বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: পুজোয় বাংলা ছবির প্রচার তুঙ্গে। একদিকে টিম ‘রঘু ডাকাত’, ‘রক্তবীজ টু’ কিংবা ‘দেবী চৌধুরানী’র রণহুঙ্কার, তার পাশে বলা যায় খানিক নীরবে ২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে অনীক দত্ত পরিচালিত ছবি ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রে বাংলাদেশের অভিনেত্রী কাজি নওশাবা আহমেদ এবং আবির চট্টোপাধ্যায়। আবির এই ছবির প্রচার থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন, কিন্তু নওশাবার কলকাতায় এটাই প্রথম বাংলা ছবি। স্বভাবতই তিনি খুবই আবেগপ্রবণ এবং একই সঙ্গে উচ্ছ্বসিত। অনীকের এই ছবি খোঁজে পুরনো কলকাতাকে, আর নওশাবা অভিনয় করতে এসে নতুন করে প্রেমে পড়লেন কলকাতার। “আমার কাছে কলকাতা একটা অনুভূতির নাম। ছোটবেলায় এসেছি এখানে। কলকাতার প্রথম ইমেজ বললেই মনে হয় হলুদ ট্যাক্সি আর তার ভেতরের ধূপ আর ড্রাইভারের পানমশলা খাওয়ার গন্ধ! স্ট্রিট ফুড, মাটির ভাঁড়ে চা, পানি দেওয়া ফুচকা, কফি হাউস, বইয়ের দোকান, শপিং করতে গিয়ে আমার আর বাবার হাঁপিয়ে গিয়ে বসে পড়া, আর মায়ের দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া– এই সব আমার ছোটবেলার স্মৃতি। আমি তো ভাবতেই পারি না– ভিসা করে, প্লেনে চেপে নতুন দেশে এসে দেখি একই দেশ, একই ভাষা। যদি সারা পৃথিবীতে এই বর্ডার ব্যাপারটা মুছে যেত, ভালো হত”, বলছিলেন নওশাবা।
আর্ট নিয়ে মাস্টার্স করেছেন, কী করে এই ছবির সঙ্গে যুক্ত হলেন তিনি, সেও এক গল্প। পিতৃ প্রয়াণের পর ২০২২-এর শেষ এবং ২০২৩-এর শুরুর দিকে ফেসবুকে বাবার উদ্দেশে চিঠি লিখতেন। অনীক দত্তর সঙ্গে সেই লেখার সূত্রে অল্পবিস্তর কথা হত, যদিও নওশাবা খেয়াল করেননি যে আসলে তিনি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর পরিচালকের সঙ্গে কথা বলছেন। যেদিন অনীক দত্ত ছবির কথা বলেন, নওশাবা ভেবেছিলেন প্র্যাঙ্ক। এই ভাবেই যোগাযোগ শুরু। “আমাকে অনীকদা বলেছিলেন, ‘আমার ছবিতে যে অন্যতম চরিত্র সেই মেয়েটিকে আমি বাংলাদেশ থেকে নিতে চাই, আমি তোমাকে স্ক্রিপ্টের অংশ পাঠাব, তুমি রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিও।’ এই ভাবে তিন মাস চলে প্রায়। তারপর আমি নির্বাচিত হই”, জানান অভিনেত্রী। ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ ছবির গল্পের মধ্যেই রয়েছে পুরনো কলকাতার ইতিহাসের অনুসন্ধান। বাংলাদেশ থেকে সাবা (অভিনয়ে নওশাবা) আসে কলকাতায় তার শিকড়ের সন্ধানে। তার মায়ের বাবা অর্থাৎ তার দাদু নাকি পশিমবঙ্গের। আর এই সন্ধান তাকে পৌঁছে দেয় এক ধাঁধার দিকে, যার রহস্য ভেদ করতে পারলে অমূল্য রতন পেলেও পাওয়া যেতে পারে! ‘সাবা’র এই কাজে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ‘তোপসে’ (অভিনয়ে আবির চট্টোপাধ্যায়)। ফলে এই ছবিতে কলকাতা টু কার্শিয়াং সবই পাবে ভ্রমণপিপাসু বাঙালি দর্শক। ‘আর সেই কারণেই এবারে শুটিং করতে এসে আমি যেন অনীকদার চোখ দিয়ে কলকাতা দেখলাম। এ যেন ভিন্নভাবে দেখা। অনেক কিছু জানতে পেরেছি, ঋদ্ধ হয়েছি। আবিরদা এবং আমার অন্যান্য সিনিয়র কো-আর্টিস্ট যাঁরা তাঁদের সঙ্গে গ্রিন রুমে আড্ডা দিতে গিয়ে কলকাতাকে চিনেছি’, স্মৃতিচারণ করছিলেন নওশাবা।
এই মুহূর্তে ঢাকায় শুটিং করছেন, কিন্তু তাঁর মন পড়ে রয়েছে কলকাতাতেই। তিনি জানালেন, ‘আমি মুখিয়ে রয়েছি কলকাতা যাওয়ার জন্য। কবে ভিসা পাব দেখি। যে টিমের সঙ্গে কাজ করেছি, এতটা সময় কাটিয়েছি, আমার তো একটা অংশ কলকাতাতেই পড়ে রয়েছে। সবার সঙ্গে ছবিটা বড় পর্দায় দেখতে চাই’। আবির চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গ তুলতেই নওশাবা জানালেন, ‘আবিরদা অনেক বড় অভিনেতা, তাঁর একটা ইমেজ আছে কাজের জন্যই, উনি অনেক এগিয়ে যান আমার এই দোয়া রইল। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হল তিনি বড় মনের মানুষ। শুধু আবিরদা কেন, আমি বাকি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, সকলেই আমাকে কমফর্টেবল ফিল করিয়েছেন। কেবল সহ অভিনেতারাই নন, বেণীদি, সোহাগদি, হেমাদি, মুনমুনদি– সকলেই খুব আন্তরিক’। এই ছবিতে কলকাতার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটা ফ্রেমে রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার প্রভাব আর ফেলুদার ভক্ত নওশাবাও। ফোনে তিনি জানালেন, “আমার সবচেয়ে প্রিয় হল ‘সোনার কেল্লা’, বইটা তো বটেই, সিনেমাটাও খুব প্রিয়”।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.