প্রতীকী ছবি
বেশি টাকা চাই না দ্রুত টাকা চাই? এই দোটানায় পড়েন অনেকেই। দুটো জিনিস কিন্তু আলাদা। বেশি টাকা চাওয়ার ইচ্ছা হল আকাঙ্ক্ষা। আর এক্ষুনি চাই–এটা হল লোভ, যা নির্মূল হওয়াই শ্রেয়। কী করে বুঝবেন, আপনি কোন দলে? এই লেখায় তার সূত্র ধরিয়ে দিচ্ছেন শঙ্খদীপ দাস।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দৌলতে আমরা সবাই ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ করতে অভ্যস্ত। এই অবস্থায় দু’টি দিকে ভয়ানক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। শারীরিক ও অর্থনৈতিক। সকলে শরীর ভালো রাখার বিভিন্ন কার্যকরী উপায় বলছেন। রোগ চিনিয়ে তার সমাধানও বাতলে দিচ্ছেন। সঙ্গে গুগল প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের উপহার দিচ্ছেন। আমরা ঋদ্ধ হচ্ছি। অপরদিকে সমান্তরালভাবে প্রচুর মানুষ বিনিয়োগ ও প্রচুর আয় সংক্রান্ত দিশা থুড়ি লোভ দেখাচ্ছেন। আমরা বিদ্ধ হচ্ছি। বর্তমান ‘টেকসই’ প্রজন্ম আপ্লুত হয়ে বিনিয়োগমুখী হয়েও টিকে থাকতে পারছে না। এই প্রথা ভাঙার প্রথা থেকে বেরিয়ে সঠিক আর্থিক উন্নয়নই এই প্রতিবেদনের আলোচ্য বিষয়।
সামাজিক ও পারিবারিক ইতিহাসকে মাথায় রেখে প্রথমেই একটি দিশা ঠিক করতে হবে। ‘বেশি টাকা চাই নাকি এক্ষুনি টাকা চাই’… এই এক্ষুনি বেশি টাকা পাওয়ার বিজ্ঞানসম্মত উপায় পৃথিবীতে কোথাও নেই। আর আমরা এই অবৈজ্ঞানিক মরীচিকার পেছনে ক্রমাগত ছুটছি এবং হারিয়ে যাচ্ছি।
বেশি টাকা চাওয়ার ইচ্ছাকে আমরা আকাঙ্ক্ষা বলতে পারি। যেটা বাস্তবসম্মত এবং মৌলিক চাহিদা। কিন্তু এক্ষুনি চাই এবং বেশিই চাই এই প্রকার চাহিদাকে আমরা লোভ বলি। এই লোভ এক সংঘাতিক জৈবিক চাহিদা, যা অবিলম্বে বর্জন না করলে বিপদ ভয়ানক। যে প্রকার বিনিয়োগে আর্থিক বৃদ্ধির পরিমাণ কম, সেখানে নিশ্চিতভাবে নিরাপত্তার পরিমাণ বেশি। নিরাপত্তা যেটা নতুন বিনিয়োগকারীর প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। অনুমোদিত বিনিয়োগপত্রে যেকোনও একটি প্রাপ্তি থাকবেই, হয় সেটা আর্থিক মূল্যবৃদ্ধি নয় নিরাপত্তা। নিরাপত্তা অবশ্যই আমাদের একটা উপার্জন। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ দুটো উপার্জনকেই সম্মান দেয়।
এই দুই বিনিয়োগ পদ্ধতির সামঞ্জস্যপূর্ণ সহাবস্থানই সদাকাঙ্ক্ষিত।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় আমরা সেই পথে হাঁটা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি। যার ফলে আগামিদিনের খুচরো বিনিয়োগকারীর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নের সম্মুখীন। বর্তমান প্রজন্মের বিনিয়োগকারী, যঁারা আগামিদিনে আর্থিক স্থিতিশীলতার পথ মসৃণ করতে চান, তাঁদের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু আর্থিক খরচ বহন করতে হবে।
যেমন হেলথ ইনসিওরেন্সের প্রিমিয়াম, টার্ম ইনসিওরেন্সের প্রিমিয়াম। এখানে আমরা রিস্ক ট্রান্সফারের পদ্ধতি আগে গ্রহণ করব। নিয়মানুগ বিনিয়োগ করে (যেখানে আর্থিক নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পাবে) জরুরি তহবিল গঠন করতে হবে। এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। পরবর্তী পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি প্রয়োজনীয়তাকে নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি প্রয়োজনীয়তাকে বাস্তবায়িত করতে পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিবহুল বিনিয়োগপত্র (যেখানে অর্থমূল্য বেশি পাওয়া যাবে) অগ্রাধিকার পাবে। নচেৎ প্রয়োজন মিটবে না। সেখানেও ঝুঁকি ধরে রাখা বা ঝুঁকি স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে হবে। এখানে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বা ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং প্রবণতা মূল বিচার্য বিষয়।
এই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিজের এবং পরিবারের আর্থিক স্বাচ্ছল্য আনবে। জীবনে শুরুর বিনিয়োগের পরিমাণ আর মধ্যবয়সে বিনিয়োগের পরিমাণ এক নয়। জীবনে শুরুর দিকের সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। এই পরিকল্পনা মাথায় রেখে বিনিয়োগের বিন্যাস যথাযথ জায়গায় প্রতিস্থাপিত করতে হবে এবং সময়ের সাথে সাথে তৈরি সময়োপযোগী সম্পদের বিন্যাস নিয়েও পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করতে হবে। তবেই একটা সুস্থ স্বাভাবিক আর্থিক ভবিষ্যৎ তৈরি হবে।
(লেখক প্ল্যানফিনান্স অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড সার্ভিসেস-এর উপদেষ্টা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.