'শেকড়'-এর সেটে এক ফ্রেমে তিন রাজনীতিবিদ ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ ও নারায়ণ গোস্বামী। (নিজস্ব চিত্র)
কৃষ্ণকুমার দাস, বোলপুর: রক্তদান শিবিরের মঞ্চে তখন এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী সিনেমার ডায়লগ বলছেন, সঙ্গে সঙ্গে পর পর হাততালি পড়ছে। ঠিক সেই সময় একরাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন সাজিরহাটের দাপুটে নেতা গোপাল ঘোষ। সঙ্গে শাগরেদ ‘ভাইটু’। অভিনেত্রীর হাসি উপেক্ষা করেই জনতাকে হাত নেড়ে গিয়ে মঞ্চে বসলেন। পাশে প্রধান অতিথি তনিমা ঘোষ। কী একটা কথা হল, দুজনের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে মাইকে গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পেলাম, ‘কাট-কাট’। চমকে ওঠার পরবর্তী তিন সেকেন্ডের মধ্যেই মাইকে উচ্ছ্বাস এক্সেলেন্ট, শট ইজ সুপার্ব।
বিশাল ডিজিটাল জোড়া মনিটরের পিছনে মাইক হাতে বসে সন্তুষ্টির আবেগে পরিতৃপ্তির গলায় শুক্রবার সকালে ‘এক্সেলেন্ট’ বলা মানুষটির নাম পরিচালক, অভিনেতা ও নাট্যকার ব্রাত্য বসু। আর গোপাল ঘোষ চরিত্রে এক্সেলেন্ট শট দেওয়া অভিনেতার নাম কুণাল ঘোষ, প্রাক্তন সাংসদ তথা রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। সঙ্গে অনুগামী শাগরেদ চরিত্রে অশোকনগরের বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদ সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। অরিন্দম শীলের ‘কপূর’-এর পর এটা কুণালের দ্বিতীয় সিনেমা। আর নারায়ণের প্রথম। কিন্তু কেন রক্তদানের মঞ্চে সুন্দরী জনপ্রিয় অভিনেত্রী হাসিমাখা অভ্যর্থনাকেও বিরক্তিভরে উপেক্ষা করলেন দাপুটে নেতা কুণাল, থুড়ি গোপাল ঘোষ? কেন, বারে বারে তাঁকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছিলেন নারায়ণ গোস্বামী ওরফে ভাইটু? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে পরিচালক ব্রাত্য বসুর বীরভূমের নানা গ্রামে শুটিং চলতে থাকা নতুন পূর্ণ দৈর্ঘ্যের বাংলা চলচিত্র ‘শেকড়’ দেখতে অবশ্যই সিনেমাহলে পৌঁছলে। রক্তদান শিবিরের এই সেটে নাটকীয়তা যা-ই থাক, অভিনেতাদের পারদর্শিতায় শট শেষে চওড়া হাসি পরিচালকের মুখে।
রক্তদান শিবিরের সেট বানিয়ে রামী চণ্ডীদাসের প্রেমের লীলাভূমি নানুরের বাগপাড়ায় শুটিং করছেন ব্রাত্য। রক্তদান শিবিরে যেমন অ্যাম্বুল্যান্স, ডাক্তার ও রক্তদাতাদের টিফিনের ব্যাবস্থা থাকে, তেমনই সব রয়েছে। ইদানীং এই সব শিবিরে জৌলুস বৃদ্ধি করতে যেমন সিনেমার অভিনেত্রী আনা হয়, এখানেও তাই হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সিনেমার অবলম্বন বিভূতিভূষণের দুটি গল্প হলেও সেখানেই ২০২৫ সালের বাংলার গ্রামের কাহিনি ও পরিমণ্ডল তুলে ধরা হয়েছে। বাংলার রান্নার উদাহরণ টেনে ব্রাত্য বলছিলেন, “রেসিপি পুরানো, ভিয়েনটা নতুন।” আর বাংলার অতীত ঐতিহ্যকে ফিরে দেখার টানেই যে চিত্রনাট্য, তাই সিনেমার নাম দিয়েছেন ‘শেকড়’। বলিউডের দাপুটে অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাস, বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, ঋদ্ধি সেন, অম্বরীশ, লোকনাথ, অঙ্গনার মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করছেন কুণাল-নারায়ণ। কিন্তু কেন কুণাল বা নারায়ণকে নিলেন ব্রাত্য? শুটিংয়ের ফাঁকে ক্যামেরার মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে খুব সিরিয়াস গলায় কুণাল নিয়ে ব্রাত্যর স্বীকারোক্তি। বললেন, “কপূর সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করে দেখেছি, কুণাল অভিনয়ের সময় চরিত্রের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। ঘটনাক্রমে সেই সময় আমি ‘শেকড়’-এর স্ক্রিপ্ট লিখছিলাম। আর এই গোপাল ঘোষ চরিত্র লেখার সময়, বারে বারে কুণালের মুখ ভেসে উঠেছে।”
বলার অপেক্ষা রাখে না দিনভর শুটিংয়ে এদিন বারে বারে গোপাল ঘোষের চরিত্রে ‘বন্ধু কুণাল’-এর অভিনয়ের তারিফ করেছেন পরিচালক। আর চরিত্রের প্রয়োজনে লুক অনেকটা বদলে ফেলা কুণাল ওরফে গোপাল ঘোষের সরস মন্তব্য, “সাজিরহাটে আমার কথা ছাড়া একটা গাছের পাতা যেমন নড়ে না। তেমনই আমিও ব্রাত্য বসুর কথা ছাড়া একচুল নড়ছি না।” মঞ্চের দাপুটে অভিনেতা নারায়ণও যে অভিনয়ে ‘ব্রিলিয়ান্ট পারফরম্যান্স’ করছেন তা সন্ধ্যায় প্রকাশ্যেই বললেন ব্রাত্য। তবে পশ্চিমবঙ্গের এই তিন পরিচিত ও জনপ্রিয় রাজনীতিকের সঙ্গে অভিনয় করতে এসে মুগ্ধ ওপার বাংলার চঞ্চল চৌধুরী। দুই বাংলার প্রাণের উপলব্ধির প্রসঙ্গ টেনে এগিয়ে এসে বললেন, “আমি ব্রাত্যর ভক্ত ছিলাম আগেই, কিন্তু দিনভর নানা দৃশ্যে অভিনয় শেষে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এঁরা এই ফিল্ডেও যথেষ্ট দক্ষ।” ছবি মুক্তির সম্ভাবনা আগামী মার্চে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.