লুক, পোশাক, ফলোয়ার নিয়ে চিন্তিত নন অভিনেতা রাজকুমার রাও। মুম্বইয়ে মালিক ছবির প্রচারে একান্ত আলাপচারিতায় সংবাদ প্রতিদিনকে জানালেন তিনি। সঙ্গে সহ-অভিনেতা মানুষী চিল্লার। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘মালিক’-এর (১১ জুলাই মুক্তি) ট্রেলারে একেবারে নতুন রাজকুমার রাও, যাকে এর আগে কেউ দেখেনি। গত এক-দুই বছরে যে ইমেজ তৈরি হয়েছিল, সেটা ভাঙতেই এই ছবি?
– রাজকুমার : এটা ঠিক যে, এই অবতারে কেউ আগে আমাকে দেখেনি। অভিনেতা হিসাবেও নতুন অভিজ্ঞতা আমার নিজের জন্য। এমন নয়, যে নতুন ইমেজ তৈরি করতে চাই বলে এই ছবি সাইন করেছি, অভিনেতা হিসাবে নতুন-নতুন চরিত্র এক্সপ্লোর করতে চাই। নিজেকে রিপিট করতে চাই না। গত কয়েক বছরে অনেক বেশি কমেডি ছবি করে ফেলেছি, এমন নয়, উপভোগ করিনি। তবু আমার কোথাও মনে হয়েছে এমন ইউনিক কিছু করতে চাই যা আগে করিনি। আর তখনই ‘মালিক’-এ অভিনয় করার সুযোগ এল।
শুনেছি ‘মালিক’-এ গ্যাংস্টারের চরিত্রের জন্য বন্দুক চালানো প্র্যাকটিস করেছেন, চুল-দাড়ি শেভ করেননি?
– রাজকুমার : হ্যাঁ, ঠিকই, দুটোই করেছি!
‘ট্র্যাপড’ ছবির সময়ও ফিজিক্যাল ট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন। কোন চরিত্রের জন্য মেথড অ্যাক্টিং-এর প্রয়োজন, কীভাবে ঠিক করেন?
– রাজকুমার : প্রতিটা চরিত্র অ্যাপ্রোচ করার ধরন আলাদা। ‘স্ত্রী’ বা ‘লুডো’-র মতো কমেডিতে অভিনয় করার সময় এত প্রস্তুতি নিতে হয় না, কারণ সেখানে অনেকটাই ওই মুহূর্তে নিজের মতো করে রেসপন্ড করাটাই মুখ্য। টু বি ইন দ্যাট মোমেন্ট, হ্যাভিং ফান, উইদিন দ্য সিন, উইথ ইওর কো-অ্যাক্টর।
কোনটা বেশি কঠিন?
– রাজকুমার : ‘ড্রামা’ জনার বেশি ক্লান্তিকর বা এগজস্টিং। কারণ কমেডি অনেক বেশি ইমপ্রমটু। কিন্তু কোনও সিরিয়াস ‘ড্রামা’ জনারে কাজ করতে অনেক বেশি প্রিপারেশন লাগে। ফিজিক্যালি এবং মেন্টালি অনেক বেশি ট্যাক্সিং।
সেই ‘এলএসডি’-র সময় কলকাতার পার্ক হোটেলে আপনার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎকার। ১৫ বছর কেটে গিয়েছে। খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে নিজের সম্পর্কে কী জেনেছেন?
– রাজকুমার : নিজের সম্পর্কে কী জেনেছি! উমম.. এটা জেনেছি যে আমি ঠিক পথেই হাঁটছি। আমার সমস্ত এনার্জি, উদ্দীপনা কাজের প্রতি নিবদ্ধ। ভালো চরিত্র, ভালো গল্প, ভালো পরিচালকদের খোঁজ করে চলা ছাড়া আর অন্য কোনও দিকেই মন না দেওয়া। কারণ, সে সব শুধুই বাড়তি, যাকে আমরা বলি ‘নয়েজ’। তোমাকে নিয়ে কটা আর্টিকল বেরল, ফলোয়ার কজন, কোথায় যাচ্ছ বা যাচ্ছ না, কোন পোশাক পরেছ– এই সব কিছু হল বাড়তি নয়েজ। আমি অভিনেতা। আমার কাজ হল, অভিনয়ে মন দেওয়া। লাকিলি আমি ঠিক সেটাই করছি। আর এই ফোকাসটাই আমাকে এতদূর পর্যন্ত এনেছে। ১৫ বছরে এটাই বুঝেছি, অভিনয় ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না।
স্টার অ্যাক্টর হয়ে গেলে সেই অভিনেতার সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা এবং অর্থ জড়িয়ে যায়। যত বেশি সাফল্য, অভিনেতার ছবি তত বেশি আয় করবে, এবং তবেই কোটি টাকা বাজেটের ছবি হবে। এই অঙ্কটা কীভাবে সামলান?
– রাজকুমার : আমি এমন ছবি করতে চাই যেটা প্রযোজক এবং অভিনেতা হিসাবে আমাকেও বেনিফিট দেবে। এমন ১০০ কোটি টাকার ছবি করতে চাই না, যেখানে সব দায়িত্ব আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। এবং ওয়েল মেড ছবি না হলে সেটা সকলের ক্ষেত্রেই নেতিবাচক। আমি অভিনেতা হয়ে অন্য ছবি করে নিতে পারব, কিন্তু ছবি ব্যর্থ হলে প্রযোজকের সেখান থেকে বেরনো মুশকিল। তো অভিনেতা হিসাবে সেই ঝুঁকি আমি নিতে চাই না। বিগ বাজেট ছবি করার সেই তাড়া বা প্রতিযোগী মনোভাব আমার নেই যতক্ষণ না সঠিক প্রোজেক্ট আসে। ছবির গল্প বাজেট ঠিক করে, উল্টোটা নয়। ফলে হাতের কাছে স্টার অভিনেতা থাকলেই বিগ বাজেট ছবি করতে হবে এতে বিশ্বাসী নই।
মানুষী আপনি কেরিয়ার শুরু করেছেন অক্ষয়কুমার, ভিকি কৌশল, এই ছবিতে রাজকুমার এবং প্রসেনজিতের সঙ্গে কাজ করে। সেটা কতটা সাহায্য করেছে আপনার অভিনেতা সত্তাকে?
– মানুষী : আমি তো সবে আমার জার্নি শুরু করেছি। এখনও কী পারি, বা পারি না, কী ভালো লাগছে বা লাগছে না, সেটা পুরোপুরি বুঝতে সময় লাগবে। তবে হ্যাঁ, প্রতিটা ছবির সঙ্গে শিখতে শিখতে গিয়েছি। ‘মালিক’ ছবিটাও আমাকে অনেকটা সাহায্য করেছে নতুন কিছু শিখতে। নতুন দরজা খুলে গিয়েছে।
রাজকুমার আপনি বোধহয় বায়োপিক স্পেশালিস্ট। বেশ কিছু রিয়্যাল লাইফ চরিত্রে অভিনয় করেছেন– ‘শাহিদ’, ‘ওমেরটা’, ‘নিউটন’, ‘বোস’, ‘শ্রীকান্ত’ আর এবার সৌরভ গাঙ্গুলি! কী মনে হয় আপনার কাছে রিয়্যাল চরিত্র কেন বেশি আসে?
-স রাজকুমার : পরিচালকরা যে রিয়্যাল লাইফ চরিত্রের জন্য আমাকে ভাবতে পারেন, ভরসা করতে পারেন, এটা তো দারুণ ব্যাপার! সেই বিশ্বাস তাঁদের আছে যে এটা আমি পারব। ‘শ্রীকান্ত’ করার সময় ভেবেছিলাম, কীভাবে পারব, ভিস্যুয়ালি ইমপেয়ার্ড চরিত্রে প্রথমবার। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম, যে অন্য অভিনেতাদের থেকে কীভাবে আলাদা করতে পারি। দাদার (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) চরিত্র করতেও নার্ভাস লাগছে। কিন্তু একই সঙ্গে খুবই এক্সাইটেড। এটা কত বড় দায়িত্ব আমি সেটা জানি। কারণ দাদাকে সবাই ভালোবাসে, আমরা ওঁর ফ্যান। তবে বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের মতো পরিচালক এই দায়িত্ব নিয়েছেন, আই থিংক আই অ্যাম ইন সেফ হ্যান্ডস।
আর আপনার চেহারা বা লুকটা এমন, যে কোনও চরিত্রে বা চেহারার ছাঁচে বদলে ফেলা যায়। জলের মতো। যে পাত্রে রাখবে, সেই আকার ধারণ করবে!
– রাজকুমার : ওহ! থ্যাংক ইউ, আই টেক দিস অ্যাজ এ কমপ্লিমেন্ট! আর এগজ্যাক্টলি, আমি কোনও নির্দিষ্ট ইমেজে আটকে থাকতে চাই না। পর্দায় সুন্দর দেখতে লাগছে কি না সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না, আমাকে চরিত্রের মতো দেখতে লাগছে কি না সেটায় মন দিতে চাই। যদি আমার চরিত্রকে দেখতে সুন্দর হয়, আমি সেটায় মন দেব, যদি চরিত্র ডিমান্ড করে একমাস চান না করে থেকেছে আমি সেভাবে নিজেকে পর্দায় তুলে ধরব।
আপনার বং কানেকশন খুব স্ট্রং! পত্রলেখা, প্রথম পরিচালক বাঙালি (দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়), এবার দাদার চরিত্রে, এমনকী, আপনি ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে জন্মদিন শেয়ার করেন।
– রাজকুমার : ওহ! তাই নাকি! হ্যাঁ, এটা ঠিকই আমার বং কানেকশন খুব স্ট্রং। স্কুলে আমার সবচেয়ে প্রিয় টিচার ছিলেন বাঙালি, অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রিয় সহপাঠী ছিল বাঙালি, শিল্পা রায়। এবং শিল্পা আমাকে এখনও রাখি পাঠায়। বাঙালিদের সঙ্গে একটা স্পেশাল কানেকশন তো আছেই!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.