ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: খোদ কলকাতায় বসে নিম্নমানের দুধের গুঁড়ো মিশিয়ে নামী ব্যান্ডের নকল দুধ তৈরি করে বিক্রির অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় বুধবার সকালে বড়বাজারের রাজাকাটরার নেতাজি সুভাষ রোডের একটি গোডাউন থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করল এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। ধৃতদের নাম সুনীল তাঁতি (৪২) ও অরূপ ভাদুড়ি (৪০)। ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর নামী কোম্পানির দুধের খালি বাক্স ও স্টিকার-সহ দুধ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রচুর মুনাফার লোভে ধৃতরা ভেজাল দুধ তৈরি করে প্রচুর মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করত। এই ঘটনায় বড়বাজার থানায় সুনীল তাঁতি, অরূপ ভাদুড়ি ও দিলীপ সাহার নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুজন ধরা পড়লেও পলাতক দিলীপ সাহা। তার সন্ধানে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত আছে ধৃতদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
অন্যদিকে, প্লাস্টিক পনিরের আতঙ্ক ছড়াল বালুরঘাটে। এর আগে প্লাস্টিক চাল, দুধ এবং ডিমের আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতে এবার নয়া আতঙ্কে শহরবাসী। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের বিশ্বাসপাড়ার যুব সংঘ ক্লাব এলাকার একটি বাড়িতে পনির নিয়ে এই আতঙ্কের সূত্রপাত।
স্থানীয় বাসিন্দা শিবা দে রবিবার রাতে বালুরঘাটের বড়বাজার থেকে পনির কিনে নিয়ে যান বাড়িতে। সোমবার বাড়িতে পনিরগুলি রান্নায় চাপানো হয়। কিন্তু, দেখা যায় পনির সেদ্ধ হচ্ছে না। এদিকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাবে বলে আধা সেদ্ধ পনিরের রান্না দিয়ে ভাত খেয়েই নেন শিবাবাবুর ভাগনে। আর এরপরই শুরু হয় পেটের সমস্যা। অবশেষে ওষুধ খেয়ে পরীক্ষায় দিতে যায় সে। পরে সন্দেহজনক সেই পনির আগুনে ধরলে তা পুড়ে প্লাস্টিকের মতো লম্বা হয়ে যায়। এতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শিবাবাবুর পরিবার। এই দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এলাকাজুড়ে।
এপ্রসঙ্গে শিবা দে জানান, তাঁদের ধারণা পনিরগুলি প্লাস্টিকের। কেন না এই পনিরের তরকারি খেয়েই বার তিনেক বাথরুমে যেতে হয় তাঁর ভাগনেকে। পাশাপাশি পনির পোড়ালে প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ বের হয়। পনিরগুলো তিনি বালুরঘাটের বড়বাজারের ফুটপাত থেকে কিনেছিলেন। বর্তমানে প্রশাসন যাতে এই ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নেয় এই দাবি তাঁর।
কিছুদিন আগেই রোজকার মতো গোয়ালার কাছ থেকে লিটার খানেক দুধ নিয়েছিলেন বালুরঘাট পুরসভার প্রাচ্য ভারতী এলাকার বাসিন্দা আদিত্যশংকর রায়ের পরিবার। কিন্তু, গরম করতে গিয়েই ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে রাবারের মতো হয়ে যায় দুধ। সন্দেহ হওয়ায় তা আগুনে ধরে তারা। আগুনের সংস্পর্শে আসতে না আসতেই তা গলতে গলতে প্লাস্টিক পোড়ার মতো দুর্গন্ধ বেরতে থাকে। জানাজানি হতেই ছুটে আসেন উৎসাহী পড়শিরা। নিমেষে ছড়িয়ে পরে প্লাস্টিক দুধের আতঙ্ক।
বালুরঘাট বড়বাজারে রয়েছে একটি দুধ পট্টি। বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ড্রামে ভরতি করে দুধ আসে এই পট্টিতে। সকাল থেকে গোয়ালা ও ব্যবসায়ীরা ওই বাজারের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রয় করেন। এইরকম একজন গোয়ালার কাছ থেকেই লিটার খানেক দুধ নিয়েছিলেন পেশায় সরকারি কর্মচারী আদিত্যশংকর রায়। পরিবারের সদস্য অরুণা রায় জানান, দুধ নষ্ট হয়ে গেলে ছানা হয়। এক্ষেত্রে পুরো উলটো। দুধ গরম করতেই তা দানা দানা হয়ে যায়। যত লম্বা করা হয়, ততই লম্বাটে হয়ে বাড়তে থাকে। এতেই প্লাস্টিক দুধের আতঙ্ক ছড়ায় তাঁদের মধ্যে। বিষয়টি বালুরঘাট পুরসভায় জানায় রায় পরিবার। পাশাপাশি জেলা খাদ্যসুরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তাঁরা। বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান রাজেন শীল জানান, বিষয়টি তাঁদের কানে এসেছে। খাদ্যসুরক্ষা দপ্তরের এক্তিয়ারভুক্ত হলেও তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
এই ঘটনার মাস চারেক আগেও একবার এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বালুরঘাট শহরে। সেবার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্মী বালুরঘাট বড় বাজারের দুধ পট্টি থেকে দুধ কিনে এনে একই ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। তবে প্যাকেট দুধ নয়, খোলা বাজারের দুধে ভেজাল হওয়ার আশঙ্কা ছিল সবমহলে। এর আগেই অবশ্য নড়েচড়ে বসেছিল জেলা খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর। এমন দুধের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। প্লাস্টিক বা ওই জাতীয় কিছু না মিললেও ভেজাল হিসেবে চিহ্নিত হয় ওই দুধের নমুনা। ইউরিয়া ও স্টার্চ মেশানোর বিষয় সামনে আসে। তখন জরিমানা করা হয়েছিল দুধ বিক্রেতাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.