প্রতীকী ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা নারীধর্ষণের ঘটনায় যখন সারা দেশ তোলপাড়, সেই সময়েই সে রাজ্যের পুলিশের মহানির্দেশকের একটি মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে। বস্তুত, ধর্ষণের জন্য যখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশকেই দায়ী করা হয়, সেই সময় তিনি এর জন্য পালটা দায়ী করেছেন মদ ও ইন্টারনেটকে। একে ধর্ষকদের কাছে পুলিশের ‘আত্মসমর্পণ’ বলেই মনে করছেন সমালোচকরা। বস্তুত, এই সেই মধ্যপ্রদেশ যেখানে দিনে গড়ে ২০টি ধর্ষণের ঘটনা থানায় নথিভুক্ত হয়। স্বাভাবিকভাবেই, প্রকৃত ঘটনা আরও অনেক বেশি। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থানা ধর্ষণের অভিযোগ নিতে চায় না, নির্যাতিতা বা তাঁর পরিবারের লোকজন সামাজিক ‘লজ্জা’র কারণে পুলিশে – অভিযোগ জানান না। কিংবা অভিযুক্তদের তরফে তাঁদের ভীতিপ্রদর্শন করে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বাধা দেওয়া হয়। সরকারি রিপোর্ট বলছে, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে ৩৪ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ নির্যাতিতাই অনগ্রসর শ্রেণির।
‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের মধ্যপ্রদেশে নারীধর্ষণ আটকাতে পুলিশ ‘অপারগ’ জানিয়ে পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল কৈলাস মাকওয়ান বলেছেন, “ধর্ষণের ঘটনা এভাবে বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। আমার মনে হয়, এই সময়ে মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গিয়েছে অশ্লীল কনটেন্ট। মদ্যপানের বাড়বাড়ন্ত বেড়েছে। মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে সহজে যে কোনও জায়গায় যোগাযোগ করতে পারছেন। এই সব ঘটনার জেরে মূল্যবোধের মৃত্যু হয়েছে, সমাজে নৈতিক অবক্ষয় তৈরি হয়েছে। যুব সমাজের মনে এর খারাপ প্রভাব পড়ছে, যা ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পুলিশ একা আর কী করবে? শুধুমাত্র পুলিশের দ্বারা এই সমস্যার সমাধান হবে এমনটা ভাবা ভুল।” তবে তিনি ইন্টারনেটে অশ্লীল কনটেন্ট আটাকানো বা মদ বিক্রি রুখতে পুলিশের কী করণীয়? সে ব্যপারে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি।
উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র-সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নারীনির্যাতন ও নারীধর্ষণের ঘটনা গত কয়েকবছরে বেড়েছে। আইনরক্ষাকারীদের প্রতি মানুষের ভয় কমে যাওয়া এবং পুলিশের কাজকর্মে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ এবং অপরাধীদের মাথার উপর তাঁদের হাত থাকার কারণেই ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। মধ্যপ্রদেশে বিধানসভায় সরকারের তরফেই একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। যা রীতিমতো চমকে ওঠার মতো। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাজ্যে ৩৪,৮১০টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩৪ শতাংশ (১১,৯৬০টি ঘটনা) অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মহিলা। ১১ মার্চ কংগ্রেস বিধায়ক পঙ্কজ উপাধ্যায়ের এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী এই পরিসংখ্যান বিধানসভায় পেশ করেন।
তথ্যে আরও দেখা গিয়েছে যে পাঁচ বছরে রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে ৬, ১৩৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৭,২৯৪ টিতে পৌঁছেছে। বিজেপি ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রচার করলেও, তাদের রাজ্যেই মহিলারা সবচেয়ে বেশি অসুরক্ষিত, বলছে বিরোধীরা। বিধানসভায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ১১.৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ০.২৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এদিকে, তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ে ২৬ শতাংশ, অনগ্রসর শ্রেণিতে ২০ শতাংশ এবং সাধারণ শ্রেণির মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ধর্ষণের ঘটনা ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার শীর্ষে রয়েছে ধার। এর পরেই রয়েছে গোয়ালিয়র, ঝাবুয়া, খারগোন, আলিরাজপুর এবং রতলম। এছাড়া, ইন্দোর ও ভোপালের মতো শহরেও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে।
ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্তির হার প্রসঙ্গে প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, গত পাঁচ বছরে তফসিলি জাতি সংক্রান্ত ২৭৩৯টি ধর্ষণ মামলার রায় হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ শতাংশ অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং ৭৭ শতাংশ খালাস পেয়েছেন। তফসিলি উপজাতি সংক্রান্ত ৩১৬৩টি সিদ্ধান্তে ২২ শতাংশ অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং ৭৮ শতাংশ খালাস পেয়ে পেয়েছেন। অনগ্রসর শ্রেণি সংক্রান্ত ৩৯৮২টি সিদ্ধান্তে ২১ শতাংশ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং ৭৯ শতাংশ খালাস পেয়েছেন। সাধারণ শ্রেণির মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ১২২২টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ১৮ শতাংশ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং ৮২ শতাংশ খালাস পেয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.