সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। মুক্তি পেল ‘শোলে’। পর্দায় জয় আর বীরুর ‘ব্রোম্যান্স’, বন্ধুত্বের কাহিনি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক ‘কালজয়ী মাইলস্টোন’ তৈরি করল। কাট টু ২০২৫ সাল, ১৪ আগস্ট। রাত পোহালেই যখন ‘শোলে’ রিলিজের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তি, ঠিক তার প্রাক্কালেই জয়-বীরুর নস্ট্যালজিয়া উসকে দিলেন ভারতীয় বিনোদুনিয়ার দুই বলয়ের দুই মহাতারকা হৃতিক রোশন এবং নন্দমুরি তারক রামা রাও জুনিয়র ওরফে এনটিআর জুনিয়র। দেশাত্মবোধ, দেশপ্রেমের সরণি বেয়ে দুই বন্ধু কবীর-বিক্রম যুদ্ধজয়ের হাসি হাসলেন। তবে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়ার ২’ ছবির প্লট চিরাচেনা হলেও ‘কাহানি মে ট্যুইস্ট হ্যায়’!
ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতা, মাতৃভূমি রক্ষার্থে RAW এজেন্টদের মারকাটারি অ্যাকশন… সিনেমার গল্পে এহেন উপকরণগুলি নতুন নয়! তবে এবার দেশ সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে। প্রথম বিশ্বের দেশগুলির বৈসয়িক স্বার্থে উন্নয়নশীল দেশের ‘মাথাদের’ মগজধোলাই এবং তাদের সঙ্গী করে ভারতকে পর্যুদস্ত করার ষড়যন্ত্র। যুগের সঙ্গে গল্পের প্লটেও আধুনিকতার ছোঁয়া রেখেছন পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্য়ায়। এর আগে পুরাণের কাহিনির সঙ্গে বাস্তবের মিশেলে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ উপহার দিয়েছিলেন। এবার ‘ওয়ার ২’-এর চরিত্রদের মধ্য দিয়ে মনে করালেন, “কলিযুগের যুদ্ধ জিততে কল্কি হওয়া প্রয়োজন।” কে সেই কল্কি? হৃতিক রোশন। দেশের স্বার্থে জীবন তো ছাড়, প্রেমও বাজি রেখে ‘একলব্য’ হয়ে ধরা দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে জুনিয়র এনটিআরের চরিত্রের মধ্য দিয়ে শ্রেণীবৈষম্যের কথা তুলে ধরলেন। বসতির আস্তাকুঁড়েতে থাকা এক অনাথ ছেলের জওয়ান হয়ে ওঠার গল্প। এখানেই ‘ওয়ার ২’ এক নতুন স্বাদ দিল। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে লড়াইটা কতটা আধুনিক? মনে করিয়ে দিল যশরাজ ফিল্মস-এর ‘গোয়েন্দা ব্রহ্মাণ্ডে’র এই ছবি। টানটান উত্তেজনামূলক চিত্রনাট্য। হাড়হিম করা তুখড় অ্যাকশন সিকোয়েন্স। তার সঙ্গে প্রেম, বন্ধুত্বে ধোঁকা…! সমান্তরালে দুই অনাথ ছেলের ইন্টেলিজেন্স অফিসার হয়ে ওঠার গল্প থেকে নাচ-গান, কমার্শিয়াল সিনেমার সমস্তরকম উপকরণ মজুত প্রায় ৩ ঘণ্টার এই ছবিতে। তবে আক্ষেপ, বলিউড এবং দক্ষিণী সিনেইন্ডাস্ট্রির দুই তাবড় অভিনেতা সুপারস্টারকে একফ্রেমে রেখেও সংলাপ নিয়ে খুব একটা এক্সপেরিমেন্ট করলেন না পরিচালক, চিত্রনাট্যকার।
র’ এজেন্ট মেজর কবীর ঢালিওয়াল ওরফে ‘কাব্বু’ এবং আরেক ইন্টেলিজেন্স অফিসার বিক্রম চেলাপতি ওরফে ‘রঘু’র গল্প দেখতে দেখতে বেশকিছু দৃশ্যে ‘স্লামডল মিলিয়নিয়ার’-এর কথা উঁকি দিতে পারে মনে। বিশেষ করে ট্রেনের চেসিং সিকোয়েন্সগুলিতে। তবে গল্পে বেশকিছু ফাঁকও রয়েছে। এই যেমন, আশুতোষ রানা অভিনীত কর্ণেল লুথরার চরিত্রটিকে খুব দুর্বলভাবে পরিচয় করানো হয়েছে। গোটা সিনেমাজুড়ে কিয়ারা আডবানির ‘কাব্য’ চরিত্রটিকে উইং কমান্ডার বলে মনেই হল না! কিয়ারার স্ক্রিনপ্রেজেন্সও হৃতিক-এনটিআর জুনিয়রের তুলনায় অনেক কম। তবে গানের দৃশ্যে কবীরের সঙ্গে কাব্যর প্রেম-প্রেমভাব এবং বিকিনি দৃশ্য দেখতে মন্দ লাগে না। স্পেনের বিভিন্ন লোকশনে রোদঝলমলে আবহাওয়ায় হৃতিক-কিয়ারার রোম্যান্সের জন্যই হয়তো সেগুলো খারাপ লাগেনি দেখতে! তবে ছবির দ্বিতীয়ার্ধে দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলা হওয়ার দৃশ্যের অ্যাকশন কোরিওগ্রাফও খুব দুর্বল। সবমিলিয়ে ‘ওয়ার ২’ ছবির প্রাপ্তি বলতে কাব্বু-রঘুর মোচড় দেওয়া বন্ধুত্বের কাহিনি এবং সুদর্শন হৃতিক রোশনের সঙ্গে জুনিয়র এনটিআরের পাল্লা দেওয়া অভিনয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.