গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: রাত পেরোলেই মহালয়া। হিন্দু ধর্মের রীতি মেনে এই দিনে জলে নেমে পূর্বপুরুষদের জলদান করা হয় তর্পণের মাধ্যমে। কিন্তু জলে নামা যাবে তো? ঘোর চিন্তায় বাঙালি। নেপথ্যে কেরালায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই মৃত্যুর পিছনে, ‘নিগ্লেরিয়া ফোলেরি’ নামে এক অ্যামিবা রয়েছে। মূলত অপরিষ্কার জমা জলে, যেমন নোংরা পুকুরে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে সুইমিং পুলের জলে ক্লোরিন না মেশানো হলে সেখানে এই অ্যামিবা জন্মাতে পারে। ইতিমধ্যেই কেরালায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ‘মস্তিষ্ক খেকো’ অ্যামিবায়। বাংলাতেও বহু মানুষ অ্যামিবায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে এখনই আতঙ্কের কিছু দেখছেন না চিকিৎসকরা। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেছেন, ”কেরালার অ্যামিবার সঙ্গে বাংলার অ্যামিবার পার্থক্য রয়েছে।” তাঁর কথায়, ”আতঙ্কিত হবেন না। নদীর জলে এই অ্যামিবা জন্মায় না। যে জলে স্রোত রয়েছে সেখানে এই অ্যামিবা দেখা যায় না। ফলে যারা নদীতে তর্পণ করবেন তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” তবে পাড়ার নোংরা পুকুরে না নামাই শ্রেয়, বলছেন চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, বদ্ধ, অপরিষ্কার ও দূষিত জলাশয়কে ব্লিচিং পাউডার ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আর এভাবেই এই সংক্রমণ এড়ানো যাবে বলে মত তাঁর।
ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, ”বাংলার নোংরা জমা জলে যে অ্যামিবা পাওয়া যায় তার বংশ, প্রজাতি দুটোই কেরালার চেয়ে আলাদা। সময়মতো চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খেলে তা ঠিক সময়ে সেরেও যায়। মারণক্ষমতাও কম এই অ্যামিবার।” কিন্তু কেরলে ত্রাস হয়ে ওঠা নাগলেরিয়া ফাউলেরি বা ব্রেন ইটিং অ্যামিবা ছোঁয়াচে? ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, ”এই অ্যামিবার সংক্রমণে অসুখ হলেও তা ছোঁয়াচে নয়। মানুষ থেকে মানুষে এই রোগ ছড়ায় না।” তাঁর কথায়, ”আমাদের রাজ্যের ‘কেস’গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাকান্থামিবা সংক্রমণ। এটা গ্রানুলোম্যাটাস অ্যামিবিক এনসেফালাইটিস (জিএই) তৈরি করে। এটি সাধারণত ক্রনিক ইনফেকশন। সময়মতো রোগ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। সাধারণত দূষিত বদ্ধ জলে এদের বাস। তাই এরকম জলে স্নান না করাই উচিত।”
বলে রাখা প্রয়োজন, মগজখেকো অ্যামিবার থাবায় বাংলায় গত দু’বছরে ২৫ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও ৭০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই বছর দুজনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। এই বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক আরও জানিয়েছেন, পুকুর ডোবার মতো বদ্ধ জলাশয়ে এই অ্যামিবার সন্ধান মেলে। তাই এই সব জায়গায় স্নানের ক্ষেত্রে সতর্ক হতেই হবে। কারণ, একবার এই প্রোটোজোয়া সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইডে চলে গেলে মগজ ধ্বংস শুরু হবে। সেক্ষেত্রে যে অংশের মগজ খাবে এই অ্যামিবা সেই অংশ শরীরের যে জায়গা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানেই অস্বাভাবিকতা দেখা দেবে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে শরীর। চিনতে না পারা, বুদ্ধি নষ্ট হয়ে যাওয়া, খিঁচুনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই রোগ নিয়ে নিশ্চিত হতে গেলে লাম্বার পাঞ্চার করে সিএসএফ নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। তারপর ওষুধ খেলে সুস্থ হয়ে যাবে।
একই কথা শোনা গিয়েছে ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডাঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথাতেও। তাঁর কথায়, “এই বিষয়ে আমাদের রাজ্যের মানুষের এখনই উদ্বেগের কিছু নেই। যেহেতু নাগলেরিয়া ফাউলেরি নামক আদ্যপ্রাণীটির চিকিৎসা আছে, সময় মতো চিকিৎসা করলে আক্রান্তকে সারানো যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.