Advertisement
Advertisement
Superman

অতিমানব হয়েও রক্তমাংসের নায়ক! নতুন সুপারম্যান কি মন জিততে পারল?

ছবিটিকে 'অ্যান্টি ইজরায়েল' বলছেন কেউ কেউ।

Review of the movie Superman
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:July 15, 2025 6:52 pm
  • Updated:July 15, 2025 8:00 pm   

বিশ্বদীপ দে: ‘ইটস আ বার্ড… ইটস আ প্লেন… ইটস সুপারম্যান।’ সুদূর আকাশের বুকে উড়ে চলা এক অতিমানব সে। গত শতকের তিনের দশকে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক্কেবারে দোরগোড়ায় ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিল সুপারম্যান। দেখতে দেখতে বেশ কয়েক দশক বুড়ো হয়ে গিয়েছে পৃথিবী। কিন্তু কমিক্স বা রুপোলি পর্দায় সুপারম্যান থেকে গিয়েছে একই রকম জনপ্রিয়। এবং ‘আবার সে এসেছে ফিরিয়া’। রিবুট হয়ে। কেমন হল জেমস গানের ছবিটি?

Advertisement

ছবির শুরুতেই বড় চমক। যা ট্রেলারেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কে জানত ওটাই প্রথম দৃশ্য! প্রবল বেগে আকাশ থেকে অ্যান্টার্কটিকার বরফের ভিতরে খসে পড়ে কে যেন! আর কেউ নয়, স্বয়ং সুপারম্যান! আহত, রক্তাক্ত ক্লার্ক কেন্ট শিস দিয়ে ডাকে ক্রিপ্টোকে। সেই ‘সুপার’-কুকুরই ডেরায় ফিরিয়ে নিয়ে যায় প্রভুকে।

DC animated film Injustice has landed itself in controversy after it allegedly called Kashmir ‘disputed’
যে কোনও মাধ্যমেই সুপারম্যান মানে জনপ্রিয়তা

যেহেতু এটা একেবারে নতুন সিরিজ, তাই মনে করা হচ্ছিল হয়তো সুপারম্যানের শৈশব থেকে শুরু হবে গল্প। কিন্তু চিরচেনা কাহিনি কাঠামোকে আর পুনরাবৃত্ত করতে চাননি জেমস গান। বরং একেবারে গনগনে অ্যাকশনের মাঝখানে শুরু হয় ছবি। এবং শুরুতেই নায়কের ‘পতন ও মূর্চ্ছা’। জানা যায়, মাত্র তিন বছর আগে গোটা পৃথিবীর কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী মেটা-হিউম্যান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সে। এবং তিন সপ্তাহ আগে রুখে দিয়েছে একটা যুদ্ধ। মার্কিনদের ‘বন্ধু’-দেশ বোরাভিয়া প্রতিবেশী জারহানপুরে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধ থমকে গিয়েছে সুপারম্যানের সৌজন্যে। কিন্তু এবার সে হেরে গিয়েছে ‘হ্যামার অফ বোরাভিয়া’র (আসলে সে আলট্রাম্যান) কাছে। যাকে নিয়ন্ত্রণ করছে ‘সুপার ভিলেন’ লেক্স লুথার। তার আরেক জাঁদরেল সঙ্গী ইঞ্জিনিয়ার। লেক্স চায় সুপারম্যানকে সকলের চোখে বিষবৎ করে তুলতে। এবং লুকিয়ে সুপারম্যানের তুষার-আস্তানা থেকে হাতিয়ে আনে তার মা-বাবার পাঠানো শেষ বার্তা। সেই বার্তার শেষ অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার সেটাই উদ্ধার করে ইঞ্জিনিয়ার। আর সেই বার্তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরে লেক্স। নষ্ট হওয়া অংশে এমন কিছু ছিল (স্পয়লার এড়াতে বলা যাবে না), যা সুপারম্যানকে করে তোলে ‘ভিলেন’। কীভাবে সে দুর্ধর্ষ দুশমনদের হারিয়ে আবার নিজের সুনাম ফিরে পেল সেটাই ডিসিইউ-এর ‘চ্যাপ্টার ওয়ান: গডস অ্যান্ড মনস্টার্স’-এর প্রথম ছবির উপজীব্য।

কোরেন্সওয়েটের সুপারম্যান মন জিতে নেয়

প্লট হিসেবে কি খুব অভিনব কাহিনি শুনিয়েছেন জেমস গান? এককথায় বললে, না। কিন্তু যেহেতু রিবুট করা হয়েছে সুপারম্যানের আখ্যানকে, তাই খুব বেশি জটিলতা আনা সম্ভবও ছিল না। কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে, ২ ঘণ্টা ৯ মিনিটের ছবিটি আগাগোড়া উপভোগ্য। দ্বিতীয়ার্ধের গতি আরেকটুু বেশি। ছবিটিতে একদিকে রয়েছে কমেডির ছোঁয়া। অন্যদিকে রীতিমতো সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতির প্রতিফলনও চোখ এড়ায় না।

লেক্সদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে সুপারম্যানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ‘জাস্টিস গ্যাং’। গ্রিন ল্যান্টার্ন, মিস্টার টেরিফিক ও হকগার্ল- এরা এই গ্রুপের সদস্য। এদের মধ্যে গ্রিন ল্যান্টার্ন ছবির কমিক রিলিফ। অন্যদিকে ‘পকেট ইউনিভার্সে’ বন্দি সুপারম্যানকে মুক্ত করতে সাহায্য করে মিস্টার টেরিফিক। এই চরিত্রগুলি ছবিটিকে কখনওই একঘেয়ে হতে দেয়নি। ক্লার্ক কেন্টের গার্লফ্রেন্ড ও ‘ডেইলি প্ল্যানেট’-এ তার সহকর্মী লইস লেনকেও ভালো লাগে। এবং ডেভিড কোরেন্সওয়েট। নতুন সুপারম্যান কিন্তু প্রথম ছবিতে মুগ্ধ করেছে। চরিত্রটিকে নতুন করে গড়েছেন জেমস। এর আগে ‘ম্যান অফ স্টিল’ ছবি থেকে সুপারম্যানকে যেন বড় বেশি শক্তিশালী, প্রায় দেবদুর্লভ করে তোলা হয়েছিল। কিন্তু কোরেন্সওয়েটের সুপারম্যান রক্তমাংসের মানুষ। যে হেরে যায়। আবার ফিরে আসে নতুন জেদ নিয়ে। তার মানসিক অস্থিরতা, প্রেমের মগ্নতা, পালক মা-বাবার প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা- সহজেই তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। ছবির শেষদিকে লেক্সের ‘এলিয়েন’ খোঁচায় সুপারম্যানকে বলতে শোনা যায়, ”আর পাঁচজনের মতোই আমিও মানুষ। যে ভালোবাসে, ভয় পায়, রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে দিন শুরু করে সেদিন কী করতে সেসব কিচ্ছু না জেনেই।” আর এটাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি! চরিত্রটিকে চমৎকার গড়েছেন কোরেন্সওয়েট। এখানে তার সঙ্গে কমিক্সের চরিত্রটির মিলই বেশি (ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে পোশাকের উপরে তার লাল অন্তর্বাসও)। তার উলটো দিকে লেক্সের অভিনয়ও চমৎকার। সেই কারণে দু’জনের টক্করও জোর জমেছে।

তবে এই ছবির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে বোরাভিয়া বনাম জারহানপুর। যদিও এই দুই কাল্পনিক দেশ কমিক্সেও ছিল, কিন্তু এখানে তাদের দেখে মনে পড়ে ইজরায়েল বনাম গাজার যুদ্ধ। বোরাভিয়ার রাষ্ট্রনায়কের চেহারার সঙ্গেও আশ্চর্য মিল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। যদিও জেমস গান বা তাঁদের দলের কেউ এই নিয়ে কোনওরকম দাবি করেননি, তবুও অনেকেই ছবিটিকে ‘অ্যান্টি-ইজরায়েল’ বলছেন। কেউ কেউ আবার রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের সাযুজ্যও পেয়েছেন। অন্যদিকে সুপারম্যানকে লেক্সের ‘এলিয়েন’ বলে গালাগাল দেওয়ার মধ্যে বর্তমান আমেরিকার ‘অভিবাসী’ প্রসঙ্গও ছায়া ফেলে যায়।  সব মিলিয়ে নতুন সুপারম্যান কেবলই বিনোদন জোগায় না, সে ভাবায়ও। মনে হতে থাকে, দক্ষিণপন্থীদের দখলে চলে যাওয়া যুদ্ধ-উন্মনা এই পৃথিবীতে সুপারম্যান সত্যি সত্যি এলে মন্দ হত না।

ডিসি এই ছবির মধ্যে দিয়েই নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে এমনটাই বলছে প্রাথমিক বক্স অফিস। মুক্তির পর থেকে ছবিটি যেভাবে ব্যবসা করছে তা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। কাল্পনিক শহর মেট্রোপলিসে দ্বৈত সত্তা নিয়ে ক্লার্ক কেন্ট ওরফে সুপারম্যানের দিনযাপনের প্রায় নয় দশক পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও যে তার বক্স অফিস কাঁপানোর ক্ষমতা একই রকম তা নতুন করে বুঝিয়ে দিচ্ছে জেমস গানের ছবিটি।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ