মলয় কুণ্ডু: রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই পাহাড়ে স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি তথা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক। এনিয়ে আপত্তি তুলে এবং প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের কথা জানতে পেরে তিনি বিস্মিত এবং ব্যথিত। জিটিএ-র আওতায় থাকা দার্জিলিং পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স এলাকার আইনশৃঙ্খলা, শান্তি বজায় রাখা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। সেখানকার স্থায়ী সমাধানও ত্রিপাক্ষিক বিষয়। তাই রাজ্য প্রশাসনকে না জানিয়ে সেখানে কেন একজন মধ্যস্থতাকারী বা ইন্টারলোকুটার নিয়োগ করা হল? সেই প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন প্রধানমন্ত্রীকে এমন চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী? আসুন, তার প্রেক্ষাপট বুঝে নেওয়া যাক। সদ্যই দেশের প্রাক্তন উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংহকে দার্জিলিং ও তরাই-ডুয়ার্সের ইন্টারলোকুটর বা মধ্যস্থতাকারীর (সমন্বয় রক্ষাকারী) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সমস্ত এলাকায় গোর্খাদের দীর্ঘদিনের দাবিদাওয়াগুলি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয়েছে রাজস্থান ক্যাডারের এই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তাকে। তিনি একজন অভিজ্ঞ জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কিন্তু এই নিয়োগের আগে নবান্নের সঙ্গে নয়াদিল্লির কোনও আলোচনা হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত বলে মনে করছেন তিনি। এতে পাহাড়ে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর অনুরোধ, পঙ্কজ কুমার সিংহর নিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে তা প্রত্যাহার করা হোক।
Here goes my letter to the Hon’ble Prime Minister of India, communicating my surprise and shock at the unilateral appointment by the Government of India of an interlocutor for the issues relating to Gorkhas in Darjeeling Hills, Tarai and Dooars regions of West Bengal.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial)
আসলে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি গোর্খাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্স কিংবা উত্তরবঙ্গের আরও কিছুটা অংশ নিয়ে আলাদা গোর্খাল্যান্ড ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কার্যত অসম্ভব। সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ শিডিউলের আওতায় গোর্খাদের দাবি, আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন। বিজেপিও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গোর্খাদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে আশ্বাস দিয়ে এসেছে প্রতি নির্বাচনের আগে।সেই আশ্বাসে ভর করে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি নির্বাচনে বিজেপি সাংসদকে জিতিয়ে এনেছেন পাহাড়বাসীও। কিন্তু প্রত্যাশামতো ফল মেলেনি। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের তরফে পাহাড়ের ঢালাও উন্নয়ন এবং বিভিন্ন জনজাতির জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করে তাঁদের দাবিদাওয়া পূরণ। এই পরিস্থিতিতে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ নিতান্তই পাহাড়কে উসকে দিতে এক রাজনৈতিক চাল বলে মনে করছে শাসক শিবিরের একটা বড় অংশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.