রাজ চক্রবর্তী: রাত পোহালেই পিতৃদিবস। চাইলে অবশ্য নিত্যদিনই সম্পর্ক উদযাপন করা যায়। তবে বাবা হওয়া আমার জীবনের সেরা অনুভূতি। প্রথমে ছেলের বাবা, তার পর কন্যাসন্তানের বাবা হলাম। ইউভান আর ইয়ালিনীর জন্যই বর্তমানে জীবনের সবথেকে সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ওদের ঘিরেই আমাদের জীবন। সিনেমা, সিরিজ, রাজনীতির কাজ সামলেও ওদের দুজনের জন্য সময় রাখি। আসলে আমি টাইম ম্যানেজমেন্টে খুব বিশ্বাসী। আমার বিশ্বাস, সবকিছুর জন্য সময় ভাগ করে নিলে জীবনের সব ভূমিকাই সমানভাবে পালন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আমার টিমের সঙ্গেও কিছুটা কৃতীত্ব ভাগ করে নেব। ওঁরা প্রত্যেকে আমাকে ভীষণ সাহায্য করেন। বাড়িতেও আমার মা নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটান। আসলে শিডিউলটা সেভাবেই সাজিয়ে নিই। ইউভান আর ইয়ালিনী যেন কখনও একা না থাকে বা একাকীত্বে না ভোগে, সেদিকে সবসময়ে আমাদের নজর থাকে। তবে বাবা হওয়ার পর একটা বিশেষ অনুভূতি হয়। সেটা হল, বাড়ি থেকে বেরনোর পরই, মনে হয় কখন ফিরব? সময় গুনতে থাকি কখন বাড়ির দরজা খুলে সন্তানদের মুখ দেখতে পাব। ইউভান এসে ছুটে জড়িয়ে ধরে। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে, ইয়ালিনী এখন দাদাকে নকল করতে শিখে গিয়েছে। তাই ইউভানের পিছন পিছন ও নিজেও ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আদর করে।
একটু আগেও এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে ইউভান, ইয়ালিনী আমার অফিসে এসে সময় কাটিয়ে গেল। ওরা কখনও কখনও আবার শুভশ্রীর শুটিংয়েও চলে যায়। আসলে মা-বাবা হিসেবে আমরা কোনও না কোনওভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করি। আবার অনেক সময় এরকমও হয়েছে যে আমি বা শুভশ্রী দুজনেই হয়তো কাজের সূত্রে অনেকটা সময় বাইরে রয়েছি, তখন আমরা ওদের ডেকে নিই। যত ব্যস্ত শিডিউল হোক না কেন, ইউভান-ইয়ালিনীর সঙ্গে প্লে জোনে গিয়ে খেলাধূলা করার চেষ্টা করি। এটা শুধু ওদের জন্য নয়, আমাদের জন্যও করি। কারণ ইউভান, ইয়ালিনী আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে। এরপর চাইলেও আমি আর শুভশ্রী ওদের শৈশব ফিরে পাব না। ভবিষ্যতে ওদের নিজেদের জগৎ তৈরি হবে। পড়াশোনা কিংবা নিজেদের মতো করে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন হয়তো আমাদের সন্তানরা আমাদেরই সময় দিতে পারবে না। তাই, এখনই সবটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।
গ্ল্যামার দুনিয়ায় থাকার সুবাদে হয়তো আমাদের দিকে ক্যামেরা তাক করা থাকে, তবে আমি আর শুভশ্রী দুজনেই মাটিতে পা রেখে চলা পছন্দ করি। আমাদের কাছে আমরা নই, বরং কাজটাই ‘সেলিব্রিটি’। ব্যক্তিগতজীবনে আমরা সাধারণ মানুষের মতোই চলতে ভালোবাসি এবং চলিও। আমি বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনতে যাই। ওদের সঙ্গে সুইমিং করি। যেখানে ঘুরতে যাই, ওদের নিয়ে যাই। আর পাঁচজন মা-বাবা যেভাবে সন্তানদের লালন-পালন করেন, যেরকম জীবনযাপন করেন, আমরাও সেভাবেই থাকি। কাজ সেরে বাড়িতে ফেরার পর হাতে সময় থাকলে ইউভান, ইয়ালিনীদের খাইয়েও দিই। ‘সেলিব্রিটি’ ব্যাপারটার সঙ্গে আমি আসলে এখনও অতটা সড়গড় নই।
ইউভানের প্রিয় অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করা। বাড়ি ফিরলেই আমাকে বলবে- তুমি খালি গা হয়ে যাও। ও নিজেও তাই করবে। তার পর শুরু হয় আমাদের যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা। সুযোগ বুঝে তখন ওকে জাপটে ধরে চুমু খেয়ে নিই। ওই যে সারাদিন পর ওর ছোঁয়া, ওর গায়ের গন্ধ পাওয়া, ওকে কোলে নিয়ে গল্প করা, এগুলোই জীবনের সেরা প্রাপ্তি। ইয়ালিনী আবার ভীষণ বাবা ন্যাওটা। সারাদিন ‘বাবা-বাবা’ করে। ওর ওই আধ আধ উচ্চারণে ডাকটা… আহা! মা কাছে থাকলেও ইয়ালিনী আমাকে চোখে হারায়। এই যে নিঃশর্ত ভালোবাসা, এটাই তো সব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.