Advertisement
Advertisement
UGC

চাঁদ-সূর্যের গতিপথে সময় নির্ধারণ, স্নাতকস্তরের অঙ্কে পৌরাণিক ধ্যানধারণা! বিতর্কে UGC

ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

UGC is walking backwards in the field of education
Published by: Subhodeep Mullick
  • Posted:August 24, 2025 10:35 am
  • Updated:August 24, 2025 10:36 am   

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিকে দেশ ‘ন্যাশনাল স্পেস ডে’ পালন করছে, মঙ্গল গ্রহে পাঠাচ্ছে রকেট, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখছেন ভারতীয় নভশ্চর, মহাকাশে মানুষ পাঠাতে ‘গগনযান’ অভিযান করতে চলেছে। অন্যদিকে, প্রাচীন ঐতিহ্যের নামে মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা চাপিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল। গো-মূত্রের উপকারিতা, গরুর দুধে সোনা থাকার মতো নানা হাস্যকর দাবি করেছেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রেও পিছন পানে তাকাতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নতুন পাঠক্রমের খসড়া প্রস্তাবে স্নাতকস্তরে প্রাচীন ভারতীয় গণিত পড়ানোর কথা বলেছে তারা। সেখানে জায়গা পাচ্ছে সূত্রভিত্তিক পাটিগণিত-বীজগণিত, বৈদিক যুগের শুদ্ধসূত্রের জ্যামিতি, সূর্য-চন্দ্র-তারার গতিপথ ধরে সময় নির্ণয় বা কাল গণনা, এমনকী পঞ্জিকা পঞ্জিকা দেখে শুভক্ষণ (মুহূর্ত) নির্ধারণের প্রক্রিয়াও। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র অধীনে শিক্ষণ ফলাফল ভিত্তিক পাঠ্যক্রম কাঠামোর (এলওসিএফ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খসড়া পাঠ্যক্রমের উপর বিভিন্ন মহলের মত জানতে চেয়েছে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, এই পাঠক্রমে প্রাচীন ভারতীয় গণিতের উপর এত জোর দেওয়া হয়েছে যে, আধুনিক গণিতের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। এই সিলেবাস পড়ে পাস করা ছাত্রছাত্রীরা আইআইটি বা আইআইএসআর-এর মতো প্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের গবেষণায় পিছিয়ে পড়বেন।

Advertisement

২০ আগস্ট জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি সচিব মণীশ যোশী বলেন যে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে প্রস্তাবিত এই পাঠক্রম মডেল কারিকুলাম হিসাবে কাজ করবে। উদ্দেশ্য, পাঠ্যসূচির বিন্যাসে নতুনত্ব আনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আরও নমনীয়তা দেওয়া। গণিতের খসড়া পাঠ্যক্রমটি বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এটি স্নাতক স্তরে একটি ‘মাইনর’ বা অতিরিক্ত কোর্স হিসাবে সূত্র-ভিত্তিক বীজগণিত (গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করে প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতি) শেখানোর প্রস্তাব করেছে। ইউজিসি ভারতীয় বীজগণিতের ইতিহাস এবং বিকাশ, বহুপদী ভাগের ইতিহাস এবং বিকাশ, পরাবর্ত্য যোগয়েত সূত্র (একটি ঐতিহ্যবাহী বৈদিক গণিত কৌশল যার অর্থ ‘স্থানান্তর এবং প্রয়োগ’) ব্যবহার করে পড়ানোর সুপারিশ করেছে। সূর্যসিদ্ধান্ত ও আর্যভট্টীয়মের মতো প্রাচীন গ্রন্থ থেকে সময় মাপার ধারা— যুগ, কল্প, ব্রহ্মবর্ষ, এমনকী বিষ্ণু বর্ষ ও শিব বর্ষের মতো চক্র, পঞ্চাঙ্গও (ভারতীয় ক্যালেন্ডার) পড়ানো হবে। প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতরা সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র এবং পৃথিবীর গতি ব্যবহার করে কীভাবে সময় গণনা করতেন, তাও শেখানো হবে। কীভাবে পঞ্জিকা দেখে শুভক্ষণ নির্ধারণ করা হয়, তাও থাকবে পাঠক্রমে। থাকবে উজ্জয়িনীর প্রাইম মেরিডিয়ান, প্রাচীন ঘড়ি-ঘড়তি ও আধুনিক জিএমটি ও আইএসটি-র তুলনাও। থাকবে দ্বাদশ শতকের মহামানব ভাস্করাচার্যের লীলাবতী।

সহজ ছন্দে লেখা এই গ্রন্থে অঙ্ক ও জ্যামিতি শেখানোর পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। আরও একটি কোর্সে থাকবে ভারতীয় দর্শন ও গণিতের যোগসূত্র। বেদ, বেদাঙ্গ, পুরাণ, দর্শনশাস্ত্র–সব কিছুর মধ্য দিয়ে গণিতের দার্শনিক দিক এবং অর্থশাস্ত্র ও ছন্দশাস্ত্রে গণিতের প্রয়োগ পড়ানো হবে। এক কথায়, কোর্সে জ্যোতির্বিদ্যা, পৌরাণিক কাহিনি এবং সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে ভারতের সমৃদ্ধ সময়-বিজ্ঞান ঐতিহ্যকে জীবন্ত করে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

যদিও বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। শিব নাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আম্বার হাবিব পাঠক্রমে প্রাচীন ভারতীয় বিষয়বস্তুর প্রাধান্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “এটা খুবই সম্ভব যে, এই কোর্সের একজন স্নাতক পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় গণিতে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করবেন। কিন্তু আধুনিক গণিত সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান মূলত বিংশ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে নামী প্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গণিত গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্যা হবে।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ