বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি : এসআইআর অর্থাৎ ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। দিল্লির বুকে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনের উত্তাপ। সোমবার রাজধানীর রাস্তায় ভোটচুরির অভিযোগে বিরাট মিছিল করেন বিরোধী সাংসদরা। পুলিস আটক করে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মহুয়া মৈত্ররদের। তারপরই মঙ্গলবার ‘বোমা’ ফাটালেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, সমীক্ষার নামে ভোটার তালিকায় কারচুপির প্রমাণ দ্রুত জনসমক্ষে তুলে ধরবেন তিনি। ষড়যন্ত্র এতটাই গভীর যে পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে এলে কার্যত ‘ডেটা বোমা’ ফাটবে।
দিনকয়েক আগেই কর্মাটকে ভোটচুরির অভিযোগ তোলেন রাহুল। সাংবাদিক সম্মেলন করে ভোটার তালিকা ধরে নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে ‘প্রমাণ’ পেশ করেন তিনি। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী দাবি করেন ছয় পদ্ধতিতে ভোটার তালিকায় কারচুপি করা হয়েছে। তিনি নাম এবং ঠিকানা তুলে ধরে দেখিয়েছিলেন যে একই ঠিকানায় দেখা গিয়েছে আশিজন ভোটারের নাম, আবার এমন ঠিকানা দেখা গিয়েছে যেটি আসলে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা এবং সেখানে কেউ থাকেন না। পাশাপাশি ছবি ভুল এবং একই ভোটারের একাধিক জায়গার ভোটার তালিকায় নাম থাকার প্রমাণও তুলে ধরেছেন তিনি।
মঙ্গলবার লোকসভা চত্তরে রাহুল গান্ধীকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে খুবই ইঙ্গিতপুর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন, শাসকদল পদ্ধতিগতভাবে ভোট চুরি করছে। লোকসভা চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের আবার মনে করিয়ে দেন যে তাঁরা সংবিধান রক্ষার লড়াই করছেন। শাসকদল এবং নির্বাচন কমিশনকে রাহুলের এই আক্রমণ সমর্থন করেছেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাহুল জানিয়েছেন, “আর কিছুদিন দাঁড়ান, একটু ধৈর্য ধরুন। একটা নয়, অনেক আসন রয়েছে। এটা জাতীয় স্তরে পদ্ধতিগতভাবে করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জানে আমরা জানি”। কমিশনের প্রমান চাওয়ার দাবিকে নস্যাৎ করে তিনি বলেন, “আগে প্রমাণ ছিল না এখন প্রমাণ রয়েছে। আমরা সংবিধান রক্ষা করি”। এক ব্যক্তি, এক ভোট সংবিধানের ফাউন্ডেশন। আর নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব তারা এক ব্যক্তি, এক ভোট লাগু করবে। কিন্তু তারা করেননি। আমরা শুধুমাত্র সংবিধান রক্ষা করছি। আমরা থামব না। আভি পিকচার বাকি হ্যায়।”
উল্লেখ্য, এসআইআর ইস্যুতে মোদি সরকারকে বিঁধে রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, ভোটার তালিকা সংশোধন করার জন্য এই এসআইআর পদ্ধতি ভুল। এই ভোটার তালিকায় যদি কারচুপি হয়ে থাকে অথবা এই তালিকায় যদি ভুয়ো ভোটার থাকে তাহলে ২০২৪ সালের নির্বাচন হয়েছে এই ভুল তালিকা মেনে এবং সেই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচন অবৈধ।
এসআইআর-এর সপক্ষে একাধিক যুক্তি পেশ করেছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের মতে, বহু বিদেশি বিশেষ করে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। অনুপ্রবেশ যে হারে বাড়ছে তাতে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে জনবিন্যাস পালটে যাচ্ছে। কমিশনের কথায়, ভোটার তালিকা পরিষ্কার করতে হবে। অনেক মৃত এবং ভুয়ো ভোটারের নাম সমীক্ষায় সামনে এসেছে। এই ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের খুঁজে বের করতেই এসআইআর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন