে পুষ্টি সাধন করে। তবে কিছু উদ্ভিদ রয়েছে, যারা ছোট ছোট প্রাণীদের ভক্ষণ করে পুষ্টি সাধন করে। এদেরই মাংসাশী উদ্ভিদ বলা হয়। এরা মূলত প্রাণী শিকার করে পুষ্টিরস শোষণ করে। কিন্তু কেন? কীভাবে শিকার করে? এই ধরনের উদ্ভিদ কি সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না? কোন পরিবেশে এরা জন্মায়? এসব নানা বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতুহল তুঙ্গে। তার উত্তর খুঁজতে গিয়েই মিলল বিভিন্ন প্রজাতির মাংসাশী প্রাণীর খোঁজ।

আশ্চর্যজনক বিষয় হল, এই মাংসাশী উদ্ভিদগুলি সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। কিন্তু এরা যে ধরনের পরিবেশে জন্মায় সেখান থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে নাইট্রোজেন শোষণ করতে পারে না। যে জায়গায় এরা জন্মায়, সেই মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি আছে। ঘাটতি পূরনের জন্যই এই বিশেষ ধরনের উদ্ভিদগুলি বিশেষ ধরনের অভিযোজন করে পোকামাকড় ধরে খেয়ে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণ করে। নাইট্রোজেন সজীব কোষের জৈবিকক্রিয়া চালানোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব পূরণের জন্যে মাংসাশী উদ্ভিদগুলি প্রাণী শিকার করে মূলতঃ প্রোটিন অংশ শোষণ করে। প্রোটিন হল নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব অণু যা মাংসাশী উদ্ভিদের নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে মিলল ‘ড্রসেরা বার্মানি’। নিজস্ব চিত্র।

অধ‌্যাপক অমলকুমার মণ্ডল জানাচ্ছেন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বেশ কিছু অঞ্চলে এই মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। দুটি প্রজাতির সূর্যশিশির ও সাতটি প্রজাতির পাতাঝাঁজি পশ্চিম মেদিনীপুরে এবং তিনটি প্রজাতির পাতাঝাঁজি পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন ঘাসজমি ও জলাশয়ে পাওয়া গিয়েছে। সূর্যশিশির উদ্ভিদটিকে ইংরেজিতে ‘সানডিউ‘ বলে। পশ্চিম মেদিনীপুরে পাওয়া সূর্যশিশির উদ্ভিদ দুটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ‘ড্রসেরা ইন্ডিকা’ ও ‘ড্রসেরা বার্মানি’। সূর্যশিশির উদ্ভিদটি মূলত ভেজা বা শুষ্ক ঘাসজমি, শালবনের ভিতরে অথবা পাথুরে ভূমিতে জন্মায়। এদের পাতাতে অসংখ্য ট্রাইকোম থাকে। ওই ট্রাইকোমের সামনের দিকে এক ধরনের আঠালো পদার্থ থাকে। উদ্ভিদগুলি সবুজ বা লাল বর্ণের হওয়ায় ছোট ছোট পতঙ্গরা উদ্ভিদটি দ্বারা আকর্ষিত হয়ে পাতায় বসে এবং পাতাতে উপস্থিত আঠালো পদার্থে আটকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পাতার ট্রাইকোমগুলি পতঙ্গটিকে জড়িয়ে ধরে এবং পুষ্টিরস শোষণ করে।

পুকুরে জন্মানো পাতাঝাঁজিও মাংসাশী। নিজস্ব চিত্র।

অপরদিকে, পাতাঝাঁজি উদ্ভিদগুলি জলাশায় অথবা ভেজা বা কাদামাটিতে জন্মাতে দেখা যায়। ‘ইউট্রিকুলারিয়া উলিগিনোসা’ ও ‘ইউট্রিকুলারিয়া বাইফিডা’ নামক পাতাঝাঁজির প্রাজাতি দুটি ভেজা বা কাদামাটিতে জন্মায় আবার ‘ইউট্রিকুলারিয়া আউরেয়া’ ও ‘ইউট্রিকুলারিয়া গিব্বা’ প্রজাতি দুটি পুকুরে, ধানখেতে জন্মায়। পাতাঝাঁজি উদ্ভিদগুলি মূলবিহীন হয়। এদের পাতার কিছু অংশ রূপান্তারিত হয়ে পকেটের ন্যায় অঙ্গ গঠন করে। যাকে ব্লাডার বলে। এই ব্লাডারের মধ্যে এরা জলে উপাস্থিত ছোট পতঙ্গ ও লার্ভা বা ভেজা মাটিতে উপাস্থিত নিমাটোডকে গ্রহণ করে ও পুষ্টিরস শোষণ করে। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে ঘাসজমি ধ্বংস ও জলাভূমি দূষণের ফলে এই বিস্ময়কর উদ্ভিদগুলির প্রাচুর্য হ্রাস পাচ্ছে। এই গবেষণার আগে সবাই জানত, এই এলাকায় শুধু সূর্যশিশির পাওয়া যায় কিন্তু গবেষণায় উঠে এসেছে আরও অনেক নতুন তথ‌্য। যা নিয়ে ইতিমধ‌্যেই বিজ্ঞানী মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement