Advertisement
Advertisement

Breaking News

Samik Bhattacharya

দিলীপ-সুকান্ত-অগ্নিমিত্রা নন, ছাব্বিশে শমীককেই কেন বঙ্গের কাণ্ডারি বাছল বিজেপি?

শমীককে সভাপতি বাছার সম্ভাব্য কারণ।

BJP elected Samik Bhattacharya as WB state BJP president, this is why
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:July 3, 2025 5:07 pm
  • Updated:July 3, 2025 5:33 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বঙ্গ বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত শমীক ভট্টাচার্য। ‘বেলাগাম’ দিলীপ ঘোষ, ‘অতি মুখর’ অগ্নিমিত্রা পল, বা ‘ম্রিয়মাণ’ সুকান্ত মজুমদার নয়। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে সুকান্ত, শুভেন্দু বা দিলীপ ঘোষদের তুলনায় লো-প্রোফাইল শমীককে বেছে নিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু কেন? অমিত শাহ-জেপি নাড্ডাদের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে একাধিক ফ্যাক্টর কাজ করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

আসলে এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ‘গ্রুপবাজি’। বিজেপিতে অন্তত গোটা তিনেক বড় নেতার গোষ্ঠী সক্রিয়। এর বাইরেও মেজো, ছোট একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। কোন গোষ্ঠীর নেতাকে সভাপতি হিসাবে বেছে নেওয়া হবে, সেটা কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য একেবারে লাখ টাকার প্রশ্ন ছিল। কারণ কোনও এক গোষ্ঠী থেকে সভাপতি বাছলে বাকিদের মনঃক্ষুণ্ণ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শমীক সর্বজনবিদিত মুখ। তাঁকে সভাপতি হিসাবে পেয়ে সব গোষ্ঠী হয়তো উচ্ছ্বসিত নয়, কিন্তু এটাও সত্যি যে শমীকের সভাপতি পদে বিশেষ আপত্তিও ছিল না কোনও গোষ্ঠীর। আসলে শমীকের সবচেয়ে বড় গুণ হল, দলের অন্দরে বিশেষ শত্রু নেই তাঁর। হয়তো দলের অনেকেই শমীকের উন্নতিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পালটা শমীক তাঁদের সঙ্গে শত্রুতা করতে যাননি। বলা হয়, রাজনীতিতে তিনিই সফল যিনি শত্রুকে নিজের কাছে রাখতে পারেন। সেই কাজটা শমীক ভালো পারেন বলেই বিজেপির অন্দরে জনশ্রুতি। সম্ভবত সে কারণেই রাজ্য বিজেপিতে সকলের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ শমীককে ভরসা করেছেন মোদি-শাহ থেকে নাড্ডারা।

শমীকের প্রতি অন্য একটা ফ্যাক্টর গিয়েছে সেটা হল দলের প্রতি নিষ্ঠা। ১৯৭১ সাল থেকে হাওড়ায় আরএসএসের স্বয়ংসেবক শমীক। ১১ বছর যুব মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনবার। বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে দলের রাজ্য মুখপাত্র, কোর কমিটির সদস্য, রাজ্যসভার সাংসদ। রাজ্য বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হরিপদ ভারতী থেকে সুকান্ত মজুমদার পর্যন্ত সকলের সময়কালই দেখেছেন তিনি। দলের একেবারে দৈনদশা থেকে উনিশের সাফল্য সবেরই সাক্ষী থেকেছেন তিনি। কখনও দল ছাড়েননি। শমীকের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, একাধিকবার দলত্যাগের লোভনীয় প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বিজেপি ছাড়েননি।

শমীকের ধীরস্থির এবং বাগ্মি ব্যক্তিত্বও তাঁর জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসাবে কাজ করেছে। ঠান্ডা মাথা, সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতা, সুবক্তা, শিক্ষিত, হিন্দি-ইংরেজিতে সাবলীল তিনি। দীর্ঘদিন দলের প্রধান মুখপাত্র হিসাবে কাজ করেছেন। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। কোনও আলটপকা মন্তব্য করে সমালোচনায় জড়ান না, কথাবার্তায় ভদ্রতার ছাপ রয়েছে। আসলে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই ‘শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত’ নেতার খোঁজ করছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারণা, ২০২১-এ দলের ফল প্রত্যাশামতো না হওয়ার অন্যতম কারণ শহুরে মধ্যবিত্ত ভোটারদের কাছে পৌঁছতে না পারা। দিলীপ ঘোষের পর সেই উদ্দেশ্যেই শিক্ষিত মুখ হিসাবে সুকান্ত মজুমদারকে সভাপতি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। সেকারণেই সম্ভবত মুখ বদলে আরও একবার চেষ্টা করতে চাইছেন শাহ-নাড্ডারা। শমীককে বাছার আরও একটি কারণ তাঁর কলকাতা কেন্দ্রিক হওয়া। সুকান্ত মজুমদার বা দিলীপ ঘোষরা দলের কাজকর্ম চালাতেন জেলা থেকে। যা অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার। তাছাড়া সার্বিকভাবে দলের ‘ভাবমূর্তি’ মেরামত করারও একটা প্রচেষ্টা রয়েছে। একটা বড় অংশের বাঙালিদের মনে বিজেপি সম্পর্কে নেতিবাচক, উগ্র হিন্দুত্ববাদী এবং ‘বাঙালি বিরোধী’ একটা ভাবমূর্তি তৈরি করে ফেলেছে শাসকদল। দিলীপ ঘোষ বা শুভেন্দু অধিকারীদের উগ্র ভাষণ, সেই ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতেই আরও সাহায্য করেছে। শমীককে সভাপতি হিসাবে বাছলে সেই চক্রব্যুহ থেকে বেরোনো যাবে বলে মনে করছে বঙ্গ বিজেপি। 

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, শমীককে সভাপতি করে দিলে দলের আদি-নব্য দ্বন্দ্ব অনেকটা মিটতে পারে। শমীক নিজে দলের আদি নেতা হলেও নব্য নেতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ নয়। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই দলের প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব নিয়ে বার্তা দিয়েছেন তিনি। এ দ্বন্দ্ব বরদাস্ত করবেন না, সকলকে নিয়েই চলবেন এমনটা স্পষ্ট করে দিয়ে শমীকের বক্তব্য, “সংঘবদ্ধভাবে বিজেপি লড়াই করবে। পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যাঁরা ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছেন, তাঁরাও থাকবেন। আর যাঁরা নতুন এসে সক্রিয়ভাবে বিজেপি করছেন তাঁরাও থাকবেন। পুরনোদেরও বুঝতে হবে সংগঠনে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ নিতে হয়। কুমোরটুলি থেকে অর্ডার দিয়ে নেতা কর্মী আনা যায় না। নতুন পুরনো বিতর্ক কিছু থাকবে না।”

শমীককে সভাপতি পদে বাছাই করার অন্যতম কারণ, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক। দিলীপ ঘোষ নিষ্ক্রিয়, সুকান্ত মজুমদার রাজ্য বিজেপি সভাপতি পদ খোয়ানোর পর গোটা রাজ্যে কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবেন, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। ফলে এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে শুভেন্দুকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আবার শুভেন্দু নিজে বিরোধী দলনেতা। পরিষদীয় রাজনীতির লোক। বিজেপিতে পরিষদীয় রাজনীতির লোকদের সভাপতি পদে বসানো হয় না, ওই পদে বসানো হয় সংগঠনের লোকেদের। ফলে শুভেন্দুকে সভাপতি করার কথা ভাবেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বরং তাঁর পছন্দের কাউকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  আর শুভেন্দু শমীকের নামে আপত্তি জানাননি। তাছাড়া তাঁর সংঘের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যোগাযোগও ফ্যাক্টর হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে শমীক, শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ সংঘ নেতা। বঙ্গ বিজেপিতে এই সমন্বয় বিরল। সেটাও তাঁর সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার অন্যতম কারণ। 

কিন্তু যে ফ্যাক্টরের কথা ভেবেই বিজেপি শমীককে সভাপতি বেছে নিয়ে থাকুক না কেন, তাঁর জন্য সামনের পথ মোটেই মসৃণ হবে না। কারণ, ভাবমূর্তির দিক থেকে তিনি যতই ‘স্বচ্ছ্ব’ ও ‘ভদ্র’ নেতা হোন না কেন, তৃণমূল স্তরে তাঁর জনপ্রিয়তা কতটা, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার দলের অন্দরের সংঘাত সামলানোর মতো ব্যক্তিত্ব তাঁর আছে কিনা, রাজ্যের সব স্তরের সংগঠনের নেতা কর্মীদের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি কতটা? সেসব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সমস্যা হল, শমীককে লড়তে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আবার হাতে সময়ও বিশেষ নেই।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement