Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2025

‘রোগীস্বার্থই আগে’, পরিবার ছেড়ে হাসপাতালে কেমন কাটে চিকিৎসকের দুর্গাপুজো?

কলম ধরলেন বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ সুব্রত মণ্ডল।

Durga Puja 2025: Experience of doctors during Durga Puja

বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ সুব্রত মণ্ডল

Published by: Sayani Sen
  • Posted:September 15, 2025 4:23 pm
  • Updated:September 15, 2025 7:10 pm  

সুব্রত মণ্ডল: দুর্গাপুজোয় সবাই যখন আনন্দ করে, পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর দেখে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে, আমি থেকে যাই আমার কর্মক্ষেত্রেই। একজন মানুষেরও যদি ‘এমারজেন্সি’ চিকিৎসার দরকার হয়, তার জন্য আমি রয়েছি। একজন চিকিৎসক (বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ) হিসেবে, পুজোর সময় আমার দায়িত্ব কয়েকশো গুণ বেড়ে যায়। তবে বাকি সকলের মতোই আমিও অপেক্ষা করি পুজোর। সচরাচর পুজোর সময় সাধারণ মানুষ সেভাবে ডাক্তার দেখাতে আসে না। যাঁরা আসেন, তাঁদের অবস্থা রীতিমতো শোচনীয়, ডাক্তার না দেখালেই নয়… তাই আসেন। অনেকেই বলেন, পুজো কিংবা এ ধরনের বড় উৎসবের সময়গুলোতে প্রয়োজনে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এমনকি কিছু বেসরকারি নার্সিংহোম রয়েছে, যেগুলো পুরোপুরিই বন্ধ থাকে এই কয়েকটা দিন। ফলে সাধারণ মানুষ অসহায় অবস্থায় সরকারি হাসপাতালেই ভিড় করেন। তাই আমি নিজে বহুদিন হল পুজোয় ছুটি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমি একা নই, হাসপাতালের অন্যান্য ডাক্তার, নার্সিং স্টাফ সকলকেই উপস্থিত থাকতে বলি, যাতে পুজোর ক’টা দিন কোনও পেশেন্টকে ফিরিয়ে দিতে না হয়।

Advertisement
Dr-Subrata-Biswas
চিকিৎসক সুব্রত মণ্ডল।

ছোটবেলার পুজো ছিল একেবারে অন্যরকম। পুজো আসছে আসছে ভাবলেই মনের ভিতর যেন আনন্দের এক তরঙ্গ খেলে যেত। বাবা এনে দিত নতুন জামা। কবে সেই জামা হাতে পাবো, অপেক্ষায় হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম ক্যালেন্ডারের দিকে। নতুন জামা হাতে পেলে মনে হত, সেই দিনটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। গায়ে দেওয়ার আগে আলমারিতে তুলে রাখতাম সেই জামা, কতবার না-জানি বের করে করে দেখতাম। বন্ধুদের ডেকে দেখাতাম। পুজো আসছে, এই আনন্দে রাতের পর রাত ঘুম হত না। প্রতি বছরের পুজো দেখতে দেখতেই যেন আমার বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই পাড়ায় পুজো হতে দেখেছি। সেই মণ্ডপে বসে থাকতাম বন্ধুদের সঙ্গে, পুজোর আগেই বন্ধুরা মিলেই চাঁদা কাটতে যেতাম। স্বপ্নের মতো কেটে যেত পাঁচটা দিন। ছোটবেলার আনন্দ ব্যাখ্যা করে বোঝানো অসম্ভব!

Doctor
জনসেবায় ব্যস্ত চিকিৎসক

এখন যখন দুর্গাপুজোর সময় রাস্তায় বের হই, মানুষের ভিড় দেখি, কানের হয়তো গানের দু’কলি ভেসে আসে, ভীষণ ফুরফুরে হয়ে যায় মনের ভিতরটা। আর ততই অনুভব করি, এই সময়ে হাসপাতাল আর দায়িত্বটাকে আগলে রাখা কতখানি জরুরি। গত বছরের ঘটনাই বলি, সেদিন পুজোর সপ্তমী। রাস্তায় তুমুল ভিড় মানুষের। সবেমাত্র ডিউটি সেরে ফিরে পাড়ার মণ্ডপে এসে বসেছিলাম। আড্ডা জমে উঠেছিল সবেই। হঠাৎ কল এল… এক রোগী এসেছিল বুকে ব্যথা নিয়ে, ইসিজিতে দেখা গিয়েছে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। তখন রাত প্রায় ন’টা, স্বাভাবিকভাবে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রোগীর বাড়ির লোক। খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাই আমি, চিকিৎসায় ধীরে ধীরে ‘স্টেবল’ হন ভদ্রলোক।

Doctor
রোগী পরিষেবায় মগ্ন চিকিৎসক

একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে পুজোর আনন্দে মেতে উঠি যেমন, তেমনই একজন ডাক্তার হিসেবে তৎপর হয়ে উঠি এই সময়ে। এ জন্যই তো পুজোর সময় চব্বিশঘণ্টা ফোন চালু রাখি আমি। হয়তো আমি নিজে সেরাটুকু দিই বলেই আমাকে দেখে অন্য চিকিৎসকেরাও এগিয়ে আসেন। পুজোর কটাদিন ব্যক্তিগত আনন্দ-দুঃখ পাশে সরিয়ে রেখে নির্ধারিত রস্টার ডিউটি করে যান তাঁরা, তাঁদের সকলকেই আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশেই আমি অনুরোধ, বিশেষত নিউরো, কার্ডিয়াকের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলি যেন চালু রাখে পুজোর দিনগুলোয়।

Doctor
পুজোর সময় আনন্দের পাশাপাশি কাজেও ব্যস্ত থাকেন চিকিৎসক

শুধু পুজো যেন, ৩১ ডিসেম্বর-১ জানুয়ারির মতো দিনগুলোতেও তো চিকিৎসকদের ছুটি থাকে না। পরিবারকে সময় দিতে পারি না তাই। চেষ্টা করি, একজন চিকিৎসকও যদি ছুটিতে থাকেন কোনওদিন, সেই সময়টায় যেন অন্য কেউ তাঁর জায়গায় বহাল থাকেন। আমার পরিবার কিন্তু তা বলে মোটেই অখুশি নয় এ নিয়ে। আমি যে মানবসেবার মতো জরুরি এক কাজে ব্যস্ত রয়েছি, তা তারা বোঝে।

Doctor
প্রয়োজন হলে গোটা টিম নিয়ে পুজোয় কাজ করেন চিকিৎসক

শুধু মায়ের কথা মনে পড়ে খুব। আমি চাকরি পাওয়ার পরেও মা হাতখরচ দিত পুজোর সময়। তেমনটা আর কোনওদিন পাওয়া হবে না। আমার কাছে পুজোর আনন্দ মানে পেশেন্টদের সুস্থ হয়ে ওঠা। বাড়ি যাওয়ার সময় হয়তো রোগী হাত ধরে বললেন, “আপনার জন্যই প্রাণ ফিরে পেলাম ডাক্তারবাবু,” সে-ই আমার পুজো। আমি একা নই, আমার পুরো টিমই কাজ করে। ঈশ্বরের আশীর্বাদেই সাফল্য পাই আমরা।

অনুলিখন: উৎসা তরফদার।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement