সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যখন বাংলা বললেই বাংলাদেশি তকমা দিয়ে শুরু হয়েছে অত্যাচার, ঠিক তখন ‘ভোলবদল’ যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশের। বাংলাদেশ থেকে আসা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলিকে জমির মালিকানা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। শুধু তাই নয়, তাঁরা যাতে সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারেন তেমন জীবনই উপহার দেওয়া হবে।
সোমবার উত্তরপ্রদেশে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পরই ঘোষণা করা হয়েছে, একসময়ের পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের আর অনুপ্রবেশকারী কিংবা অনাগরিক তকমা দেবে না যোগী সরকার। এবার তাঁদের জমিবাড়ির অধিকার দেওয়া হবে। তাঁরা পাবেন দলিল, পাট্টা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালিদের সম্মানের জীবন উপহার দেওয়া হবে। এতদিন এই কাজটি করা যায়নি। এবার সেই ভুল সংশোধন করা হবে।” এই ভোলবদল ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। বাংলায় প্রতিবাদের আগুন তীব্র হতেই যোগী আদিত্যনাথের এই নয়া সিদ্ধান্ত কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
১৯৬০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের রামপুর, বিজনৌর, লখিমপুর খেড়ি, পিলভিটে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবারকে এই জেলায় পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখার পর কৃষি জমি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১০ হাজারের বেশি পরিবার এখনও জমির আইনি মালিকানা পায়নি। একইভাবে আবার পশ্চিমবঙ্গের বহু বাসিন্দা কর্মসূত্রে বহুকাল ধরে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কই নেই। কিন্তু উভয় পক্ষকেই বিভিন্ন সময় একই সুরে হেনস্তা করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, অনেক গ্রামে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলি বছরের পর বছর ধরে জমি চাষ করে আসছে , এমনকি স্থায়ী বাড়িও তৈরি করেছে, কিন্ত তাদের নাম সরকারি ভূমি রেকর্ডে নেই। আর এনিয়েই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে রেকর্ডগুলি অবিলম্বে আপডেট করা হোক। যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “এটি সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবতা এবং জাতীয় দায়িত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত।” যদি তাদের বসতি তৈরি করার জন্য প্রাথমিকভাবে জমি না থাকে, তিনি ওই পরিবারগুলির জন্য বিকল্প প্লটের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন।
অর্থাৎ, সেই ছয় ও সাতের দশকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে যাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়েছেন এবং উত্তরপ্রদেশে বহু বছর ধরে বসবাস করছেন, এবার তাঁদের জমিবাড়ির অধিকার দেওয়া হবে। তাঁরা পাবেন জমিবাড়ির দলিল ও পাট্টা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সিএএ-রও পার্থক্য আছে। কারণ, উত্তরপ্রদেশ সরকার কোনও নির্দিষ্ট সময়কালের কথা বলেনি। কিন্তু সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী ২০১৪ সালের আগে যারা এসেছে, তারাই আবেদন করলে বৈধ নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে। তার পরে যারা এসেছে, তারা নয়। যদিও আধিকারিকদের একাংশেরই দাবি, কারা ১৯৭৫ সালের পরে উত্তরপ্রদেশের মূলত ওই চার জেলার বাসিন্দা হয়েছেন, তা খুঁজে পাওয়া খড়ের গাদায় সূঁচ খোজার মতো কঠিন হবে। সেই সঙ্গে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫-এর মধ্যে যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা উত্তরপ্রদেশে বসতি গড়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। ১৯৭৫ সালের পর থেকে যারা উত্তরপ্রদেশের বাঙালি বাসিন্দা হয়েছেন, তাঁদের ছেঁটে ফেলার কাজ সহজ হবে যোগী প্রশাসনের পক্ষে। এমনিতেই বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে অঘোষিত ‘বাঙালি খেদাও অভিযান’ শুরু হয়েছে। এনিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রবল রোষ তৈরি হয়েছে জনমনেও। আর ঠিক এই আবহে উত্তরপ্রদেশের এই উল্টো পথে হাঁটার পিছনে আসলে কি অন্য কৌশল আছে, সেটাই এখন দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.