মৌশাখী বোস: এটা দোষ নয়৷ তবু সমাজ বারবার আঙুল তোলে মেয়েদের দিকে৷ দায়ী করে তাদের৷ চরম অপমানে প্রতি মুহূর্তে বিঁধে দেয়৷ কে বলেছে সন্তানহীনতার জন্য মেয়েরাই দায়ী?
চিকিৎসা পদ্ধতি পাল্টেছে এখন৷ প্রমাণ হয়েছে, দাম্পত্য জীবনে সন্তানহীনতার জন্য ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর সমস্যা থাকে৷ স্বামী-স্ত্রী কোনওপ্রকার জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া ১২-১৮ মাস সহবাস করেও সন্তানলাভে অক্ষম হলে, প্রাথমিকভাবে তাকে সন্তানহীনতা বলা হয় (Primary Infertility)৷ আবার দ্বিতীয় সন্তানের জন্য চেষ্টার সময় ১২ মাসের মধ্যে সন্তানধারণ করতে না পারলে তাকে সেকেন্ডারি ইনফার্টিলিটি বলে৷ এ ক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্বামীর শারীরিক কোনও সমস্যা থেকে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে৷
পুরুষের বন্ধ্যাত্বর শারীরিক কারণ:
১. স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ায় বীর্যক্ষরণ না হওয়া
২. অর্কাইটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ
৩. সাধারণ স্বাস্থ্যের অবনতি
৪. অণ্ডকোষের সমস্যায় অপারেশন হলে
৫. সেক্স ট্রান্সমিটেড ডিজিজ
৬. হার্নিয়া
৭. ভেরিকোসিল
৮. আনডিসেনডেড টেসটিস
৯. দীর্ঘদিন কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া বা টাইফয়েডে ভুগলে
১০. শুক্রবাহী নালী বন্ধ হয়ে যাওয়া
১১. হরমোনের গোলযোগ
১২. কিছু মানসিক সমস্যা
১৩. ক্যানসারে রেডিও ও কেমোথেরাপি নিলে
পুরুষ কখন দায়ী:
১. সিমেন অ্যানালিসিসে শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫-২০ মিলিয়ন হলে নর্মাল পদ্ধতিতেই সন্তান আসে৷ ১০ মিলিয়নের নিচে হলে স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান সাধারণত আসে না৷ তখন IVI করতে হয়৷
২. ১০ মিলিয়নের কম হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই IVF-এর প্রয়োজন হয়৷
৩. একজন পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি এবং গুণগত মানের উপরই প্রেগন্যান্সি আসবে কি না তা নির্ভর করে৷
শনাক্তকরণ:
এক্ষেত্রে মূলত স্পার্ম অ্যানালিসিস করা হয়৷ সাধারণত তিনদিন সহবাস না করে পুরুষের শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয় এবং ল্যাবরেটরিতে তার সংখ্যা, গতি ও গুণগত মান নির্ধারণ করা হয়ে থাকে৷
চিকিৎসা:
১. প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দেন৷
২. ওষুধে কাজ না হলে তখন শুক্রবাহী নালিতে সমস্যা থাকলে তা সার্জারি করে খুলে দেওয়া হয়৷
৩. প্রেশার, সুগার ও কোলেস্টেরলের সঠিক চিকিৎসা করা৷
৪. পর্যাপ্ত শুক্রাণু যদি টেস্টিসে উৎপন্ন হয় কিন্তু বাইরে নির্গত হতে না পারলে ‘Tesa icsi’ করে শুক্রাণু বাইরে আনা হয়৷
৫. এরপর সেই শুক্রাণু সরাসরি মহিলার জরায়ুতে ইনজেক্ট করা হয় IVI৷
৬. IVI-তে যদি প্রেগন্যান্সি না আসে কিংবা কোনও শুক্রাণুই সংগ্রহ করা না গেলে চিকিৎসক স্পার্ম ডোনারের সাহায্যে IVF পদ্ধতিতে প্রেগন্যান্সি আনার চেষ্টা করেন৷
যোগ্যতম স্পার্ম ডোনার:
১. স্পার্ম ডোনারকে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে এবং অবশ্যই সাবালক হতে হবে
২. তাঁর পরিচিতি গ্রাহকের কাছে সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়
৩. ভাবী বাবা-মা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী (গায়ের রং, উচ্চতা, স্কিন এবং আইরিশ কালার) স্পার্ম ডোনারের কাছ থেকে নিতে পারেন৷
সমস্যা এড়িয়ে বাবা হতে গেলে:
১. পুরুষাঙ্গের গোড়ায় যে ফোরফিন থাকে তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে
২. যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকুন
৩. মোবাইলের রেডিও ফ্রিকোয়েন্স শুক্রাণু নষ্ট করে৷ তাই সেটি প্যান্টের পকেটে না রাখাই ভাল
৪. ধূমপান ও মদ্যপান ছাড়ুন
৫. প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন
৬. দেরিতে সন্তান প্ল্যানিং করলে বিয়ের আগেই সিমেন অ্যানালিসিস করে শুক্রাণুর অবস্থা দেখে নেওয়া উচিত
৭. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
৮. হেলদি ডায়েট মেনে চলতে হবে
৯. সঠিক পদ্ধতিতে সহবাস করা উচিত
১০. কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
আরও জানতে যোগাযোগ করুন: ডা. শিউলি মুখোপাধ্যায়, ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ, মুখার্জি ফার্টিলিটি সেন্টার, 9874064710। অথবা ক্লিক করে পড়ে নিন
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.