‘রক্তবীজ ২’ মুক্তির আগে আড্ডায় হিট-মেকার জুটি নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
সিক্যুয়েল করার ভাবনাটা পাকল কীভাবে? ‘রক্তবীজ’ সুপারহিট হওয়ার কারণেই কি?
নন্দিতা রায় : পাবলিক ডিমান্ড (হাসি)। যেখানে গেছি লোকজন বলেছে, ‘আমাদের সিক্যুয়েল চাই। হল-এ চিৎকার করেছে সকলে ‘রক্তবীজ টু’ চাই। তাদের তুষ্ট করার জন্য আমাদের ‘রক্তবীজ টু’ করতেই হত। (হাসি)
দু’বছরের মধ্যে আপনারা সিক্যুয়েল নিয়ে এলেন। এটা কি সহজ কাজ?
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় : গল্পটা ভিতরেই ছিল। প্রথমটা তো খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ড নিয়ে।
নন্দিতা : লিঙ্ক আছে পরেরটার সঙ্গে।
শিবপ্রসাদ : খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের অনেকগুলো থিয়োরি ছিল। তার ভেতরে একটা তত্ত্ব নিয়ে আমরা পার্ট ওয়ান করেছি। এটা দ্বিতীয় তত্ত্ব। যেটা ভাবা হয়েছিল, সেটা নিয়ে প্রচুর লেখালিখিও হয়েছে। ‘রক্তবীজ পার্ট ওয়ান’ যখন হয়েছিল, সিনেমাটা যখন শেষ হয়, আমরা দেখাতে পেরেছিলাম যে, কীভাবে জুড়ে রয়েছে। এই সিনেমাটার ক্ষেত্রেও আমার মনে হয়, আমরা গল্পতে যা বলতে চেয়েছি, ঐতিহাসিক ভাবেই যে তত্ত্বটা জুড়ে আছে, এই সিনেমার ভিতরে সেটা আছে।
মুনির আলম (অঙ্কুশ) এন্ট্রি নিচ্ছে, এমন জায়গায় শেষ হয় ছবিটা। দুটো ছবির লিঙ্ক কোথায়?
শিবপ্রসাদ : মুনির আলমের থেকেই গল্পটা আবার শুরু হয়। এটুকুই বলব (হাসি)।
ট্রেলার দেখে বোঝা যায়, ভারত-বাংলাদেশ দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সৌহার্দ্যের প্রসঙ্গ এসেছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?
নন্দিতা : এটা অনেক আগের সময়।
শিবপ্রসাদ : সময়টা ২০১৪-২০১৫-র গল্প। এখনকার নয়। যার সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির যোগ নেই। আর এই আজকে সিনেমার ভিতরে যে সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে, সেই সম্পর্কটা আমরা সবাই চাই। ভারতের সমস্ত প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হোক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ এটাই আমরা চাই। ভিক্টরদার যে গানটা বেরিয়েছিল, সেখানে যখন আবির ভিক্টরদাকে প্রশ্ন করে, যে আপনার জন্ম এদেশে, শ্বশুরবাড়ি নড়াইলে। কোনটা বেশি প্রিয়? তখন উনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃপুরুষের বাড়ি খুলনাতে আর কাজি নজরুল ইসলামের জন্মস্থান বর্ধমানের চুরুলিয়াতে। অর্থাৎ দুই দেশ মিলেমিশে একাকার। সেই কথাই সিনেমাতে রয়েছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি চরিত্রে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। শেখ হাসিনার আদলে তৈরি চরিত্রে সীমা বিশ্বাস। দু’জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছায়ায় তৈরি চরিত্র, তাঁদের বাস্তব জীবনের ছায়া ছবিতে কতটা?
শিবপ্রসাদ : যতটা সংবাদপত্র-পত্রিকায় পেয়েছি, বা পেয়ে থাকি। ‘রক্তবীজ’ পার্ট ওয়ানে ওটাই অনুসরণ করেছি। আমরা এমন কোনও জিনিস সিনেমায় দেখাইনি, যা রক্তবীজ পার্ট ওয়ানেও দেখাইনি, বা পার্ট টু-তেও দেখাব না, যা ওটার বাইরে।
নন্দিতা : মন গড়া কোনও ঘটনা আমরা দেখাব না, প্রত্যেকটা ঘটনায় বাস্তবের ছোঁয়া আছে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় একসময় ভদ্রবিলা গ্রামে গিয়েছিলেন ক’টাদিনের জন্য, নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই জায়গা কি দেখতে পাবে দর্শক?
শিবপ্রসাদ : সেটা বলা যাবে না (হাসি)। সিনেমাটা দেখতে হবে।
পারিবারিক ছবি করতে করতে হঠাৎ করে অ্যাকশন থ্রিলার, সেই দিকে চলে গেলেন কেন আপনারা?
শিবপ্রসাদ : ‘বহুরূপী’, ‘রক্তবীজ’ প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প বলি। শান্তনু রায়চৌধুরি যিনি, রূপমন্দির সিনেমা হলের মালিক, তিনি বারুইপুর শো হাউসেরও মালিক। তিনি ইন্ডাস্ট্রির খুব নামকরা একজন এগজিবিটর। উনি আমাকে ফোন করেছিলেন, যে একটা প্রবলেম হচ্ছে, ‘রোজ দুপুরবেলার ট্রেনটা আমি মিস করছি। রোজ হল-এ বসে দেখছি দুপুরবেলা পিল পিল করে লোক আসছে ‘বহুরূপী’ দেখতে, সব লেডিস। কারণটা খুঁজতে গিয়ে হল-এ গিয়ে দেখলাম।’ উনি অবাক হয়ে বলেন, ‘ছবি বানিয়েছ থ্রিলার আর পুরো ফিমেল অডিয়েন্স দেখছে! এরকম জিনিস দেখিনি। একটা ডাকাত আর পুলিশের গল্প শুধু মেয়েরা এসে দেখছে।’ একই জিনিস ঘটেছে ‘রক্তবীজ’-এর ক্ষেত্রে। থ্রিলার কিন্তু মা-মাসি সকলে দেখেছে আমার মনে হয় এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
নন্দিতা : আমাদের থ্রিলারগুলোও ফ্যামিলি এন্টারটেনার হয়।
মিমি চক্রবর্তীর বিকিনি লুক, নুসরতের আইটেম ডান্স, ধুন্ধুমার অ্যাকশন, ছবি হিট করাতে আপনার কোনও তাস ফেলতে বাকি রাখছেন না
নন্দিতা : (হাসি) তাস মনে করি না তো। আইটেম এর আগে অঙ্কুশ করেছিল। পরে কৌশানীর একটা নাচের দৃশ্য ছিল, যেটা সিনেমার অংশ। আমাদের সত্যি ভালো লাগে এসব করতে। যা গল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে।
যতই বলুন, আসল লড়াই তো সেই দেব বনাম শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা রায়।
নন্দিতা : না, আমার তো মনে হয় না। আমার মনে হয় দেব ইজ অ্যান ইন্ডিভিজুয়াল প্রোডিউসার, ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাক্টর। আর ‘উইন্ডোজ’ একটা ইন্ডিভিজুয়াল প্রোডাকশন হাউস। আমাদের লড়াইটা কোথায় জানো, দর্শককে হল-এ নিয়ে আসা। দর্শককে থিয়েটারে আনতে পারলে, তাদের অভিনন্দন, আমাদেরও বাহবা দেওয়া উচিত। ওর গোল আর আমাদের গোল একই মনে হয়। যে দর্শক যেন বাংলা ছবি দেখতে আসে হল-এ।
‘রক্তবীজ টু’-তে আগের জুটি আবির-মিমি আর নতুন জুটি অঙ্কুশ-কৌশানী। দুটি জুটির তুলনায় কাকে এগিয়ে রাখবেন?
নন্দিতা : দুটি জুটিই এত ভালো কাউকে এগিয়ে রাখা যাবে না। এত ভালো করেছে। (হাসি)
শিবপ্রসাদ : সকলে উচ্ছসিত। চারজনই দারুণ।
এই ছবির শুটিংয়ের সময়ে অনেকে চোট পেয়েছিলেন।
শিবপ্রসাদ : হ্যাঁ, আবির চোট পেয়েছিল। মিমি মেজর আঘাত লেগেছিল স্টান্ট করতে গিয়ে। আবির ৩০ ফুট উঁচু বিল্ডিংয়ের উপর থেকে নিজে স্টান্ট করেছে। মিমি নিজে অ্যাকশন করতে ভীষণ পছন্দ করে। দুজনেই নিজে প্রত্যেকটা স্টান্ট দিয়েছে। মিমির ভিতরে একটা ডাকাবুকো ব্যাপার আছে। অঙ্কুশ তো মারাত্মক। ঝাড়খন্ডের পাহাড়ের মাঝে নিজে দড়ি বেঁধে উঠেছে।
প্রাইম টাইমে বাংলা ছবি বাধ্যতামূলক হয়েছে। তা সত্ত্বেও চারটে ছবির হল পাওয়া এবং শো টাইমিং নিয়ে লড়াইয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রমণও চলছে। কী বলবেন?
শিবপ্রসাদ : এটা তো কাম্য ছিল না। সবাই সমান সুযোগ পাবে, তেমনটাই কথা হয়েছিল মিটিংয়ে। আর ব্যক্তিগত আক্রমণ একেবারেই কাম্য নয়, যদি কেউ করে থাকেন, বলব লক্ড প্রোফাইল থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ যাঁরা করেন তাঁরা তো মানুষ নন, তারা যন্ত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.