কীভাবে বিনিয়োগ করবেন সাধারণ মানুষ আগামী দিনে? যাঁরা বিশ্বাস করেন যে পেশাদার সংস্থার পরামর্শ ও পরিচালনার উপর ভরসা রাখা উচিত, তাঁরা নিশ্চিত ভাবে লাভবান হঝে, যদিও বাজারে কোনও ধরনের রিটার্ন গ্যারান্টি-যুক্ত নয়। সঞ্চয়-এর আমন্ত্রণে একটু ‘ক্রিস্টাল বল গেজিং’ করলেন রমাকান্ত মহাওয়াড়। কীসের উপর নির্ভর করে এগিয়ে যাবেন লগ্নিকারী? রইল তাঁর বয়ান
আমার মনে হয় বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সাধারণ প্রোডাক্ট ও পরিষেবা অনেক বেশি কাস্টমাইজড হবে, আর তা মূলত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (অর্থাৎ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সম্বল করে। Personalisation, যাকে বাংলায় “ব্যক্তিগতকরণ” বলা যেতে পারে, করা যাবে সহজেই। বছর দশেক বাদে, আমার অনুমান, মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য লগ্নির প্রধান চালিকাশক্তি হবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ব্যক্তিগত বিনিয়োগের আলাদা আলাদা রূপ দেখবেন মানুষ: ‘‘সবার জন্য একই প্রকল্প’’, এই ধারণা বদলে যেতে পারে। AI ব্যবহার করে ইনকাম, খরচের অভ্যাস, পেশা, পারিবারিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যের ইতিহাস, এই সব বোঝা যাবে অনায়াসে। শুধু তাই নয়, জীবনের ইনভেস্টমেন্ট অবজেক্টিভ, অর্থাৎ বিনিয়োগ লক্ষ্য, পর্যন্ত বিশ্লেষণ করা যাবে। আর প্রতিটি বিনিয়োগকারীর জন্য আলাদা বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা সম্ভব হবে।
অনেক (এবং দ্রুত) পরিবর্তন দেখবেন আপনারা। বাজার সম্বন্ধে বিশ্লেষণ অথবা বড় মাপের বদল (যেমন বেতনবৃদ্ধি বা সন্তানের পড়াশোনার খরচ বেশি হওয়া), যাই হোক, পেশাদার বিশেষজ্ঞরা সাহায্য করতে পারবেন আরও নিশ্চিতভাবে।
ঝুঁকি বোঝার ক্ষমতা, আমরা সবাই জানি, খুব জরুরি একটা বিষয়। শুধু বর্তমান ‘‘ঝুঁকি সহনশীলতা’’ যাকে risk appetite বলা চলে– নয়, ভবিষ্যতে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে তাও আগে থেকে আন্দাজ করা যাবে।
তার মানে, ভুল করার সম্ভাবনা কমে আসতে পারে। আমার মনে হয় ভয় ও লোভ, দুই সাবেক আবেগ, আগামী দিনেও থাকবে। তবে হঠাৎ আতঙ্কে ভালো স্টক বা ফান্ড বিক্রি করে দেওয়া বা অতি-আত্মবিশ্বাসের মতো ভুল, এই সব কমানো যাবে।
আরও একটা দরকারী কথা। লগ্নির ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সতর্কবার্তা (মানে অ্যালার্ট বা প্রম্প্ট) দেবে AI। হয়তো প্রতিটি বিনিয়োগকারীর হাতে থাকবে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় এক ডিজিটাল সহায়ক। টেকনোলজির ভূমিকা নিয়ে নতুন আর কী বলব?
অন্য প্রসঙ্গে চলে যাই। ইএসজি-কেন্দ্রিক স্ট্র্যাটেজির উত্থান দেখবেন মানুষ। আরও কয়েক বছর বাদে বিনিয়োগের অন্যতম বৃহৎ মানদণ্ড হবে এনভায়রনমেন্ট, সোশ্যাল ও গর্ভন্যান্স সংক্রান্ত বিষয়। পরিবেশ, সামাজিক দায়িত্ব আর সুশাসন নিয়ে নতুন করে বলতে চাই না, আপনারা ইতিমধ্যেই জানেন।
বিভিন্ন টেকসই ব্যবসা অগ্রাধিকার পাবে এই ধরনের পরিবেশে। ইনভেস্টররা বিনিয়োগ করবেন সেই সমস্ত সংস্থায় যেখানে ব্যবসার স্থায়ী হওয়া নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, যেখানে ‘লং টার্ম গ্রোথ’ আসবে সহজেই।
‘‘জেন জি’’ নিয়ে কত কি শুনি! নতুন প্রজন্মের জন্য পরিবর্তন আরও দ্রুত আসবে। যদি আগামী দশক সম্বন্ধে ভাবি, প্রথমেই এই প্রসঙ্গ চলে আসে মনের মধ্যে l আর একটু বেশি বয়সের কথা বলতে গেলে ‘‘মিশ্র বিনিয়োগ পদ্ধতি’’, তার মানে হাইব্রিড (যেমন মাল্টি অ্যাসেট) সম্বন্ধে ভাবতে হয় l হয়তো ‘‘অ্যাকটিভ বনাম প্যাসিভ’’ নিয়ে এখানকার বিতর্ক মিটে যাবে নতুন মিশ্র মডেলে।
পরিস্থিতি দেখে কখনও অ্যাকটিভ (সুযোগ ধরতে), কখনও প্যাসিভ (খরচ কমাতে) পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করা হবে। তাছাড়া নতুন ধাঁচের সূচক আরও বেশি জনপ্রিয় হবে। এখন তো মোমেন্টাম, লো ভোলাটিলিটি বা ভ্যালু ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, বোঝা যাচ্ছে। সূচক নিয়ে আরও উন্নত কাজকর্ম হবে, এ-ও মনে হয়।
আমার ধারণা, আরও অনেক বেশি করে লক্ষ্যমুখী হবে মানুষ। কেবল বাজারকে হারানো নয়, বরং অবসরকালীন আয় বা সন্তানের পড়াশোনার খরচের মতো লক্ষ্য পূরণে মনোযোগ দেবে হয়তো । তাহলে তার ফলাফল কী হবে? লগ্নি করার আগে ইনভেস্টর চাইবেন সহজ কিছু প্রক্রিয়া, তাতে সুবিধা থাকবে যথেষ্ট। কম খরচ আর স্থিতিশীল মুনাফা, দুই-ই চাইবেন বিনিয়োগকারী।
সীমান্তহীন (বা borderless) বিনিয়োগ আরও গ্রহণ করব আমরা । ২০৩৫ সালে বিনিয়োগে দেশ-বিদেশের পার্থক্য তেমন কিছু থাকবে না, আমার মনে হয়। ভারতীয় বিনিয়োগকারী মার্কিন, ইউরোপীয় বা এশিয়ান প্রকল্প কিনতে পারবে স্থানীয় প্রকল্পের মতোই। এছাড়াও, কিছু বিশেষ বিদেশি সংস্থা আরও সুযোগ দেবে ভারতের মানুষকে। যেমন ধরুন, দেশীয় ইনভেস্টর বুঝতে পারবেন টেসলায় বিনিয়োগ কেন করা দরকার, আর কীভাবে তিনি তা করতে পারেন সামান্য খরচে। কেবল উদাহরণ হিসাবে বললাম কথাটা, রূপক হিসেবে দেখুন।
লেখক পেশাদার ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং প্র্যাকটিশনার
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.