আকাশ মিশ্র: অঙ্কটা যে খুব একটা কঠিন নয়, তা ‘বাস্তার’ ছবির প্রথম দৃশ্য থেকেই বুঝিয়ে দিলেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন। এমনকী, অঙ্কটা ঠিক কোথায় গিয়ে মিলবে তাও পরিষ্কার প্রথম থেকেই। কেননা, পরিচালক সুদীপ্তর ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা হাতেনাতে ধরতে পারবেন যে, ‘কেরালা স্টোরির’ ফমূর্লাতেই নতুন ছবিটি তৈরি হয়েছে। তাহলে বুঝেই গিয়েছেন ‘দ্য বাস্তার স্টোরি’, ঠিক কেমন ছবি? এই প্রশ্নের উত্তরে না হয় একটু পরে আসা যাক। প্রথমে ছুঁয়ে নেওয়া যাক ছবিটির গল্পটি কীরকম।
‘বাস্তার: দ্য নকশাল স্টোরি’ ছত্তীশগড়ের বাস্তার অঞ্চলের কাহিনি। একেবারেই বাস্তব ঘটনার উপর নির্ভর করে তৈরি এই ছবি। অন্তত, এমনটাই দাবি করেছেন পরিচালক সুদীপ্ত। এই ‘বাস্তার’-এ প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে নকশালবাদ। মাওবাদীরা ছত্তীশগঢ়ের বাস্তারে সিআরপিএফ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৭৬ সেনাকে হত্যা করে। মূলত, সেটাই গল্পের মূল। ছত্তীশগড়ের বাস্তার এলাকায় নকশালরা কীভাবে নিজেদের আলাদা শক্তি তৈরি করে ফেলেছে, তা দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। কীভাবে তারা বাস্তারের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে সেই গল্পই তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে এবং এর প্রেক্ষপটে আইপিএস অফিসার নীরজা মাধবন ওরফে আদা শর্মা, কীভাবে নকশালবাদীদের বিনাশ করে, কীভাবে সে দেশের সিস্টেমের সঙ্গে লড়াই করে, সেই গল্পই এগিয়েছে ‘বাস্তার’-এ।
তবে ছবির পরতে পরতে সুদীপ্ত চেষ্টা করেছেন অন্য গল্প বলারও। ঠিক যেমন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র ক্ষেত্রে ইসলামোফোবিয়াকে মগজে জোর করে প্রবেশ করিয়ে ছিলেন। এবার সুদীপ্ত বেছে নিলেন কমিউনিজম ভাবনার বিরুদ্ধ ভাবনাকে মগজ ধোলাই হিসেবে ব্যবহার করতে। তার জন্যই নকশালবাদ ও জেএনইউকে একসূত্রে বাঁধলেন সুদীপ্ত। সঙ্গে প্রচ্ছন্ন ভাবে ওড়ালেন ডানপন্থার পতাকা।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’র মতোই এই ছবি প্রোপাগান্ডাতে ভরপুর। প্রায় সব দৃশ্য়ই যেন চোখে খোঁচা দিয়ে জোর করে দেখানোর মতো। যা অনেকটা সিনেমার খাতিরে মেলোড্রামাটিক হিসেবে তৈরি করা। ঠিক যেমন, ছবির শুরুর রক্তাক্ত দৃশ্য। যা দেখলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়। শুধু শুরুর দৃশ্য নয়। ছবির বেশিরভাগ দৃশ্যই ভয়াবহ। যা দেখে অনেক সময়ই হল থেকে বেরিয়ে আসতে মন চাইবে।
আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই ছবি একপেশে লড়াইয়ের গল্প বলে। নকশাল ইতিহাসকে একেবারেই এড়িয়ে যায় ‘বাস্তার’। তাই ছবি শেষে ইমেজের খেলা চোখে ভাসলেও, মগজে ধাক্কা মারে না। এক অন্তঃসারশূন্য প্রোপাগান্ডা ছবিই হয়ে দাঁড়ায়।
অভিনয়ের দিক থেকে আদা শর্মা, রাইমা সেন, শিল্পা শুক্লারা পরিচালক ও চিত্রনাট্যের হাতের পুতুল। তাই নতুন কিছু করার মতো সুযোগ পাননি কেউই। আর আদা শর্মা তো ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র পোশাক ছেড়ে, শুধু বাস্তারের পোশাক চড়িয়েছেন। আদার সেই একই অভিব্যক্তি গোটা ছবি জুড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.