Advertisement
Advertisement

Breaking News

Silence

কোলাহলহীন! দুর্ঘটনাগ্রস্ত ড্রিমলাইনারের দুই পাইলটের কথাতেও স্তব্ধতা

‘সুইচ অফ’ শব্দটি টেনে নিয়ে যায় সম্ভাবনাহীন ঘোর তমসার স্রোতে।

Editorial on silence of death
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:July 14, 2025 9:42 pm
  • Updated:July 14, 2025 9:42 pm   

‘সুইচ অফ’ শব্দটি টেনে নিয়ে যায় সম্ভাবনাহীন ঘোর তমসার স্রোতে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ড্রিমলাইনারের দু’জন পাইলটের কথাতেও স্তব্ধতার পূর্বাভাস।

Advertisement

রমেশ সিপ্পি-র ‘শোলে’ প্রথম দিকে আদৌ সিনেমা হলে আলোড়ন ফেলতে পারেনি। এত আশা ছিল যে-সিনেমা নিয়ে, তা এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে? জবরদস্ত স্টার-সমারোহ। কী বঁাধুনি চিত্রনাট্যের! প্রতিহিংসা ও প্রেম, বন্ধুত্ব ও আত্মত্যাগ, মৃত্যু ও রোমান্স– তুরীয় ছন্দে নেচে চলেছে ফ্রেম থেকে ফ্রেমে। তবু কেন দর্শকদের মন ভরছে না? কোথায় ফাঁক? প্রথম সপ্তাহের মেয়াদ ফুরবে যখন, তখন এ নিয়ে জোর আলোচনা বসল। সেখানে অমিতাভ বচ্চন ছিলেন, রমেশ সিপ্পি ছিলেন। ছিলেন আরও অনেকে।

প্রচুর ভেবেটেবে যা কম-বেশি প্রত্যেকেরই মনে হল, ঠাকুরসাবের বিধবা মেয়েটির ট্র্যাকটি হয়তো তৎকালীন ভারতীয় দর্শকদের মনে ধরেনি। বিধবার জীবনে প্রেম, বিধবার সাদা শাড়ি আবার রঙিন আনন্দে ভরে ওঠা– সংবেদনশীল ও সংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয় সমাজ হয়তো এতখানি অগ্রগতির পক্ষে নয়। ঠিক হল, রাতারাতি শুটিং করে কিছু দৃশ্যের অদলবদল ঘটিয়ে, নিখুঁতভাবে এডিট করে, ‘শোলে’-র আর একটি ‘ভার্সন’ বাজারে ছাড়া হবে। তাহলে যদি দর্শকদের মন ভেজে!

সেদিনের আলোচনা স্মরণ করতে গিয়ে অমিতাভ বচ্চন এই জীবনসায়াহ্নে এসে বলেছেন, সবাই যখন রি-শুটের পক্ষে, তখন রমেশ সিপ্পি নম্রকণ্ঠে বললেন, আরও না হয় দুটো দিন দেখা যাক। মানে, সপ্তাহ শেষ হচ্ছে। শনি ও রবি উইক-এন্ড। এরপরও যদি সিনেমা না চলে, তাহলে ‘প্ল্যান বি’ অনুসরণ করতে হবে। ওই দু’দিনের প্রতীক্ষাই ভারতীয় সিনেমার মানচিত্র পাল্টে দেয়। ‘শোলে’ সাব্যস্ত হয় দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা সিনেমা বলে। বিধবার যে-ট্র্যাক মানুষের মনে ধরেনি বলে শঙ্কা হয়েছিল অভিনেতা, নির্মাতাদের– দেখা গেল, সে ট্র্যাকের আবেদন চিরকালীন।

দর্শকের মুখে-মুখে ফিরতে থাকল ‘শোলে’-র শেষ দৃশ্য, যেখানে জয়া ভাদুড়ী অভিনীত বিধবা চরিত্রটি বারান্দায় ঝোলানো আলো নিভিয়ে দিয়ে দোরে খিল দেয়। আলো নেভানোর এই প্রতীকী দৃশ্যে যে-বেদনা রয়েছে, তা মানুষকে আপ্লুত করে। যে-স্বপ্ন দেখেছিল তরুণীটি জয়কে ঘিরে, জয়ের মৃত্যুর সঙ্গে-সঙ্গে সেই বাসনারও অপমৃত্যু হল, হায়! কী মর্মান্তিক এই সুইচ অফ! শলাকার মতো বেঁধে যেন এই নিদারুণ নির্বাপণ-দৃশ্য।

‘সুইচ অন’ শব্দটি যদি জীবনের প্রেক্ষিতে আলো ও সমন্বয়ের বার্তা বয়ে আনে, তাহলে ‘সুইচ অফ’ শব্দটি আমাদের টেনে নিয়ে যায় সম্ভাবনাহীন ঘোর তমসার স্রোতে। মোবাইলে ফোনে কথা বলতে গিয়ে আমরা আকছার শুনি, ফোন সুইচ্‌ড অফ। মানে, আর যোগাযোগ করা যাবে না। বন্ধ সংযোগের রাস্তা। জীবনের কানাগলিকে অপরিসীম দীর্ঘ বলে মনে হয় তখন। কিছু দিন আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়া ড্রিমলাইনারের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের পরে জানা গিয়েছে দু’জন পাইলটের কথোপকথন।

কম্যান্ডার পাইলট জানতে চাইছেন কো-পাইলটের কাছে– কেন জ্বালানি সুইচ অফ করে দিলে? সেদিনের এই ‘সুইচ অফ’, প্রতীকী তাৎপর্য পেরিয়ে, সমস্ত যাত্রীর জীবনরেখায় নেমে এসেছিল মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে। মৃত্যুর নিথর স্তব্ধতার সামনে যে সব কোলাহলই মিছে!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ