Advertisement
Advertisement
Operation Sindoor

পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া, অপারেশন সিঁদুরে আফসোস কারগিল শহিদ পরিবারের

তাঁদের গলায় স্বজন হারানোর যন্ত্রণা।

Kargil martyrs' families regret Operation Sindoor, a missed opportunity to teach Pakistan a lesson

২৬তম কার্গিল দিবসে শহিদ পরিবারের সদস্যরা।

Published by: Subhodeep Mullick
  • Posted:July 26, 2025 4:16 pm
  • Updated:July 26, 2025 4:18 pm   

সোমনাথ রায়, কারগিল: ‘এত আফসোস হচ্ছে, কী বলব! এই সুযোগ আর আসবে?’
কার্যত এই ধরনের বক্তব্য শুক্রবার ঘোরাফেরা করল লামোচেন ভিউ পয়েন্টে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে এগারো হাজার ফুট উপরে এই পয়েন্ট থেকে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ২৬ বছর আগে কারগিল যুদ্ধের ইতিহাস বহনকারী বিভিন্ন শৃঙ্গ, পর্বতরাজি। বিজয় দিবসের ঠিক আগে টাইগার হিল, তোলোলিং, বাত্রা পয়েন্টকে যেন শুদ্ধ করে দিতে হাজির হয়েছে মেঘমালা। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের জল মুছছিলেন কারগিল যুদ্ধের বিভিন্ন শহিদের প্রিয়জনরা। তাঁদের গলায় একদিকে যেমন ছিল স্বজন হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে ছিল হঠাৎ করে সংঘর্ষবিরতি হওয়ায় অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আফসোস। প্রত্যেকেই যা বললেন, তার নির্যাস, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার যে সুযোগ এসেছিল এবার, তা হাতছাড়া করা ঠিক হল না।

Advertisement

ছেলে সুনীল জাংয়ের ছবির অ্যালবাম নিয়ে কারগিল এসেছিলেন মা বীণা। ছবির পাতা ওল্টানোর মাঝে চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন, “এবার খুব ভাল সুযোগ ছিল। পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। ওরা আমাদের ২৭ জনকে মেরেছে, ওদের ২৭০০ জনকে মারা উচিত ছিল। এত তাড়াতাড়ি কেন যুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া হল, জানি না। ওদের আরও ক্ষয়ক্ষতি করা উচিত ছিল। পাকিস্তান বারবার এমন করে, আমাদের দরকার ছিল ওদের আরও শিক্ষা দেওয়া। মুখে ভাই ভাই বলে, মনে অন্য কিছু।” মহারাষ্ট্রের এম এন পাটিলের বোন সুরিকা শিণ্ডে বলছিলেন, “উচ্চ পর্যায়ে হয়তো কিছু অসুবিধা এসেছিল, কিন্তু শিক্ষা দেওয়া দরকার ছিল। আমাদের সেনার সেই ক্ষমতা আছে।” রাইফেলম্যান শহিদ সুভাষ রানার স্ত্রী বিদ্যা বলছিলেন, “অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছিল, তবে ওরা হামেশাই এই ধরনের অপকর্ম করে। এবার ওদের একেবারে শেষ করে দেওয়া উচিত ছিল। আর কখনও এমন সুযোগ আসবে কি না কে জানে?” সতীশ চন্দ্র বাঘেলের ভাই ভানু প্রকাশ বলছিলেন, “পাকিস্তান বিষধর সাপ। আমরা ওদের দুধ খাওয়াব, ওরা বারবার আমাদেরই ছোবল দেবে। প্রত্যেকবার অপচেষ্টা করে আর আমাদের সেনার গুঁতো খেয়ে পায়ে পড়ে যায়। উচিত ছিল পিওকে ছিনিয়ে নিয়ে আসা। সেনা পুরো জোশে ছিল। যেই বুঝেছে ওদের সর্বনাশ ঘনিয়ে আসছে, সবার কাছে ভিক্ষা করে সংঘর্ষবিরতি করিয়ে নিল।” তবে কিছুটা ভিন্ন সুর গুজরাতের সিপাই শহিদ দীনেশ বাঘেলের ভাই রাজেশ ও নরেশের। বলছিলেন, “ওদের ভালমতো জবাবই দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের ক্ষতি করার কোনও দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টা করা তো দূর, কল্পনাও করবে বলে মনে হয় না।”

’৯৯ যুদ্ধের অন্যতম শরিক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অসীম কোহলি, যিনি আবার ফ্ল্যাগ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সিইও, বলছিলেন, “ভারতীয় সেনার এক প্রাক্তন সদস্য হিসাবে বলতে হলে বলব, ওদের বরবাদ করে দেওয়া উচিত ছিল। তবে লড়াই শুধু সেনার নয়। দেশ, দেশের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক –এমন নানা বিষয় থাকে। সেই সব দিক থেকে বিবেচনা করেই হয়তো শীর্ষনেতৃত্ব সংঘর্ষবিরতি করেছেন।” আধিকারিক পদে থাকা কেউ ব্যালেন্স করার জন্য হয়তো কিছুটা নরম, শহিদ পরিবারের এক-আধজন সদস্য হয়তো ভাবছেন অপারেশন সিঁদুরে যতখানি শিক্ষা দেওয়া গিয়েছে পাকিস্তানকে, তা যথেষ্ট। তবে কারগিল  বিজয় দিবসের ২৬ তম বর্ষের অনুষ্ঠানে এসে বেশিরভাগ শহিদ পরিবারের বক্তব্যই হল, এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হল না।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ