পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে ‘টেক্কা’। দেবের প্রোকাশনে সৃজিতের প্রথম ছবি। ‘টেক্কা’ মুক্তির আগে অকপট পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherji)। শুনলেন শম্পালী মৌলিক
এবারের পুজো অন্য বছরগুলোর তুলনায় আলাদা। প্রতিবাদ-আন্দোলনের পাশাপাশি চলছে পুজোর ছবির প্রচার। নিন্দুকরা বলছে, খুব বুদ্ধি করে আপনি বিষয়টা ব্যালান্স করছেন। কী বলবেন?
সৃজিত: শুধু নিন্দুকরা বলছে তা নয়, যারা প্রশংসা করছে তারাও একই কথা বলছে। প্রচার তো কাজের অংশ। ব্যালান্স জিনিসটা যাদের নেই তারা ব্যাপারটা খারাপভাবে দেখছে। আর ব্যালান্স যাদের আছে, তারা ব্যাপারটা ভালোভাবে দেখছে। যারা কলকাতায় বড় হয়েছে, তাদের এই ব্যালান্সটা আলাদাভাবে বুদ্ধি করে করতে হয় না, তাদের এই ব্যালান্স নিয়েই জন্ম। যারা ছোট থেকে কলকাতায়, তারা দেখেছে মিটিং, মিছিল, প্রতিবাদ, তার মধ্যেই দৈনন্দিন জীবনযাত্রা দেখেছে। এবং কৃষ্টিগতভাবে যদি বলি, যারা রবীন্দ্রনাথের প্রেম এবং স্বদেশ, দুটো পর্যায়ের গান শুনে বড় হয়েছে, যারা সলিল চৌধুরীর ‘আজ নয় গুন গুন গুঞ্জন প্রেমের’ শুনেছে এবং ‘না মন লাগে না’ শুনে বড় হয়েছে, যারা কবীর সুমনের ‘বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই, ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই’ শুনে বড় হয়েছে তাদের কাছে এই ব্যালান্সটা সহজাত।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় পুজোর ছবি ‘টেক্কা’-র প্রচার করে যতটা ট্রোলড হয়েছেন তার সিকিভাগও আপনাকে সহ্য করতে হয়নি। কী মনে হয়, সেলিব্রিটিরা সফট টার্গেট হয়ে যাচ্ছেন, বিশেষ করে মহিলারা?
সৃজিত: ডেফিনিটলি। সেলিব্রিটিরা সফট টার্গেট, তার মধ্যে আরও সফট টার্গেট মহিলারা। বিশেষ করে যদি একজন এরকম মহিলা হয়, যে কমপ্লিটলি নিজের নিয়মে জীবন বেছে নিয়েছে, কোনওদিন কারওই কোনও তোয়াক্কা করেনি, তাহলে টার্গেট হিসাবে সে সবচেয়ে সফট। অন্যদিকে আমাকে অনেকে প্রশংসা করছে। প্রচুর পোস্ট আমি শেয়ার করেছি, যেখানে মানুষ বলছে, উনি কিন্তু নিজের সোশাল এনটিটির সঙ্গে পরিচালক সত্তা গুলিয়ে ফেলেননি। বা দুটোকে ইনডিপেনডেন্টলি মেনটেন করেছেন এবং দুটোকে জাস্টিফাই-ও করেছেন। অথচ স্বস্তিকার ক্ষেত্রে একই কাজে, সেটাকে দ্বিচারিতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমার মনে হয়, এই জিনিসটাই আদতে দ্বিচারিতা।
এমন উত্তাল সময়েই কিছুদিন আগে আপনার ‘পদাতিক’ এসেছিল। এবারে ‘টেক্কা’ আসছে পুজোয়। দর্শক সমাগম নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে। কী বলবেন?
সৃজিত: কী আর বলব। অনেকের মতে ‘পদাতিক’ আমার কেরিয়ারের সেরা ছবি। কিন্তু যে সময়ে রিলিজ করেছিল, সেই সময়ে প্রেক্ষাগৃহে লোক যে হবে না সেটা আমিও জানতাম, প্রযোজকও জানতেন। প্রযোজকেরা অনেক লগ্নি হয়ে গিয়েছিল বলে উনি রিলিজ পিছোতে পারেননি। তা সত্ত্বেও ওঁর কোনও ক্ষোভ নেই, আমারও নেই। আমাদের মনে হয়েছে, সেই সময়ে প্রতিবাদ অনেক জরুরি ছিল। আর ‘পদাতিক’ ছবিটাও তো একটা প্রতিবাদ। তাই ঠিকই আছে। অন্যদিকে ‘টেক্কা’-র ক্ষেত্রে দৃশ্যটা একটু পাল্টেছে। যেহেতু আরও বেশকিছু দিন পরে আসছে এই ছবিটা। সংঘাতের জায়গা থেকে নেগোসিয়েশন টেবিল অবধি এসেছে ব্যাপারটা। বেশ কয়েকটা অ্যারেস্ট হয়েছে এর মধ্যে। বলা যায়, ন্যায় বিচারের দিকে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। হোপফুলি, অনেক মানুষের যে মনখারাপ ছিল, তার কিছু শতাংশ মানুষের মন একটু ভালো হয়েছে। কিন্তু িদনের শেষে উৎসব, পুজো বা সিনেমা যা-ই হোক, সেটা খুব স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। সেখানে মন ভালো হলে সবই হবে। যার মন ভালো, সে সবেতে অংশগ্রহণ করবে। যার মন ভালো নয়, সে কিছুতে অংশগ্রহণ করবে না। তাই পুরোটা দর্শকের উপরে।
পুজোর ছবি আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় অনেকের কাছেই সমার্থক। শুরুতে ‘অটোগ্রাফ’ এসেছিল পুজোর সময়, তার তেরো-চোদ্দো বছর অতিক্রান্ত। এখন আপনার ‘টেক্কা’ আসছে। এবারে কি আগের মতো আশাবাদী?
সৃজিত: যদি ছবির মানের দিক থেকে বলি, ‘টেক্কা’ নিয়ে নিশ্চয়ই আশাবাদী। ইন্টারেস্টিংলি তেরো বছরে আমার দশটা পুজোয় ছবি রিলিজ হয়েছে। এই দশটা ছবিই বিভিন্ন বছরে সর্বোচ্চ স্থান লাভ করে ব্যবসার নিরিখে এবং সম্মানের নিরিখে। এই পুজোয় কী হবে, আমরা জানি না যেটা বললাম। ছবির গুণগত মানের দিক থেকে আমি অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী ‘টেক্কা’ নিয়ে।
এবারে পুজোয় বাংলা ছবির সংখ্যা ‘টেক্কা’ নিয়ে মাত্র তিনটে। আর ‘জোকার : ফলি আ ডু’ আসছে, রয়েছে রাজকুমার রাও-তৃপ্তি দিমরির ‘ভিকি বিদ্যা কা উয়ো ওয়ালা ভিডিও’ আর আলিয়া ভাটের ‘জিগরা’। সেখানে বাংলা ছবির লড়াই হিন্দি এবং ইংরেজি ছবির সঙ্গেও।
সৃজিত: পুজোর সময় হিন্দি বা ইংরেজি ছবি যত বড় ক্যানভাসেরই হোক না কেন, বাঙালি খুব একটা দেখে না। পুজোর সময় ট্র্যাডিশনালি বাংলা ছবিরই রমরমা থাকে। শেষ চোদ্দো বছরে তো আমি তাই দেখেছি। তবে এটাও ঠিক, যে সময়ে ‘পদাতিক’, ‘বাবলি’ মুক্তি পেয়েছিল, সেই সময়ে ‘স্ত্রী টু’-ও মুক্তি পেয়েছিল। সেই সময় লোকে ‘স্ত্রী টু’-ই দেখেছিল। তো যে বাঙালি মনখারাপের জন্য ‘পদাতিক’ বা ‘বাবলি’ দেখেনি, সেই বাঙালির একাংশ ‘স্ত্রী টু’-কে ২২ কোটি টাকার ব্যবসাও করিয়েছে। এই প্রশ্নটাও মাথায় থেকে যায়।
‘টেক্কা’-র মতো ৪৮ ঘণ্টার হোস্টেজ ড্রামার গল্পে চাকরি প্রার্থীদের সমস্যাও উঠে আসবে?
সৃজিত: আমি মানুষকে রুপোলি পর্দায় চোখ রাখতে বলব। বলা যেতে পারে এটা অ্যান্টি এস্টাবলিশমেন্ট ফিল্ম।
এই প্রথমবার দেবের প্রোডাকশনে কাজ করলেন পরিচালক হিসাবে। দেব, রুক্মিণী, স্বস্তিকা সকলকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
সৃজিত: দেবের সঙ্গে আমি ‘জুলফিকার’-এ আগে কাজ করেছিলাম, যেখানে ও অভিনেতা হিসাবে ছিল। সেখান থেকে বলব, দেব অভিনেতা হিসাবে অসম্ভব ইভলভ করেছে, ম্যাচিওর করেছে। সেই সময় ওর সঙ্গে খুব একটা আলোচনার সুযোগ হত না, এখন ওর সঙ্গে একটা চরিত্র নিয়ে আলোচনা করতে পারি। বেশ বড় একটা বিবর্তন হয়েছে, বলতে পারি। প্রযোজক হিসাবে দেব দুর্দান্ত। আমার মনে হয়, ওয়ান অফ দ্য বেস্ট প্রোডিউসার্স আই হ্যাভ এভার ওয়ার্কড উইথ, খুবই ভালো।
এক সেট-এ রুক্মিণী আর স্বস্তিকাকে সামলাতে কতটা হ্যাপা পোয়াতে হয়েছে?
সৃজিত: একদমই হয়নি। দুজনেই অসম্ভব পেশাদার। প্রোডাকশন ফ্রেন্ডলি অভিনেত্রী দুজনেই। দুজনের মধ্যে দারুণ একটা ক্যামরাদারি ছিল। দুজন নায়িকা বলে যে প্রচণ্ড রেষারেষি হবে, তেমন কিছুই ছিল না। দুজনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং স্নেহের জায়গা আছে। কোনও অসুবিধাই হয়নি।
‘শাহজাহান রিজেন্সি’-র প্রায় পাঁচ বছর পরে স্বস্তিকাকে এই ‘টেক্কা’-য় নিলেন। বড় লম্বা বিরতি। প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
সৃজিত: আগেও যেটা বলেছি, কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই আলাদা রেখেছি এবং রাখি। আমার যখনই প্রেম হয়েছে বা সম্পর্ক হয়েছে, সবসময় সেটা কাজের বাইরে রাখি। ডিসক্লেমার দিয়ে রাখি যে, এটার সঙ্গে কিন্তু কাজের যোগাযোগ নেই আর থাকবেও না। ইনফ্যাক্ট ‘রাজকাহিনি’-র সময় আমার স্বস্তিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, তখন ‘রাজকাহিনি’-তে ওকে কাস্ট করিনি বলে, সেই নিয়ে অসম্ভব অশান্তিও হয়েছিল। তাই প্রাক্তনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আলাদা কিছু নয়। কারণ, আমি ওইভাবে দেখি না বিষয়টা। কাজ সাধনার জায়গা, সম্পর্ক তার জায়গায়। সবার সঙ্গেই আমার কাজের সম্পর্ক খুব স্বতন্ত্র।
আপনি কড়া টাস্ক মাস্টার। সেখানে দেব কি সেট-এ আপনার বকুনি খেয়েছেন? তাঁর প্লাস পয়েন্ট, মাইনাস পয়েন্ট সবটা মিলিয়েই তো এখনকার অভিনেতা।
সৃজিত: দেব শুধু যে বকুনি খায়নি তা নয়, আমি এবার দেবকে পেয়ে আলোচনা করতে পেরেছি। নরমালি আমি কিছু অভিনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আরাম পাই। তার ফলে চিত্রনাট্যে অনেক মাত্রা যোগ করা যায়। দেবের সঙ্গে সেই আলোচনা করার সুখ পেয়েছি। অনেক অভিনেতার সঙ্গে এমন হয়, তা নয়, কিন্তু দেবের সঙ্গে হয়েছে। ইকলাখের চরিত্রে দেব একদম খাপে খাপ হয়েছে। ইনটেন্সলি স্যাটিসফাইং এক্সপিরিয়েন্স বলব (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.