সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কন্নড় ভাষার উৎস নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে কর্নাটকের উচ্চ আদালতে ভর্ৎসনার মুকে পড়তে হয়েছে কমল হাসানকে। ‘ঠাগ লাইফ’ সিনেমাকে কর্নাটকা ফিল্ম চেম্বার অফ কর্মাসের তরফে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু সেখানেই তাঁকে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি প্রশ্ন ছোড়েন, ‘আপনি কি ইতিহাসবিদ?’ আদালতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে কন্নড় বিতর্কে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে মাঠে নামলেন কমল হাসান।
কর্নাটকা ফিল্ম চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি নরসিংহালুকে চিঠি দিয়ে দক্ষিণী মেগাস্টার লেখেন, “খুব খারাপ লাগছে যে ‘ঠাগ লাইফ’-এর অডিও লঞ্চে কিংবদন্তি ডঃ রাজকুমারের পরিবারের উদ্দেশে, বিশেষ করে শিব রাজকুমারের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ থেকেই যে মন্তব্য করেছিলাম, সেটার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এবং কোন প্রেক্ষিতে একথা বলেছি, সেই প্রেক্ষাপট থেকেই সরে গেল বিষয়টা। আমি শুধু এটুকুই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, আমরা সকলে এক পরিবারের সদস্য এবং কোনওভাবেই কন্নড়কে ছোট করতে চাইনি। কন্নড় ভাষার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নিয়ে কোনও বিতর্ক তৈরি করার অভিপ্রায় আমার ছিল না। তামিলের মতো কন্নড় ভাষারও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, যা আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রশংসা করে আসছি।” সেই চিঠিতে কমল হাসান এও উল্লেখ করেছেন যে, “আমার গোটা ফিল্মি কেরিয়ারে কন্নড় ভাষী সম্প্রদায়ের থেকে আমি যে পরিমাণ স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছি, সেটা চিরকাল গর্বের সঙ্গে লালন করেছি। সজ্ঞানেই বলছি, কন্নড় ভাষার প্রতি আমার ভালোবাসা অকৃত্রিম এবং কর্নাটকবাসীদের তাঁদের মাতৃভাষার প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে, সেটা আমি শ্রদ্ধা করি।”
প্রবীণ অভিনেতার সংযোজন, “তামিল, কন্নড়, তেলুগু, মালায়ালাম এবং এই দেশের সমস্ত ভাষাকে আমি সম্মান করি। এবং আমি চিরকাল সব ভাষায় সাম্যের কথা বলে এসেছি। যে কোনও একটি ভাষার উপর অন্য কোনও ভাষার আধিপত্যের ঘোর বিরোধী আমি। কারণ এই ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেশের একতা নষ্ট করে। আমি যে প্রেক্ষিতে কথাগুলো বলেছি, আশা করি, কর্নাটকবাসী সেটা বুঝবে। এই ভুল বোঝাবুঝি শেষ হোক, অন্তর থেকে চাই।” তবে নিজের ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের ব্যাখ্যা করলেও একটিবারের জন্যেও গোটা চিঠিতে ক্ষমাপ্রার্থী শব্দটি উল্লেখ করেননি কমল হাসান।
কন্নড় বিতর্কযজ্ঞে আরও ঘৃতাহূতি পড়ে প্রবীণ তারকার ‘একগুঁয়েমি’তে! দমে যাওয়ার পাত্র নন কমল। অভিনেতা পালটা সুর চড়িয়েছিলেন এই বলে যে, “আমি যদি ভুল বলে থাকি, তাহলেই ক্ষমা চাইব, নইলে নয়।” উচ্চ আদালতে মামলার শুনানিকালীন সেপ্রসঙ্গ উত্থাপন করেই বিচারপতি এম নাগাপ্রসন্ন সরাসরি তীব্র ভর্ৎসনা করেন কমল হাসানকে। বলেন, “কারও ভাবাবেগে আঘাত করার অধিকার নেই কোনও নাগরিকের। জল, জমি এবং ভাষা, নাগরিকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার ভিত্তিতেই এই দেশে পৃথক প্রদেশ সৃষ্টি হয়েছে।” কমল হাসানের কান্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। একজন খ্যাতনামা মেগাস্টার হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো এমন মন্তব্য করতে পারেন, সেপ্রসঙ্গে কোর্টেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কমল হাসানকে। বিচারপতি বলেন, “কোনও ভাষার উৎস অন্য কোনও ভাষা হতে পারে না। আপনার দাবির নেপথ্যে তথ্যপ্রমাণ কোথায়? আর এর জেরে কী ঘটল? সম্প্রীতি নষ্ট হল। আর কর্নাটকের বাসিন্দারা আপনার কাছ থেকে কী চেয়েছে? শুধুমাত্র ক্ষমা। আর এমন পরিস্থিতি তৈরি করার করে আপনি বলছেন ক্ষমা চাইবেন না? কীসের ভিত্তিতে কর্নাটক বাসীদের ভাবাবেগে আঘাত করলেন আপনি? আপনি ভাষাবিদ না ইতিহাসবিদ?” ঠিক এর পরই মুখ খুললেন কমল হাসান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.