‘চুরি’-র মিথ্যে অপবাদে অপমানিত হয়ে কিশোরের আত্মহননের সাম্প্রতিক ঘটনা দেখাল, মানবিকতা রক্ষায় আমরা এখনও কতটা পিছিয়ে।
অপবাদের ক্ষত যে কত গভীর হতে পারে, সেই উপলব্ধি আমাদের নতুন নয়। তবুও সমাজ বারবার একই ভুল করে ফেলে। পাঁশকুড়ার যে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াটি একটি চিপ্সের (‘কুরকুরে’) প্যাকেট চুরির অপবাদ মানতে না পেরে আত্মঘাতী হল, সে সমাজকে কত
বড় একটি শিক্ষা দিয়ে গেল তার পরিমাপ করতে বসলে হদিশ মিলবে না।
এই ঘটনা যে প্রথম ঘটল তা নয়। নাট্যকারের স্ত্রীর গলার সোনার হার ছিনতাইয়ের অপবাদ সহ্য করতে না পেরে চলন্ত ট্রেনের সামনে যুবকের ঝঁাপ দেওয়ার ঘটনা একসময় বাংলাকে বিহ্বল করেছিল। প্রাণ দিয়েও কী সেই যুবক সমাজকে সচেতন করে যেতে পেরেছিলেন? নিশ্চয়ই নয়। পঁাশকুড়ার গোঁসাইবেড়ের ১২ বছরের কিশোর কৃষ্ণেন্দু ফের চোখে অাঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অপবাদ দেওয়ার মতো নিষ্ঠুরতা থেকে তার মতো একটি কোমলমতিকেও সমাজ রেহাই দেয় না।
সংবাদমাধ্যমে সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে হইচই চলছে। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে– বন্ধ দোকানের বাইরে রাস্তায় পড়ে থাকা নামমাত্র মূলে্যর চিপ্সের প্যাকেট কিশোরটি কুড়িয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এই সত্যটি যখন কিশোরটি বলেছিল তখন সমাজের স্বঘোষিত অভিভাবকরা তা বিশ্বাস করতে চায়নি। কিশোরটি তার জীবন দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করে গেল। কিংবা এভাবেও বলা যায়, নিষ্ঠুর ও অসংবেদনশীল সমাজের কাছে সতি্যটা প্রমাণ করতে কিশোরটিকে প্রাণ দিতে হল। তার কঁাচা হাতে লেখা দু’-লাইনের মর্মস্পর্শী সুইসাইড নোটটি সামনে এসেছে (‘সংবাদ প্রতিদিন’ এই নোটের সত্যতা যাচাই করেনি)। চুরির অপবাদ কিশোরটির কোমল মনকে কীভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে তার সাক্ষ্য বহন করছে এই নোটটি।
ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। এই উত্তেজনা সাময়িক। কয়েক দিনের মধে্যই হয়তো সামাজিক নিষ্ঠুরতার অারও কোনও ঘটনা সামনে অাসবে। কিশোরটির প্রাণ দেওয়ার ঘটনা থেকে কোনও শিক্ষাই মিলবে না অামাদের। এই ধরনের নির্মম ঘটনা চিরতরে বন্ধ করতে পারে একমাত্র সচেতনতা। প্রমাণ ছাড়া কারও গায়ে ‘চোর’-এর তকমা লাগানো যে চুরি করার চেয়েও গর্হিত অপরাধ, সেই চেতনা সবার অাগে দরকার। শিশু ও কিশোরদের প্রতি সমাজের অাচরণ কী হবে তা শেখাও সর্বাগ্রে জরুরি। এ ব্যাপারে শুধু অাইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়।
দেশ এগিয়ে চলেছে বলে অামাদের গর্বের শেষ নেই, কিন্তু এই মৌলিক মানবিক বোধগুলিই অামাদের মধে্য গড়ে উঠছে না। সমাজে বেড়ে চলা হিংসার অাবহে অামরা মানবিক বৃত্তিগুলি থেকে যেন অারও বেশি করে বিচু্যত হয়ে যাচ্ছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.