সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবদ্দশায় বিতর্কে জড়িয়েছিলেন একাধিকবার, মৃত্যুর পরও সেই বিতর্ক পিছু ছাড়ল না জুবিন গর্গের (Zubeen Garg Death)! একদিকে যখন অসমজুড়ে ভূমিপুত্রের শেষকৃত্য কোথায় হবে? তা নিয়ে জোর তরজা, তখন অন্যদিকে জুবিনের রহস্যমৃত্যুতে ষড়যন্ত্রের আঁচ পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
শুক্রবার সিঙ্গাপুরে মৃত্যু হয় গায়কের। প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন জুবিন। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ঘণ্টা দুয়েক আইসিইউতেও রাখা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি! হাসপাতালের বিছানাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জুবিন গর্গ। তবে এহেন ‘ত্বত্ত’ মানতে নারাজ অসমবাসীদের একাংশ। ইতিমধ্যেই মরিগাওঁ থানায় উদ্যোক্তা শ্যামকানু মহন্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন জনৈক আইনজীবী রাতুল বোরা। এবার বিদেশের মাটিতে গায়কমৃত্যুতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
শনিবার সকালে অসমের সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হিমন্ত জানান, “আমরা সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যাতে, ময়নাতদন্ত না করা হয়। তবে অসমে যেহেতু মামলা রুজু হয়েছে, তদন্তের দাবিও উঠছে, তাই সিঙ্গাপুর প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। শনিবার ময়নাতদন্তের পরই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে জুবিনের মরদেহ তুলে দেবে সিঙ্গাপুর প্রশাসন। তাঁরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন। এদিকে অসম থেকে কোনও ‘অসৎ উদ্দেশে’ গায়ককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখছে অসম পুলিশ।” এরপরই বিস্ফোরক দাবি করলেন হিমন্ত! অসমের মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “সোশাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে এরকম খবরও কানে এসেছে যে, বৃহস্পতিবার রাতে এক পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন জুবিন। সেখানে কিছু হয়েছে কিনা, তেমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেই প্রেক্ষিতেই চতুর্থ নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালের উদ্যোক্তা-সহ জুবিনের সঙ্গে এদিন যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সকলেই তদন্তের আওতাভুক্ত।” অসমের সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর আর্জি, “কারও কাছে কোনও প্রমাণ থাকলে কিংবা কেউ সাক্ষী দিতে চাইলে, আপনারা সত্ত্বর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
তিনি জানালেন, সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষ বিমানে ভায়া দিল্লি হয়ে শনিবার গভীর রাতে কিংবা রবিবার ভোরে গুয়াহাটিতে পৌঁছবে জুবিনের মরদেহ। প্রথমে গায়কের আদিবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে একঘণ্টা রাখার পর সরুসোজাই স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হবে মরদেহ। যেখানে প্রিয় গায়ক, ভূমিপুত্রকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন অনুরাগীরা। সেই প্রেক্ষিতেই হিমন্তের আর্জি, “স্টেডিয়ামে সবরকম ব্যবস্থা থাকবে। আপনারা অযথা জুবিনের বাড়িতে কেউ ভিড় করবেন না। এই একঘণ্টা সময় ওঁর পরিবারকে একান্তে থাকতে দিন। ওঁদের শোকপালন করতে দিন।”
জুবিনের শেষকৃত্যে যে অসমের রাজপথে জনসমুদ্র বইবে, সেকথা হলফ করে বলা যায়। তার জন্যেও কোমর বেঁধে প্রস্তুত অসম সরকার। হিমন্ত জানিয়েছেন, “যানজট এড়ানোর জন্য মূল সড়কে ট্রাক, বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়াও সরুসোজাই স্টেডিয়ামে কড়া সুরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি গুণগ্রাহীদের জন্য জল, খাবারের ব্যবস্থাও থাকবে।” এসবের মাঝেই ভূমিপুত্রের শেষকৃত্য নিয়ে আবার ‘নামনি’ (লোয়ার) ও ‘উজনি’ (আপার) অসমের মধ্যে তুমুল তরজা!
জুবিন গর্গ যেহেতু লোয়ার অসম, কাহিলিপাড়ার বাসিন্দা, সেই প্রেক্ষিতে সেখানকার স্থানীয়দের দাবি গায়কের শেষকৃ্ত্য তাঁর আদিবাড়ির মাটিতেই হোক। অন্যদিকে জোড়হাটের ভক্তদের দাবি, গুয়াহাটিতে যেহেতু ভূপেন হাজারিকার সমাধি রয়েছে এবং তেজপুরে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা ও জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালের সমাধি রয়েছে, তাই সেই সংস্কৃতি অনুযায়ী জুবিনের স্মৃতিও জোড়াহাটেই থাকুক। বিশেষ করে ‘উজনি’ (আপার) অসমের গুণমুগ্ধরা এটাই চাইছেন। এপ্রসঙ্গে হিমন্তের সাফ কথা, “এই বিষয়ে সরকার একা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এরজন্য শিল্পী-সাহিত্যিকদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন। সর্বোপরি জুবিনের পরিবার কী চাইছে? তাঁদের মতামত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখে তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জুবিনের শেষকৃত্য কোথায় হবে?” জুবিনের শেষকৃত্যের দিন অসমের স্কুল-কলেজে ছুটির ঘোষণাও করেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.