প্রেমের গসিপের কোনও ভালো বা খারাপ দিক পাইনি, পুজোর ছবির সাফল্যের পর বললেন ইধিকা পাল। আড্ডায় বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
এই মুহূর্তে আপনি টলিউডের অন্যতম মুখ। সাফল্য কেমন লাগছে?
– খুবই ভালো লাগছে। সবটাই ভীষণই স্বপ্নের মতো আমার কাছে। আর এই বছরই পুজোয় আমার প্রথম রিলিজ। দর্শকদের এত ভালোবাসা পেয়ে আমি আপ্লুত।
একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল এবার পুজোয় গোটা কলকাতা জুড়ে আপনার হোর্ডিং আবির এবং দেবের সঙ্গে। এদিকে বক্স অফিসে আবার দুজনই প্রতিপক্ষ ছিল!
– হ্যাঁ, আবিরদার (চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে বিজ্ঞাপন করেছি। আশা করি কখনও ছবিও করতে পারব (হাসি)।
আপনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সাফল্য পেয়েছেন। সাফল্যকে ইধিকা কীভাবে দেখেন?
– আমি যখন কাজ শুরু করেছিলাম আমি কতটা সাফল্য পাব, বা কীভাবে হবে, আদৌ কিছু হবে কি না– অত কিছু না ভেবে একটা জিনিসই চেষ্টা করেছিলাম, আমি যেন কাজের প্রতি হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিতে পারি। আমি যখনই কোনও কাজ করি এটাই মাথায় রাখি। বাকিটা মনে হয় দর্শক নিশ্চয়ই আমার পরিশ্রমটা দেখতে পায়। সাফল্য তো আমার হাতে নেই।
আপনি যখন কলেজে অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন তখনই কি ঠিক করেছিলেন অভিনয় করবেন?
– একেবারেই না। ছোটবেলা থেকে কোনওদিনই ভাবিনি যে অভিনেত্রী হব, বা হতে পারব। আমি একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। আর মধ্যবিত্ত পরিবারে এটা খুব বড় একটা স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখার আগেই বলে দেওয়া হয়– ধুর, এটা কোনওদিন সত্যি হবে না। তো এই গণ্ডিটাই কেউ কোনওদিন পেরতে দেয়নি। তার আগেই সকলে বারণ করেছে।
কলেজে পড়ার সময় কী ভেবেছিলেন কেরিয়ার নিয়ে?
– ক্লাস টেন, ইলেভেনে ভাবতাম পাইলট হব। তারপর অন্য স্ট্রিমে চলে যাওয়ার পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এটা জানতাম, কিন্তু কী করব সে সব আলাদা করে ভাবিনি।
আপনার বাবা তো টেকনিশিয়ান ছিলেন। তিনি তো জানতেন কীভাবে কাজ হয়। আপনার প্রথম ধারাবাহিক ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র আগে সাহায্য করেননি?
– হ্যাঁ, আমার বাবা টেকনিশিয়ানের কাজ করতেন। আর্ট ডিপার্টমেন্টে ছিলেন। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ উল্টো ছিলেন। বাবা কখনও চাননি আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আসি। আমি যখন প্রথম অভিনয়ের ইচ্ছে প্রকাশ করি, বাবা সবচেয়ে বেশি বারণ করেছিলেন। বাবা খালি বলতেন খুব শক্ত কাজ, বাইরে থেকে যতটা সহজ মনে হয় ততটা সহজ নয়। বাবা বলতেন, ‘তুই জানিস না এটার ব্যাপারে, তুই পারবি না’।
তাহলে কীভাবে সম্ভব হল আপনার অভিনয় জীবন?
– যখন প্রথম অভিনয়ের কথা ভাবি, তখন মনে হল অডিশন দিয়ে দেখি। কয়েকটা অডিশন দিলে বুঝতে পারব যে আদৌ আমি পারব কি না। অডিশন দেব শুনে, বাড়িতে খুব বকাও খেয়েছি। এবং বাবা কিন্তু কোনওভাবেই সাহায্য করেননি। তো আমি ওই ফেসবুক দেখে দেখে একটা দুটো করে অডিশন দিতাম। তাতে কিছু যোগাযোগ তৈরি হয়। ২০১৮ থেকে অডিশন দিচ্ছি। ২০১৯-এ আমার কাছে ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’-র জন্য ফোন এসেছিল। আমার প্রথম ধারাবাহিক এবং প্রথম ছবি সুরিন্দর ফিল্মস-এর সঙ্গে।তারপর তো পরপর ধারাবাহিক করেছি।
ইন্টারেস্টিং, আপনি কলকাতার অভিনেতা হয়েও, প্রথম বড় পর্দায় সুযোগ পেলেন বাংলাদেশের ছবিতে, শাকিব খানের বিপরীতে। সেই সময় ওঁরা নতুন মুখ খুঁজছিলেন, বাংলাদেশের নায়িকাদের হয় ডেট ছিল না বা তাঁরা অন্য কারণে অ্যাভেলেবল ছিলেন না। ‘প্রিয়তমা’-তে হ্যাঁ বলার আগে ডাউট হয়নি?
– তখন আমি ছবি করব ভাবছিলাম। হঠাৎ করেই অফারটা আসে। শাকিব খানের নামটা শুনলেও, ওঁর স্টারডম সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। আমি তো ফেক কল ভেবেছিলাম। পরে বুঝতে পারি যে রিয়্যাল অফার। আর উনি কেন নতুন মুখ নিতে চান, সেই সব নিয়ে আমি এত কিছু ভাবিওনি। আমি সুযোগ পাচ্ছি সেটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার ছিল। আর ওখানে কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মেয়ের মতো ভালোবাসা পেয়েছি।
এখন এই সাফল্যের পর নিশ্চয়ই বাড়িতে সকলে খুশি?
– এখন তো সবাই খুবই খুশি। আমার মনে হয় সবার আগে আমি আমার বাবাকে প্রমাণ দিতে পেরেছি, যে হ্যাঁ আমি পেরেছি। তবে বাবার অভিমান টিভিতে সিরিয়াল করার সময়েই অনেকটা নরম হয়ে এসেছিল।
দেবের সঙ্গে পরপর দুটো ছবি হিট। আপনি কি দেবের লাকি চার্ম, নাকি উল্টোটা?
– এই রে, এটা একটা কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল! তবে আমার মনে হয় আমরা যে দুটো স্ক্রিপ্টে কাজ করেছি দুটো স্ক্রিপ্ট খুব ভালো ছিল।দুটো ছবির গল্প আর প্রেজেনটেশন দর্শকের ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় ওটাই লাকি চার্ম।
‘খাদান’ আর ‘রঘু ডাকাত’– দুটো ছবিতে দেবের সঙ্গে কাজ করার পর আপনার ব্যক্তিগত কেমন অভিজ্ঞতা?
– দেবদা তো ‘খাদান’-এ প্রচুর সিন আছে যেখানে পরিচালনাও করেছে। অনেক সিন ফ্লোরে বসে আমাকে বুঝিয়েছে। আমি দেবদাকে তিনরকমভাবেই পেয়েছি– অভিনেতা, প্রযোজক এবং পরিচালক হিসেবে। প্রযোজক হিসেবে বলব শিল্পীদের কমফর্টেবল ফিল করায়। অভিনেতা হিসেবেও কখনও ফ্লোরে ওই স্টারডমটা দেখায়নি। তবে ডিরেক্টর হিসেবে একটু স্ট্রিক্ট।
আপনার আর দেবের প্রেমের গুঞ্জনও কিন্তু প্রবল!
– না, না, এইসব শুধুমাত্র গুঞ্জন– এর মধ্যে কোনও সত্যতা নেই। ভবিষ্যতে আমার এখন অনেক কাজ করার আছে। আর আমি সেটাতেই মন দিতে চাই।
সাফল্যের সঙ্গে কি গসিপ এবং ট্রোল সেটা বাধ্যতামূলক?
– আমার মনে হয় চলে আসে। জীবনে সব ভালো হবে, এমন তো আর হয় না। তো এগুলো আমি সেভাবেই নিই। আমাকে এই গুঞ্জন সেভাবে ইমপ্যাক্ট করেনি। এই প্রেমের গসিপের কোনও খারাপ দিকও আমি পাইনি। ভালো দিকও পাইনি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে এখন শুধু কাজ নিয়েই ফোকাস করতে চাই।
ইধিকা কি সিঙ্গল?
– ইধিকা একদমই সিঙ্গল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.