সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেক্ষাগৃহে পুজো রিলিজের স্লট পাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার সকালে একটি পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ। পুজোর মরশুমে চারটি সিনেমাই যেন সমান সংখ্যক স্লট পায় কিংবা স্লট পাওয়া নিয়ে যেন কোনও এক তারকার দিকে পাল্লা ভারী না হয়। বাংলা সিনেমা তথা টলিউডের ক্যাশবাক্স চাঙ্গা করার স্বার্থে তাঁর এহেন পোস্টের পালটা প্রযোজক রানা সরকার সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলেন, ‘কুনাল ঘোষ কেন দেব বিরোধী? কিংবা বাংলা সিনেমা নিয়ে এত কথা কেন বলেন তিনি?…’ প্রযোজকের পোস্ট নজর এড়ায়নি তৃণমূল নেতার। অতঃপর চাঁচাছোলা ভাষায় রানাকে জবাব ছুড়তেও পিছপা হননি তিনি।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে টলিউডের তাবড় পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশকরা বৈঠক করেন। সেখানেই চুক্তি হয়, সব ছবিকে সমান সংখ্যক হল দিতে হবে। অন্তত প্রথম সপ্তাহে। তারপর বক্স অফিস মার্কশিট দেখে বিচার করার অধিকার পাবেন হল মালিকেরা। কিন্তু বর্তমানে টলিপাড়ার অন্দরে গুঞ্জন, চারটি পুজো রিলিজের ভিড়ে মাত্র একটি তারকাখচিত মেগাবাজেট পিরিয়ড ড্রামার দিকেই নাকি হলের স্লট পাওয়ার পাল্লা ভারী! কানাঘুষো শুরু হতেই মীমাংসা চেয়ে পোস্ট করেছিলেন কুণাল ঘোষ। তাতেই একাংশের দাবি, তিনি ‘টলিউড সুপারস্টারকে খোঁচা দিয়েছেন’! এমন আবহে ঘৃতাহূতির কাজ করে রানা সরকারের পোস্ট। এবার পালটা জবাবে ধোঁয়াশা সরিয়ে কুণাল ঘোষ স্পষ্ট জানালেন, “তিনি অভিনেতা দেবের বিরোধী নন।”
রানা সরকার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কুনাল ঘোষ কেন রঘু ডাকাতের পেছনে লাগছেন?’ এপ্রসঙ্গে ‘নেতা-অভিনেতা’র চাঁচাছোলা জবাব, “কুণাল ঘোষ নায়ক দেবের বিরোধী নয়। ‘টেক্কা’র আগের ইন্টারভিউটা মনে আছে? কিন্তু যে বা যারা এই সরকারকে ফেলার প্রচার করছে, প্রতিবাদের নামে কুৎসা করছে, তাদের কয়েকজনকে নিয়ে ২০২৬ সালের আগে ছবি করা, সেটাও কি ইঙ্গিতবাহী? যে নায়িকা বাংলায় সন্তানের জন্ম দিতে লজ্জা পান, তাকে নিয়ে ছবির জন্ম দিয়ে কী বার্তা দিচ্ছেন? যে মিঠুনদা সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা করছে, তাকে নিয়ে আদিখ্যেতা, কীসের ইঙ্গিত? আমি দেবকে পছন্দ করি কিনা, দেব বুকে হাত রেখে বলুক। ওসব পর্ব আপনি জানেন না হয়তো। আমি ব্যক্তিগত বিষয় লিখতে চাই না।” তাঁর সংযোজন, “আমি ‘ধূমকেতু’র জন্য লাগাতার প্রচার করেছি। তাহলে কেন রঘু ডাকাত বিরোধী হব? ‘বিনোদিনী’ নিয়ে আমি কতটা ইমোশনালি ইনভলবড ছিলাম, রুক্মিনীকে জিজ্ঞেস করে নেবেন। একটা কথা আছে জানেন তো, পড়ল কথা সবার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে। আপনার গায়ে বাজল, এবং আপনি লাফাচ্ছেন। ছেলেমানুষ। চাঁদ টাইপের। দেখতে ভালো, কিন্তু অন্যের আলোয় আলোকিত। আমি রঘু ডাকাতেরও সমর্থক, কারণ আমি বাংলা ছবির ভক্ত।”
‘ধূমকেতু’ প্রযোজকের ‘মাথাব্যথা’ কুনাল ঘোষের নেপথ্যে টলিউডের কোন প্রোডাকশন হাউস? কেনই বা তিনি বাংলা সিনেমা নিয়ে কথা বলেন? এপ্রসঙ্গেও পয়েন্ট সহযোগে বাংলা সিনেমার দর্শক, ধারক হিসেবে কুণাল ঘোষ মনে করিয়ে দিলেন, “আমি বাংলা ছবির দর্শক। পাশাপাশি একটি টেলিফিল্ম পরিচালনা করেছিলাম ২০১২ সালে। পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবিও প্রযোজনা করেছি। লাইন প্রোডিউসার ছিল রুদ্রনীলের কোম্পানি। অভিনয় করেছিলেন- ব্রাত্য, রাহুল, শাশ্বত, লকেট, পরম, পরাণবাবু এবং অতিথি শিল্পী মিঠুনদা। আমি ইমপা ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলাম। আমি বাংলা নাটক ও সিনেমার সাধ্যমত প্রচার করি। এবং আমার লেখা উপন্যাস থেকেও একটি ওটিটির কাজ হচ্ছে।” কুণালের সংযোজন, আমার ভালোলাগা থেকে কোনও সিনেমা, নাটককে দর্শকের কাছে তুলে ধরি। গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, থিয়েটার আমার ভালো লাগে। একটা বিষয় আপনার কথা থেকে পরিষ্কার, কোথাও আপনাদের প্রোডাকশনের প্রশংসা দেখলে বুঝতে হবে পেছনে আপনারাই আছেন। আপনারাই সাজিয়ে করান।
রানা প্রশ্ন ছোড়েন, ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে কুনাল ঘোষের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে কথা বলা কি কোনও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি? এপ্রসঙ্গে রানাকে ‘কাল কা যোগী’ বলে কটাক্ষ করে কুণালের সাফ কথা, “২০২৬ সালের আগে কেন, অনেকদিন ধরেই তো বলি। সিনেমা নিয়ে বলি, লিখি। অ্যাকাডেমি, গিরীশে নাটক দেখি। ‘কাল কা যোগী’রা অনেকেই এসব বুঝবে না। কিছু টাকা থাকা আর দুজন হিরোর সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেই বাংলা সিনেমার দাদাগিরির অধিকার পাওয়া যায় না। আর যদি ২০২৬ ধরি আপনার কথায়, তাহলে টাটকা টাটকা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসাকারীদের নিয়ে ভোটের মুখে নাচানাচি কীসের ইঙ্গিত?” সবশেষে নিজের প্রথম পোস্টের নেপথ্যের আসল কারণও ব্যখ্যা করে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। বাংলা ছবির একজন শুভাকাঙ্ক্ষী তথা দর্শক হিসেবে তাঁর মন্তব্য, “পুজোয় চারটে সিনেমাই প্রথম সপ্তাহে সমান সুযোগ পাক। তারপর দর্শকের সাড়া অনুযায়ী হল মালিক সিদ্ধান্ত নিক।” প্রযোজকের উদ্দেশে কুণালের প্রশ্ন, “এই চুক্তির কথা বললেই আপনি লাফাচ্ছেন কেন?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.