প্রবাসেও ঢাকে কাঠি! যার স্বাদ একেবারে আলাদা। বাংলার মতো পেঁজাতুলো আর কাশফুল ভরা মাঠের দেখা না মিললেও এ এক অন্য অনুভূতি। ভুবনজুড়ে আগমনীর সুবাস। তা সে বাংলাতেই থাকুন কিংবা প্রবাসের ক্রাইস্টচার্চে। উৎসবের অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ে যান প্রত্যেক বাঙালি। ক্রাইস্টচার্চের বাঙালি কমিউনিটির পুজো এবার ১০ বছরে পা দিল। ফলে এবার উন্মাদনা আরও বেশি। প্রত্যেক বছরেই নতুন কিছু তুলে ধরতে চান সেখানকার বাঙালিরা। এবারও তার অন্যথা হয়নি। একদিকে রীতি মেনে পুজো, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা থেকে ভুরিভোজ। বিদেশের মাটিতে একেবারে জমজমাট উৎসব।
ইউনেস্কো-স্বীকৃত বাঙালির দুর্গাপুজো পুজো। উদ্যোক্তাদের কথায়, বাঙালি ঐতিহ্য, ঐক্য এবং বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতির এক প্রাণবন্ত মিশ্রণ দেখা যায় ক্রাইস্টচার্চের এই পুজোতে। শুধু তাই নয়, বিদেশের মাটিতে বাংলা এবং বাঙালি সংস্কৃতি, খাওয়াদাওয়া, হেরিটেজকে তুলে ধরা হয় এই পুজোর মাধ্যমে। তাঁদের কথায়, ক্রাইস্টচার্চের গার্ডেন সিটির এই দুর্গাপুজোয় শুধু বাঙালিরা নয়, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন চিনা, জাপানি থেকে শুরু করে মেক্সিকান, ইউরোপিয়ান, শ্রীলঙ্কানদের মতো বহু মানুষ।
আন্তর্জাতিক হ্যাগলি ওভাল ক্রিকেট মাঠের কাছেই এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। যেখানে এবার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। যার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ছিল চিনা প্রতিনিধিদের লায়ন ডান্স। উদ্যোক্তাদের কথায়, দেবী দুর্গা এবং তাঁদের লায়ন ডান্সের মধ্যে একটা যোগসূত্র পেয়েছেন কিউই-চাইনিজরা। সে কথা মাথায় রেখে লায়ন ডান্সের আয়োজন করা হয়। যেখানে ৫০০ জন দর্শকের সামনে বিশেষ প্রদর্শনী হয়।
অন্যদিকে ছিল বিশেষ ধরণের 'জাপানি' ঢাক। তাইকো হল এক ঐতিহ্যবাহী জাপানি ঢোল, যা বাজান জাপানি শিল্পীরা। সেই তাইকোর বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল এই পুজোয়। এখানেই শেষ নয়, ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। পরিবেশন করা হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামে বিশেষ নৃত্যনাট্য। যেখানে ৯ বছর বয়স থেকে ৮০ বছর বয়সের সকল মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। নিছকই নৃত্যনাট্য নয়, এর মাধ্যমে অসাধারণ প্রতিভা এবং শিল্পস্বত্বার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মত উদ্যোক্তাদের।
এছাড়াও ছিল জ্যাজ মিউজিক। যেখানে স্থানীয় বার্নসাইড হাই স্কুলের একদল তরুণ তুর্কি পারফর্ম করেন। ছিল নাচের অনুষ্ঠানও। যেখানে মেক্সিকান ডান্সকে তুলে ধরা হয়।
ভারতীয় সংস্কৃতিও নাচের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। যেমন ছিল মেক্সিকান নৃত্য, তেমনই বিহু, ভরতনাট্যম, মারাকাটামনি, কথাকলি সহ বিভিন্ন ঘরানার নাচ। শেষ নয়, ছিল আরও নানা অনুষ্ঠান।
পেটপুজো ছাড়া কি পুজো সম্পন্ন হয়! ছিল একেবারে বাঙালি খাওয়াদাওয়া। মেনুর তালিকায় খিচুড়ি, লাবড়া, আলুর দম, ভাজা, চাটনি, পাপড়, লাড্ডু, গুলাব জামুন, পায়েস কী নেই...।
পুজো উদ্যোক্তাদের কথায়, ক্রাইস্টচার্চের বেঙ্গলি কমিউনিটি ইনকর্পোরেটেড সোসাইটি নিউজিল্যান্ড সরকারের রেজিস্টার্ড। তাঁদের লক্ষ্য, সর্বধর্ম সমন্বয় গড়ে তোলা।
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.