ফাইল ছবি
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: সিঙ্গুর মামলায় শীর্ষ আদালতে অস্বস্তির মুখে রাজ্য সরকার। আরবিট্রেটরের রায় বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে দিল, টাটাদের মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। শুক্রবার বিচারপতি পি নরসিংহ ও বিচারপতি অতুল এস চান্দুরকরের বেঞ্চে এই মামলা শুনানির জন্য ওঠে। সওয়াল-জবাব করতে গিয়ে বিচারপতিদের ভর্ৎসনার মুখে পড়েন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। শেষমেশ টাটা গোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিরোধিতায় রাজ্যের আবেদন খারিজই করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশমতো ৭৬৬ কোটি টাকা টাটা গোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হবে রাজ্যকে।
কেন সিঙ্গুর নিয়ে রাজ্য সরকার বনাম টাটা গোষ্ঠীর মামলা, তা বিশদে বুঝতে হলে খানিকটা পিছিয়ে যেতে হবে। একলাখি গাড়ি তৈরির কারখানার গড়ার জন্য ২০০৬ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার অধিগ্রহণ করেছিল সিঙ্গুরের প্রায় হাজার একর কৃষিজমি। বহুফসলি জমি কারখানা তৈরির জন্য তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করে সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে নামে রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। আন্দোলনের জেরে পিছু হঠতে বাধ্য হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সরকার। কারখানা না গড়তে পারায় সিঙ্গুর থেকে বিদায় নিতে হয় টাটাদের। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। এই সিঙ্গুর আন্দোলনকে ভিত্তি করে ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বাংলার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। আন্দোলনের ফলস্বরূপ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিঙ্গুরের সেই জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই টাটা গোষ্ঠী ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা দায়ের করে।
২০২৩ সালে টাটা মোটরস এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের মধ্যে মামলা চলছিল। সমস্যা মেটাতে আরবিট্রেটর নিয়োগ করে আদালত। তিন সদস্যের সেই আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের এক সদস্যের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পি নরসিংহ ও বিচারপতি অতুল এস চান্দুরকরের বেঞ্চে মামলার শুনানিতে তিনি দাবি করেন, তিন সদস্যের আরবিট্রেটরদের মধ্যে এক বিচারপতিকে টাটাদেরই আমন্ত্রণে ১৫ বার নাগপুরে যেতে দেখা গিয়েছে। অথচ আরবিট্রেশন শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি। টাটা গোষ্ঠীর তরফে আইনজীবী মুকুল রোহতগি তীব্র আপত্তি করে বলেন, ”একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে কীভাবে এই ধরনের অভিযোগ করা যায়?” অবিলম্বে আবেদন খারিজ করে রাজ্যকে জরিমানার নির্দেশের দাবি করেন তিনি।
এরপর নিজের দাবির সপক্ষে কিছু নথি আদালতে পেশ করেন কপিল সিব্বল। বিচারপতিরা কড়া সুরে জানান, যদি কোনওভাবে বোঝা যায় যে এই দাবি অন্যায্য, তবে রাজ্যকে বড় জরিমানা করা হবে। তখন রাজ্যের আইনজীবী সেসব নথি ফেরত নিয়ে নিতে চান। তাঁকে ভর্ৎসনা করে রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। অর্থাৎ রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাটাদের ৭৬৬ কোটি টাকা দিতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.