Advertisement
Advertisement
The Great film review

বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন তরুণীর একক লড়াইয়ের গল্প বলে ‘তানভি দ্য গ্রেট’, পড়ুন রিভিউ

কেমন হল অনুপম খের পরিচালিত সিনেমা?

Anupam Kher helmed Tanvi The Great film review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:July 19, 2025 5:24 pm
  • Updated:July 19, 2025 5:24 pm   

নির্মল ধর: দু’ দশক বাদে পরিচালকের আসনে অনুপম খের। প্রবীণ অভিনেতা পরিচালিত ‘তানভি দ্য গ্রেট’ ছবিটি নিয়ে সাম্প্রতিককালে বেশ চর্চা হচ্ছে। দেখানো হয়েছে রাষ্ট্রপতিভবনেও। উপরন্তু সিনেমার বিষয়বস্তু বেশ হৃদয়গ্রাহী। অতঃপর মুক্তি পেতেই প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মারলাম।

Advertisement

গল্পটা কীরকম? প্রথমেই প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করা যাক। এক বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মেয়ে বাবাকে হারিয়েছে বছর খানেক আগে। মায়ের সঙ্গে থাকে সে। তবে অটিস্টিক হওয়ার দরুন তাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তাঁর দাদু। কিন্তু উত্তরাখণ্ডে দাদুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েই গল্প এক মোড় নেয়। এর মধ্যেই আসে সেই দিন, যেদিন অন্য সেনা আধিকারিকদের সম্মান দেওয়া হলেও তার বাবাকে দেওয়া হয় না। ব্যাপারটা মানসিকভাবে নাড়িয়ে দেয় তানভিকে। এরপরেই তানভি ঠিক করে সেও দেশের হয়ে লড়াই করবে। সেখান থেকেই তানভির জার্নি শুরু।

অনুপম খের পরিচালিত এই সিনেমার গল্পের নায়িকা বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন তরুণী ‘তানভি’। তাঁর মা বিদ্যা রায়নাও অটিস্টিক রোগীরই ডাক্তার। দাদু প্রতাপ রায়না (অনুপম খের) প্রাক্তন সেনা আধিকারিক। তাঁর ছেলে সমর রায়নাও দুঃসাহসী সেনাজওয়ান। তবে ভারত-চিন যুদ্ধে সিয়াচেন গ্লেসিয়ারের কাছে মৃত্যুবরণ করেন। তরুণী তানভি বাবার শহিদ হওয়ার কারণ জানার পর স্থির করে, সে নিজেই বাবার অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করবে। সিয়াচেনে গিয়ে তেরঙ্গা ওড়াবে। কিন্তু বাদ সাধে তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। কারণ সেনাবিভাগে বিশেষ শারীরিক বা মানসিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের নির্বাচন করার নিয়ম নেই। এখানেই পরিচালক অনুপম খের বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার ফানুস উড়িয়ে দিলেন চিত্রনাট্যে ভর করে। ব্রিগেডিয়ার যোশী (জ্যাকি শ্রফ), মেজর শ্রীনিবাসন (অরবিন্দ স্বামী) ও রাজাসাহেব নামের এক সঙ্গীতপাগল (বোমান ইরানি) চরিত্রগুলির সঙ্গে সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে দিলেন দেশপ্রেম, সস্তা আবেগ এবং কল্পনার জগৎকে! সুতরাং তানভির স্বপ্নপূরণে মাঝেমধ্যে কিঞ্চিৎ বাধা এলেও মোলায়েম পরিচালনার কৌশলে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন তরুণী তানভির সত্যি সত্যিই অসম্ভবকে সম্ভব করল। তবে এই ছবি দেখতে বসে কিছু জায়গায় মনে প্রশ্ন উঁকি দিলেও বাস্তব-অবাস্তব নিয়ে ভাবলে চলবে না। শুধু প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নবাগত শুভাঙ্গী দত্তর অভিনয়টা দেখতে হয়। আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, ‘তানভি দ্য গ্রেট’ ছবিতে সুন্দর লোকেশনকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে বহু মন ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছেন। এর জন্যে পরিচালক অনুপম খেরের বাহবা প্রাপ্য।

তবে পরিচালককে নিয়ে কিছু অনুযোগ রয়েছে। শেষপর্যন্ত সামরিক বিভাগের আইন নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করেই তানভি সত্যি সত্যিই সিয়াচেন গ্লেসিয়ারে পৌঁছে যায়। যদিও এই বিষয়টি সেন্সর বোর্ডে ছাড় পেল কী করে?  উঁকি দেয় সেই প্রশ্ন। কারণ দেশের জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে লড়়া সেনাজওয়ানদের সিস্টেমকে এহেন গুরুগম্ভীর বিষয়ের সিনেমায় শিথিলভাবে দেখানো নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই ছবিতে তানভির একক লড়াইয়ের দৃশ্যগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে পরিচালকের আরও পোক্ত ট্রিটমেন্ট দেওয়া উচিত ছিল। সত্যি বলতে কী, বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন তরুণদের লড়াইয়ের গল্প নিয়ে তৈরি আমির খানের ‘সিতারে জমিন পর’ দেখার পর আর এই ছবি মনে তেমন দাগ কাটল না! অন্তত যে বিষয়টিকে সামনে রেখে অনুপম খের সিনেমাটা তৈরি করেছেন। গোটা ছবিজুড়ে একমাত্র শুভাঙ্গীর প্রাণোচ্ছ্বল অভিনয় দেখার মতো। ওঁর জন্যই আরও একবার দেখা যায় ‘তানভি দ্য গ্রেট’। তবে মেকিংয়ের খামতি থাকার জন্যই হয়তো তারকাদের দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় অমন প্রচারের বালাই দেখিয়ে কিংবা ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ টিকিটের শর্ত দিয়েও মুম্বইয়ের প্রেক্ষাগৃহগুলিতে দর্শক টানতে পারছে না এই সিনেমা। কলকাতায় শুক্রবারের পর শনিবার অধিকাংশ হলে মাত্র একটি করে শো চলছে। দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গী এবং রুচি যে বদলেছে, সেটা অনুপম খেরের মাথায় রাখা উচিত ছিল।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ