বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, আহমেদাবাদ: মা চিকিৎসক পড়ুয়াদের জন্য চা বানাচ্ছিলেন। ১৫ বছরের আকাশ তখন দুর্ঘটনাস্থলের ফুটপাথে খাটিয়ায় বসে। আচমকাই আছড়ে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমান। বিরাট বিস্ফোরণ ও আগুন। চোখের সামনে ছেলেকে জ্বলতে দেখে ছুটে গেলেন মা। ততক্ষণে সব শেষ। আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেল আকাশ। মা এখন আধপোড়া অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অন্যদিকে, সরলাবেন ঠাকোর মেডিক্যাল ছাত্র এবং অধ্যাপকদের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করতেন। তাঁর তৈরি গরম রুটি, তরকারি এবং গুজরাতি সুস্বাদু খাবার কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিত ছেলে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে আমেদাবাদের বি জে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের মেসে বিমান আছড়ে পড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়। ছেলে এখন খুঁজছেন মা এবং দু’বছরের মেয়ের মৃতদেহ। দুর্ঘটনার সময় ঠাকুরমা ও নাতনি দু’জনেই কলেজের হস্টেলে একসঙ্গে ছিলেন।
লরেন্স ড্যানিয়েল। বাবার শেষকৃত্য করতে এসেছিলেন। লন্ডনে স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে ফেরা হল না। মা মারিয়ম বুক চাপড়ে ছেলের খোঁজে বি জি হাসপাতালের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন। এমনই খণ্ডচিত্র আমেদাবাদের মেঘানিনগরে। বিমানের যাত্রী, পাইলট, ক্রু সদস্য ছাড়াও অসংখ্য স্থানীয়ের মৃত্যু হয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে মৃতের সংখ্যা নিয়ে। মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াবে বলে স্থানীয়দের ধারণা। চিকিৎসক পড়ুয়ারাই তার পড়াশোনার দায়িত্বভার তুলে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছেই পড়ত সপ্তম শ্রেণির আকাশ। সেই সঙ্গে মায়ের সঙ্গে ডাক্তার কাকুদের চা খাওয়াত। চলত খুনসুটি, পড়াশোনা নিয়ে হাজারো কথা।
কিন্তু বৃহস্পতিবার এক লহমায় থেমে গেল আকাশের জীবনযুদ্ধ। ডাক্তার কাকুদের সঙ্গে সে-ও আগুনে ঝলসে গেল। মায়ের অবস্থাও অতি সঙ্কটজনক। দেওয়ালে কপাল ঠুকতে ঠুকতে আকাশের দিদা জানান, আকাশের বাবা তখন আমেদাবাদের রাস্তায় রিকশা টানছেন। বিস্ফোরণের শব্দ গিয়েছিল তাঁর কানেও। আজানা আশঙ্কায় স্ত্রীর চায়ের দোকানে ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। আকাশের কাকা হাসপাতালে সুরেশকে সান্ত্বনা দিতে দিতে জানান, মৃতদেহ হাতে পাওয়ার পাশাপাশি সুরেশের স্ত্রী কমলকে সুস্থ করে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছেন যাতে কিছু সাহায্য পাওয়া যায় সেই আশায়। এমন বেশকিছু ঘটনার সাক্ষী আহমেদাবাদবাসী।
কারণ এলাকাটি অত্যন্ত ঘিঞ্জি। যে সময়ের ঘটনা, সেই সময় চিকিৎসক পড়ুয়াদের আবাসনের সামনের রাস্তায় পা ফেলা যায় না। রাস্তা পারাপার করতেও হিমশিম খেতে হয়। এমন সময় দৈত্যাকার এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়ায় বহু স্থানীয় মানুষের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সরকারি তরফে মাত্র ২৬৫ জনের মৃত্যু ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সংখ্যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত স্থানীয়দের। মৃত্যুর সংখ্যা লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। আরও অনেক বেশি স্থানীয় মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে সংখ্যা ৫০০ ছাড়াতে পারে। নইলে নিখোঁজ আত্মীয়-পরিজনের ছবি বুকে নিয়ে হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে এত মানুষের দৌড়াদৌড়ি কেন। তাঁদের মধ্যেই ষাটোর্ধ্ব সরলাবেন ও তাঁর দু’বছরের নাতনি আধ্যা। তাঁদের দেহ এখনও মেলেনি। অর্থাৎ, এখনও যে বহু মানুষের খোঁজ মেলেনি, সেই সত্যটাও সামনে এসেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.