ফাইল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলায় কথা বললেই ‘রোহিঙ্গা’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে এবার সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলাভাষায় কথা বললেই রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছে। কোথা থেকে এল রোহিঙ্গা? তারা তো মায়ানমারের লোক। বাংলা জানবে কী করে?’’
বিজেপির শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা ও বাংলাভাষায় কথা বললে অসমে বিদেশি চিহ্নিত করার যে ফতোয়া জারি করেছিলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন মমতা। ২১ জুলাই ঘোষণা হবে আন্দোলন কর্মসূচি।
বিজেপি মমতার মিছিলে কোণঠাসা হয়ে দাবি করেছে, বাংলায় রোহিঙ্গা রয়েছে। বৃহস্পতিবার নিউটাউনে এক অনুষ্ঠানে এর জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাভাষা কথা বলা লোকের সংখ্যা এশিয়ায় দ্বিতীয়। সারা বিশ্বে পঞ্চম। সেই ভাষার অপমান আমরা মানব না। ১৭ লাখ রোহিঙ্গা আছে বলছে। এরা কিছু জানেই না। রোহিঙ্গারা কোথায়? তাদের নাম-ঠিকানা দাও। তারপর অভিযোগ করো।’’
বস্তুত, ৭-৮ বছর আগে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ২৮ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। কক্সবাজারের টেকনাফে তাদের ক্যাম্প রয়েছে। তাদের ভাষা, চেহারা কোনওটাই বাঙালিদের মতো নয়। কিন্তু প্রচার করা হয় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতেও ঢুকেছে। রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ হাজারের মতো। তাদের একটি বড় অংশকে ক্যাম্প করে রাখা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। চেহারায় তারা বাঙালিদের মতো নয়। ভাষাও বাংলা নয়। ফলে রোহিঙ্গারা চাইলেই বাংলা বলবে অথবা বাঙালি সাজবে এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। এই তথ্যকে হাতিয়ার করে এদিন বিজেপিকে তুলোধোনা করেন মমতা। বিশেষ করে নাম না করে দুষেন বিরোধী দলনেতাকে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নোটিফিকেশন করে বাঙালি খেদার মদত দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “এখন নয়, ১৯৭১ সালের পর যারা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশ থেকে এসেছিল, তারা এখন ভারতের নাগরিক। বলছে ১৭ লক্ষ নাম কেটে দেবে। তুমি কে হে হরিদাস পাল! যারা ভোট দিয়েছে, তারা সবাই ইন্ডিয়ান সিটিজেন। জাত, ধর্ম দেখার দরকার নেই। তাঁরা ভারতীয়। বাংলায় কথা বললেই সে বাংলাদেশি নয়।’’
প্রসঙ্গক্রমে মমতা এও উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের পালাবদলের জেরে শেখ হাসিনা-সহ বেশ কিছু নেতা আওয়ামি লিগের নেতা কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন। মমতা কারও নাম বা দলের উল্লেখ না করলেও একথা বলেন, ‘‘এখন তো রাজনৈতিক কারণে অনেকে এসে এখানে রয়েছে। বৈদেশিক ব্যাপার রয়েছে। আমরা কি তা নিয়ে কিছু বলতে গিয়েছি?’’
এদিন মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলার বাসিন্দা যাঁরা, তাঁদের নাম তিনি কোনওভােবই কাটতে দেবেন না। তাঁর সাফ কথা, “যারা বাংলায় বাস করে বাংলার নাগরিক, কেন তুমি তার নাম কাটবে? সে কোন কাস্ট কোন ক্রিড কোন রিলিজিয়ন, কোন স্টেট তোমার দেখার দরকার নেই। দে আর ভেরি মাচ ভোটারস অফ বেঙ্গল।’’
মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বই সব, সে কথাই স্মরণ করিেয় দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করি না। মানুষের সব চেয়ে বড় পরিচয় তাঁর পদবি নয়, ধর্ম নয়, তাঁর মনুষ্যত্ব। সে একটা মানবিক প্রাণ। আমি আমার পদবি লিখিই না ফাইলে। তার কারণ আমি মনে করে আমার পদবি হচ্ছে আমার মনুষ্যত্ব।”
মমতার আরও সংযোজন, মানবিক প্রাণ যেন যেন দানবিক না হয়। সব মানুষেরই একটা ধর্ম থাকবে। পদবি থাকবে, একটা কাস্ট থাকবে। আমি সব ভাষা কে সম্মান করি। কিন্তু আজ একটা নোটিফিকেশন করে বলছে বাংলা ভাষায় কথা বললেই ডিপোর্টেশন করে দাও। কেন? কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘রাজনীতি করতে গেলে প্রথমে আপনার মনটাকে ঠিক করতে হবে। রাজনৈতিক লোকেরাই সরকার চালায়। যদি তাঁরা পলিটিক্যালি সাউন্ড না হন, তাঁরা কখনওই ভালো সরকার চালাতে পারেন না। সরকার চালাতে গেলে মগজে মরুভূমি হলে হবে না।’’ ভিন রাজ্যে বাংলার মানুষকে বাংলাদেশি দাগিয়ে দিয়ে আটকে রাখা প্রসঙ্গে ফের সরব হন মমতা। বলেন, ‘‘যাদের নিয়ে যাওয়া হয় তাদের স্কিল মজদুর। তাঁরা না থাকলে কাজ হবে না বলে নিয়ে যায়। দয়া করে নয়।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.