অসুখ বলে আসে না। এ কথা যেমন সত্যি তেমন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোগ আগে থেকেই জানান দেয় বাহ্যিক লক্ষণে। আজকের গাফিলতি হতে পারে আগামীর অশণি সংকেত। সতর্ক করলেন মেডিক্যাল অঙ্কলজিস্ট ডা. তন্ময় মন্ডল।
কিছু কিছু ক্যানসারের (Cancer) বাহ্যিক প্রকাশ থাকে। কোনও রকম আলসার বা ঘা, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। যেগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যানসার বলে মনেই হয় না। ফলত, সেই ছোট একটা সমস্যা, উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে পাকতে পাকতে ক্যানসারের ভয়ানক পর্যায়ে উপনীত হয়। তখন রোগ ধরা পড়লেও হয়তো আর কিছু করার থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখা দিলে সেক্ষেত্রে অহেতুক অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করে যথার্থ চিকিৎসা দরকার। না হলে হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনার সমান।
যা নিয়ে অবহেলা নয়
তামাকদ্রব্য সেবনে- এদেশে ওরাল ক্যানসারে আক্রান্তের হার মারাত্মক বেড়েছে। তামাকজাত দ্রব্য, পান, সুপারির নেশা এক্ষেত্রে দায়ী। মুখের ভিতরে কোনও রকম ছোট ক্ষতও অবহেলায় মারাত্মক হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওরাল ক্যানসার প্রি-ম্যালিগন্যান্সি থেকে ম্যালিগন্যান্সিতে যায় শুধুমাত্র অবহেলার কারণে। মুখের ভিতরে কোনও ছোট ঘা হলে সেটায় অ্যান্টিফাংগাল ওষুধ বা আয়ুর্বেদিক টোটকা ব্যবহার না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেমন জরুরি তেমনই সমস্যা হলে পান-মশলা বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। তবেই গোড়াতেই রোগকে আটকানো যায়।
ধূমপান- পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও এখন নেশাগ্রস্ত। এটা সকলেই জানেন যে সিগারেট ক্যানসারের কারণ, তা সত্ত্বেও এই নেশায় আসক্ত অল্পবয়সি থেকে বয়স্করা। এটা আরও মারাত্মক। এমনকী, দেখা যায়, কাশি হচ্ছে, হয়তো শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও কিন্তু ধূমপান করেন। এতে করে সমস্যা আরও ভয়ানক হয়। ফুসফুস ক্যানসারের অন্যতম কারণ এই বদঅভ্যাস।
গ্যাস্ট্রিকে ভুগলে- বাঙালির যে কোনও পেটের ব্যথা, কোমরে ব্যথা বা তলপেটে ব্যথা হলেই মনে করেন গ্যাসের ব্যথা। আর নিজের মতো হজমের, গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে সেই ব্যথা কমিয়ে রাখা, খাল কেটে কুমির ডেকে আনতে যথেষ্ট। কেন? কারণ গ্যাস হওয়া মানেই যে সেটা সাধারণ ব্যাপার তা নয়। অনেকদিন ধরে এমন হতে থাকলে তা গ্যাসট্রিক আলসারের লক্ষণ। আলসারের প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। তখনই পরীক্ষা করে দেখা দরকার সেই আলসার ক্যানসারাস নাকি নন-ক্যানসারাস। স্টম্যাক ক্যানসারের পূর্বাভাস হতে পারে।
আরও একটা ব্যাপার রয়েছে। ওভারিয়ান ক্যানসার (Cancer Prevention) হলে সেটা একেবারে চুপচাপ থাকে। তার কোনও প্রকাশ থাকে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ একটি লক্ষণ হল দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যা। ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা থাকে, পেটে জল জমে ওভারিয়ান ক্যানসারের অ্যাডভান্স স্টেজে। তাই এই লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছু করা উচিত নয়।
স্তনে কোনও অস্বস্তি- এদেশে তথা এরাজ্যে মহিলারা আজও নিজেদের ব্যাপারে উদাসীন। গোপনাঙ্গে বা স্তনে কোনও সমস্যা হলে গোপন করে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। জীবন আগে। রোগ নিয়ে লুকোচুরি আজকের দিনে মূর্খতারই পরিচয়। স্তনে কোনও রকম শক্ত টিউমার, নিপল এর কোনও রকম পরিবর্তন বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জড়িবুটি, সনাতনী চিকিৎসার দ্বারস্থ না হয়ে সঠিক চিকিৎসায় বশবর্তী হতে হবে।
মলের সঙ্গে রক্তপাত- অনেকেই এমন হলে অর্শের সমস্যা মনে করেন। কোষ্ঠকাঠিন্য বা অর্শের নানা রকম চিকিৎসা করাতে থাকেন। এটা আরও মারাত্মক। নিজে থেকে এক্ষেত্রে কিছু সিদ্ধান্ত না নিয়ে, কোনও ওষুধ না খেয়ে সরাসরি উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ কোলন ক্যানসার এভাবেই প্রাণসংশয় ডেকে আনে। এছাড়াও যাঁদের ক্যানসারের পারিবারিক হিস্টি রয়েছে তাঁদের কোনও সমস্যা না থাকলেও ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কারণ, চিকিৎসক অনেক কিছু বিশ্লেষণ করে তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে কি না সেটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করে সেই মতো চিকিৎসা বা জরুরি স্ক্রিনিং টেস্ট করার পরামর্শ দেন। কিছু না করে বসে থাকার কোনও মানে নেই। সাবধানতাই ক্যানসার প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।
পরামর্শ- 9073361042
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.