Advertisement
Advertisement
Saiyaara movie review

‘অ্যানিম্যাল’-এর যুগে প্রেম-প্যাশনের ‘সাইয়ারা’র বাজিমাত কোন মন্ত্রে? পড়ুন রিভিউ

মাত্র তিন দিনে গোটা বিশ্বে একশো কোটির গণ্ডি টপকানো এই সিনেমার ইউএসপি কী?

Ahaan Panday and Aneet Padda ‘Saiyaara’ movie review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:July 22, 2025 5:30 pm
  • Updated:July 22, 2025 5:30 pm   

বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: মোহিত সুরি পরিচালিত ‘সাইয়ারা’ মুক্তি পাওয়ার পর পরই এই ছবি দেখে ফেলেছি বলা ভুল হবে। কিন্তু সোশাল মিডিয়াতে এই ছবি নিয়ে এত হইচই দেখে কৌতূহল জাগলো। সোমবারের সন্ধেবেলায় মাল্টিপ্লেক্স প্রায় ভর্তি। নবাগত অহন পান্ডে এবং অনীত পাড্ডা অভিনীত ছবিকে দর্শক স্বাগত জানাচ্ছে দেখে ভালোই লাগল। সংখ্যা তত্ত্ব বলছে এই ছবি ওপেনিং উইকেন্ডেই গোটা বিশ্বে ১১৯ কোটির ব্যবসা করেছে। পাশাপাশি প্রেমের ছবি হিসেবে বক্স অফিসে রেকর্ডও গড়ে ফেলেছে।

Advertisement

গল্পটা কীরকম? ‘সাইয়ারা’র হৃদয়ে রয়েছে তীব্র প্রেম। এবং এই প্রেমের একটা প্যাটার্ন আছে। ছেলেটি হবে প্রচন্ড সুপুরুষ, রাফ অ্যান্ড টাফ, উদ্ধত, মেজাজি, যার একটা গভীর ক্ষত আছে, ইমোশনালি অ্যানএভেলেবেল, ক্যাসানোভা, মারকুটে, গ্যাং লিডার, খানিক বখে যাওয়া, টক্সিক, আলফা মেল— অর্থাৎ যে ছেলের সঙ্গে কোনও অভিভাবকই তার মেয়ের সম্পর্ক কল্পনাও করতে পারে না। আর মেয়েটি হবে শান্ত, সিরিয়াস, ফুলের মতো নিষ্পাপ ও নরম পাপড়ির মতো কোমল, শিশিরবিন্দুর মতো সুন্দর, ডিসিপ্লিন্ড, যার আত্মসম্মান প্রখর, সহজ-সরল। অর্থাৎ ব্যাড বয়-গুড গার্ল মিট কিউট-এর যে থিওরি, যেখানে আকর্ষণের জমি তৈরি হয় বৈপরীত্যের ভিত্তিতে। তেমন দুজনের দেখা হলে এক ধরনের টেনশন, সংঘর্ষ, কেমিক্যাল রিয়াকশন তো হবেই। এবং প্রেম হবে ঝড়ের মতো কিছু বুঝে ফেলার আগেই। যুগে যুগে চিত্র নির্মাতাদের প্রেমের ক্ষেত্রে এটা ফেভারিট ফরম্যাট। মোহিত সুরির ছবিতে এমন অনুভূতির তীব্র কেমিক্যাল রিয়াকশন আমরা আগেও দেখেছি এবং তার সঙ্গে নেশা ধরানো মিউজিক। সাইয়ারাও ঠিক সেই ফরম্যাটকেই অনুসরণ করে। তেমনই এক মেয়ে বাণী যার প্রেমিক তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। ভেঙে যায় বিয়ে। মেয়েটি নিজের দুঃখ মানিয়েই নিয়েছিল। এমন সময় তার জীবনে প্রায় ঝড়ের মতো আসে কৃষ— উঠতি ব্যান্ড গায়ক। মেয়েটি কবিতা লেখে। ছেলেটি গান গায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গল্পের সাহায্যে তারা পরস্পরের কাছে আসে। মেয়েটি এমপ্যাথ, ফলে খুব সহজেই উদ্ধত, সব সময় রেগে থাকা কৃষের দুর্বলতা সহজেই ধরে ফেলে, তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। প্রেম হয়েই যায়, তবে বাঁচোয়া অন্যান্য ছবির মতো লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট নয়। এবারে এই প্রেমের পথে ভিলেন কে হবে? পরিচালক ঠিক করলেন সেটা হবে মেয়েটির অসুস্থতা। মেয়েটির মধ্যে আর্লি অ্যালজাইমারের লক্ষণ ধরা পরে। এর মধ্যে ফিরে আসে পূর্ব প্রেমিক। ফলে অতীত, বর্তমান প্রেমের ছায়াপথের অলি-গলি একাকার হয়ে যায়। মেয়েটির অসুস্থতার প্রকাশ যেভাবে এই ছবিতে দেখানো হয়, তা নিয়ে অ্যালজাইমার রোগটি সম্পর্কে খানিক বিভ্রান্তি তৈরি হয়। অ্যালজাইমারের রিপ্রেজেন্টেশন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কিনা তা বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কিন্তু মেয়েটির ভুলে যাওয়ায় পর যে অবস্থায় সে দুই বছর থাকে, তারপর এক লহমায় সব মনে পড়ে যাওয়া বেশ অবাস্তব। মেনস্ট্রিম হিন্দি ছবিতে কে আর বাস্তব খুঁজতে আসে? তবে হলিউডে আজকাল মেনস্ট্রিম ছবিতে এই টেকনিক্যাল দিক বা রিসার্চের বিষয়গুলো সিরিয়াসলি দেখা হয়— সেখানে ভুল ত্রুটি যাতে না হয় সেই দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। আমি অ্যালজাইমার বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু পর্দায় যা দেখলাম সেটা বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি।

‘সাইয়ারা’র মূল আকর্ষণ হল অহন পান্ডের উপস্থিতি, অহন-অনীতের কেমিস্ট্রি এবং ছবির গান। টাইটেল গানটি ছাড়াও অন্যান্য গানগুলোও ভীষণ শ্রুতিমধুর। কানে বাজে। প্রথম ছবিতে অহন সবরকম ভাবেই দর্শকদের মন জয় করেছে। এলোমেলো চুলে এই ছটফটে ছেলেটির প্রেমে না পড়ে উপায় নেই। তার চোখ কথা বলে। এই ছবির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলো কথা বলায় নয়, বরং নীরবতায়। যেভাবে তাকালে সব কথা বলা হয়ে যায়, যেভাবে তাকালে প্রেম হয়ে যায় অহন পাণ্ডে সেইভাবে তাকাতে পারেন। এবং অনীত তার নিষ্পাপ মুখের সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পেরেছেন এই ছবিতে। আবেগ এই ছবির বড় অস্ত্র। আর এই প্রেমের জলধোয়া, অশ্রুস্নাত আবেগ দর্শক খুব মিস করছিলেন বড় পর্দায়। বিশুদ্ধ এই আবেগই ‘সাইয়ারা’র চালনাশক্তি। এটা ভেবে একটু আশ্বস্ত হলাম যে, ‘অ্যানিমাল’-এর যুগে ভায়োলেন্স, মিসোজিনি, পিতৃতন্ত্রের পাশে জয় হয় প্রেম, ভালোবাসা, প্যাশন এবং ‘সাইয়ারা’র ।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ